
জুলাই-আগস্টে দাফন করা অজ্ঞাত লাশের পরিচয় ও মৃত্যুর কারণ নিশ্চিতে কবর থেকে লাশ ওঠানো হচ্ছে। রাজধানীর রায়েরবাজার কবরস্থান থেকে গতকাল এ কার্যক্রম শুরুর কথা থাকলেও কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কারণে কাল থেকে উত্তোলন কার্যক্রম শুরু হবে। গতকাল বিকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার ইবনে মিজান।
তিনি বলেন, সোমবার (গতকাল) বিকাল ৩টায় এ কার্যক্রম শুরুর বিষয়টি আমাদের জানানো হয়েছিল। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে সিআইডির ফরেনসিক টিমের নেতৃত্বে এবং সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ দলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ার কথা ছিল। আজ বিকালে সিআইডি থেকে তারিখ পরিবর্তনের কথা জানানো হয়। সম্ভবত বুধবার থেকে শুরু হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্টে রায়েরবাজার গণকবরে দাফন করা অজ্ঞাতনামা লাশগুলো আদালতের অনুমতিতে উত্তোলন করা হবে। প্রতিটি লাশের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে সংরক্ষণ করা হবে। ভবিষ্যতে যেন পরিচয় শনাক্ত এবং মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নির্ধারণ করা যায়।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ২ আগস্ট রায়েরবাজারে গণকবর পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের জানান, এখানে ১০০ জনের ওপরে দাফন করা হয়েছে। তাদের শনাক্ত করা যায়নি। খুব তাড়াতাড়ি শনাক্ত করার ব্যবস্থা করব। এতদিন অনেকের আত্মীয়-স্বজন কবর থেকে লাশ উত্তোলনে রাজি হননি। এখন হয়েছেন। ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে লাশগুলো শনাক্ত করব। কেউ এখান থেকে লাশ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যেতে চাইলে তাও অ্যালাউ করব। এখানে কতজনের কবর আছে- জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, এখানে ১১৪টি কবর আছে। এ লাশগুলোর পোস্টমর্টেম হয়নি। এখন ডিএনএ টেস্টের পাশাপাশি পোস্টমর্টেমও করা হবে।
এদিকে জুলাই আন্দোলনে নিহত ১১৪ জনের পরিচয় শনাক্তের জন্য লাশ উত্তোলনের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। মোহাম্মদপুর থানার উপপরিদর্শক মো. মাহিদুল ইসলামের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন। সংশ্লিষ্ট আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর মোহাম্মদ শামসুদ্দোহা সুমন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আবেদনে উল্লেখ করা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় নানান বয়সী নারী-পুরুষ শাহাদাতবরণ করেন। যাদের মধ্যে ১১৪ জন অজ্ঞাতনামা। এসব শহীদকে পরিচয় নিশ্চিত না হয়েই রায়েরবাজার কররস্থানে দাফন করা হয়েছে। ভবিষ্যতে আইনি পদক্ষেপ এবং শহীদদের লাশ শনাক্তকরণের জন্য যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কবর থেকে উত্তোলন করা প্রয়োজন। এ ছাড়া পোস্টমর্টেম রিপোর্ট প্রস্তুত, লাশের ডিএনএ সংগ্রহের মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিত করা প্রয়োজন। বিচারক নথি পর্যালোচনা করে আবেদনটি মঞ্জুর করেন। একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ঢাকার জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশ দেন।