
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটার তালিকা হালনাগাদ থেকে সরঞ্জাম কেনাকাটা, সব প্রস্তুতি আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ করতে চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি) বলে জানিয়েছেন ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ। তিনি বলেন, আমাদের সব প্রস্তুতি জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। আমাদেরকেও গুছানোর সময় দিতে হবে। যেগুলো একটু একটু হচ্ছে জানাচ্ছি, যেগুলো চলমান জানাচ্ছি। ভবিষ্যতে কী আসবে জানাবো। তিনি বলেন, আনুমানিক পৌনে ১৩ কোটি ভোটার হতে পারে। তিনটি আইন-বিধি সংক্রান্ত তিনটি আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ উইংয়ে ভেটিংয়ের অপেক্ষায় রয়েছে। আর প্রবাসী ভোটারদের পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোটাধিকার প্রয়োগের লক্ষ্যে প্রকল্প অনুমোদনের প্রক্রিয়া চলছে বলে তিনি জানান।
আগারগাঁওস্থ নির্বাচন ভবনে নিজ দফতরে গতকাল জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতির বিষয়ে গণমাধ্যমকে জানান তিনি। উল্লেখ্য, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কারসহ সব প্রস্তুতি শেষে আগামী রোজার আগে ফেব্রুয়ারির প্রথমভাগে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়ে রেখেছে। তবে বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল এ সময়ের মধ্যে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা ও তফসিলের দাবি জানিয়ে আসছে।
ইসি সচিব আখতার আহমদে গণমাধ্যমকে বলেন, তফসিল ঘোষণার ব্যাপারটা একান্তভাবে নির্বাচন কমিশনের ওপর। যখনই ইসি সিদ্ধান্ত নেবে আমরা জানাবো। তিনি বলেন, আজ আমি বেশকিছু টাইমলাইন ধরে কথা বলেছি। টাইমলাইন, কর্মপরিকল্পনা, অ্যাকশন প্লান বলেন- কাজের এ ব্যাপ্তিটা আসল। আমি কোনো সময়ের মধ্যে ভোটের প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছি, কতটুকু এগোচ্ছি। আমার মনে হয়, এ পর্যন্ত সময়সীমা বলেছি আমাদের বাস্তবায়নের কথা বলেছি।
অক্টোবরের মধ্যে সবধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে কি না-দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ইসি সচিব জানান, ‘ইসির কিছু কাজ বাকি রাখতে হবে’- যেটা অক্টোবরের পরে বলা যাবে। কমিশনের কর্মপরিকল্পনা ধরে কাজ এগোনোর কথা জানান ইসি সচিব। তিনি জানান, জাতীয় নির্বাচনকে টার্গেট করে সব ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টা যে টাইমলাইন দিয়েছেন সে অনুযায়ী কাজ করছি। আমরা আমাদের প্রস্তুতি জানাচ্ছি। নির্বাচন কমিশন যেসব সিদ্ধান্ত নেয় তা তুলে ধরা হচ্ছে।
ইসি সচিব জানান, গত ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে ৩০টি দল নিরীক্ষা প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। ১৫টি দল সময় বাড়াতে আবেদন করেছে। ৬টি দলের মধ্যে একটি নিবন্ধন পেয়েছে এ বছর। তাই অডিট রিপোর্ট জমা দেয়নি। এ ছাড়াও ৫টি দল অডিট রিপোর্ট জমা ুইসি সচিব বলেন, গত ২ মার্চ একবার হালনাগাদ ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। ১০ আগস্ট বাড়ি বাড়ি গিয়ে হালনাগাদ তালিকা প্রকাশ এবং ভোটের এক মাস আগে সম্পূরক আরেকটি তালিকা প্রকাশ করা হবে। তিনি জানান, ২ মার্চের চূড়ান্ত তালিকায় ১২ কোটি ৩৭ লাখেরও বেশি ভোটার রয়েছে। ১০ আগস্ট বাদ পড়া সাড়ে ৪৪ লাখের মতো ভোটারের খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হবে এবং মৃত ভোটারদের বাদ দেয়া হবে। দাবি আপত্তি নিষ্পত্তি ৩১ আগস্টের মধ্যে চূড়ান্ত হবে। তবে এবার তিনটি তালিকা হচ্ছে। সংশোধিত আইন অনুযায়ী সবর্শেষ ভোটের এক মাস আগে সম্পূরক তালিকা প্রকাশ করা হবে, যেখানে নতুন ভোটাররা যুক্ত হবেন। ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে সব মিলিয়ে হালনাগাদ পৌনে ১৩ কোটি ভোটার হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সচিব জানান, এরই মধ্যে ৩০০ সংসদীয় আসনের সীমানার খসড়া প্রকাশ করা হয়েছে। ১০ আগস্টের মধ্যে দাবি-আপত্তি জানানোর সময় রয়েছে বলে জানান ইসি সচিব। তিনি বলেন, পরবর্তী শুনানি শেষে এক মাসের মধ্যে চূড়ান্ত হবে। আগস্টের মধ্যে শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে। আর পর্যবেক্ষকদের ব্যাপারে এরই মধ্যে আবেদন আহ্বান করা হয়েছে। ১০ আগস্টের মধ্যে আবেদনগুলো পেলে বিধি অনুযায়ী শেষ করা হবে। তিনি বলেন, আগামী বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের সভা রয়েছে। এতে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হবে। রাজনৈতিক দল ও আচরণবিধি চূড়ান্ত করা হবে।
সচিব জানান, আরো তিনটি আইন-বিধিসংক্রান্ত তিনটি আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ উইংয়ে ভেটিংয়ের অপেক্ষায় রয়েছে। নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা সংশোধন, নির্বাচন কর্মকর্তা বিশেষ বিধান সংশোধন ও ইসি সচিবালয় আইন সংশোধন ভেটিং শেষে উপদেষ্টা পরিষদে উপস্থাপন করা হবে। আচরণবিধিতে এআই’র অপব্যবহার রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং কারিগরি ও বিধিতে যুক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
ভোটের জন্য সবধরনের নির্বাচনী সামগ্রী কেনাকাটা ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ করা হবে বলে জানান সচিব। তিনি জানান, এরই মধ্যে আটটি আইটেম দরকার রয়েছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পাওয়া যাবে। ইসির হাতে থাকা স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ব্যবহার উপযোগী ও যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত করা হবে। আর প্রবাসী ভোটারদের পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোটাধিকার প্রয়োগের লক্ষ্যে প্রকল্প অনুমোদনের প্রক্রিয়া চলছে। এর জন্য বছরে প্রায় ৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রাক্কলন করা হয়েছে। তিনি জানান, শিগগির পরিকল্পনা কমিশনের কাছে আনুষ্ঠানিক অনুমোদন পাওয়া যাবে। নিবন্ধনের প্ল্যাটফর্ম তৈরি করার কাজ চলমান রয়েছে।