
রক্তাক্ত গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর। কোটা বাতিলের দাবিতে রাজপথে চলছিল বিক্ষোভ-আন্দোলন। উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পুরো দেশ। শেখ হাসিনার নির্দেশে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নির্মমভাবে গুলি চালায় আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার বুকে। অসংখ্য মানুষ শিকার হয় এই হত্যাকাণ্ডের। কেউ হারিয়েছেন সন্তান, কেউ স্বামী, কেউ ভাই, কেউবা বাবা-মাকে। নারকীয় এ হত্যাকাণ্ড থেকে রেহাই পায়নি শিশু-কিশোররাও।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে বাংলাদেশে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনে জাতিসংঘের এক তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই অভ্যুত্থানের সময় ১৪০০ জনের বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। এ সময় আহত হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। নিহতদের মধ্যে ১২-১৩ শতাংশ ছিল শিশু।
২০২৪ সালের ৬ই আগস্ট সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেছিলেন, জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে মোট ১০৫ জন শিশু মারা গেছে।
১৯শে জুলাই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গুলিতে মারা যায় চার বছরের শিশু আব্দুল আহাদ। সেদিন ঘুম থেকে উঠে বাসার অষ্টমতলার বারান্দায় দাঁড়ায় সে। এ সময় আহাদ দাঁড়িয়ে ছিল তার বাবা-মায়ের মাঝে। হঠাৎ একটি গুলি এসে আহাদের ডান চোখে বিদ্ধ হলে ঢলে পড়ে মেঝেতে। দুই ভাইয়ের মধ্যে আহাদ ছিল ছোট। শহীদ আহাদের বাবা আবুল হাসান মানবজমিনকে বলেন, এই কষ্ট কাউকে বোঝানো যায় না। যারা সন্তান হারিয়েছে তারা বুঝবে এই কষ্টটা। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, গণ-অভ্যুত্থানে ১১ জন নারী শহীদ হয়েছেন। তাদের মধ্যে মেয়েশিশু চারজন। তারা হলেন- রিয়া গোপ (৬), নাঈমা সুলতানা (১৫), রিতা আক্তার (১৭) ও নাফিসা হোসেন মারওয়া (১৭)।
রিয়া গোপ (৬)। ১৯শে জুলাই নারায়ণগঞ্জের নয়ামাটি এলাকায় বাসার ছাদে খেলার সময় মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়েছিল শিশু। পাঁচদিন ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন থেকে মারা যায়। রিয়া গোপের মৃত্যুর প্রায় এক বছর পর পুলিশ বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেছে।
লিডো-এর এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গুলি ও ছররা গুলির কারণে গুরুতর চোখের আঘাত পাওয়া ৫০৬ জনের মধ্যে অন্তত ৬০ জন শিশু ছিল। এদের মধ্যে ৯ বছর বয়সী এক পথশিশু চিরতরে দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছে।
গত বছরের ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পরে উত্তরা পূর্ব থানা-পুলিশের সঙ্গে ছাত্র-জনতার সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় উত্তরার জসীমউদ্দীন সড়কে ছিল জাবির ইব্রাহিম (৬)। বাবা-মায়ের সঙ্গে রাস্তায় একপাশে দাঁড়িয়ে বিজয় মিছিল দেখছিল সে। সেখানেই গুলিবিদ্ধ হয় ছোট্ট জাবির। শহীদ জাবির ইব্রাহিমের মা রোকেয়া বলেন, প্রতিটি সেকেন্ডে ওর স্মৃতি মনে পড়ে। আমি শুধু জাবির ইব্রাহিমের মা নই, প্রতিটি বাচ্চার মা। আমি একজন মা হয়ে প্রতিটি বাচ্চার হত্যার বিচার চাই।
তাহমিদ ভূঁইয়া (১৫)। গত বছরের ১৮ই জুলাই বিকালে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিতে নরসিংদীতে নিহত হন। গুলিতে ঝাঁজরা হয়ে গিয়েছিল তাহমিদের বুক।