Image description

জুলাই সনদ ঘোষণা ও বাস্তবায়নের দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড় টানা দ্বিতীয় দিনের মতো অবরোধ করে রাখেন গণ অভ্যুত্থানে আহত এবং শহীদ পরিবারের সদস্যরা। টানা বৃষ্টির মাঝেও গত বৃহস্পতিবার সারারাত শাহবাগে অবস্থান নিয়ে গতকাল সকাল থেকে তারা অবরোধ অব্যাহত রাখেন। এতে শাহবাগের প্রধান সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েন নগরবাসী। এদিকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে জুলাই যোদ্ধাদের একটি গ্রুপ অবরোধকারীদের রাস্তা থেকে অবরোধ তুলে নিতে বললে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে পুলিশ এসে সবাইকে রাস্তা থেকে সরিয়ে দিয়ে অবরোধ তুলে দেয়। ফলে শাহবাগ দিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

সরজমিন দেখা যায়, জুলাই শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধার ব্যানারে অবস্থান নেয় আন্দোলনকারীরা। ঝুম বৃষ্টির মধ্যেও স্লোগান দিতে দিতে শাহবাগ মোড় অবরুদ্ধ করে রাখেন তারা। সড়কের চারপাশে ব্যারিকেড দিয়ে রাখায় শাহবাগ, কাঁটাবন,  হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল, মৎস্য ভবন মোড় ও শাহবাগ থানার সামনের সড়ক থেকে বিকল্প পথে যানবাহন ঘুরিয়ে দেয়া হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন জরুরি কাজে বের হওয়া মানুষ। বাধ্য হয়ে অনেককে পায়ে হেঁটে যেতে দেখা যায়। আন্দোলনকারীরা ‘জুলাই সনদ চাই’, ‘রক্ত লাগলে রক্ত নে, জুলাই সনদ দিয়ে দে’, ‘বুকের ভেতর অনেক ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর’, ‘জুলাই সনদ নিয়ে টালবাহানা চলবে না’ ইত্যাদি স্লোগানে তাদের দাবি তুলে ধরেন। আন্দোলন ঘিরে শাহবাগ এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে পুলিশ ও বিজিবি। জুলাই সনদ তাদের উল্লেখ করে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে জানান তারা। জুলাই সনদ নিয়ে আশ্বাস পূরণ না হলে শাহবাগে অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করে অবস্থান করবেন বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন জুলাইযোদ্ধারা।

আন্দোলনকারী মাসুদ হোসেন বলেন, এখনো জুলাই সনদ না হওয়ায় আমরা আহত ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা বাধ্য হয়েই আন্দোলনে নেমেছি। বারবার এ দাবি জানানো হলেও কোনো অগ্রগতি হয়নি। দাবি না মানা পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়বো না। তিনি আরও বলেন, জুলাই সনদ শুধুমাত্র একটি ন্যায্য দাবি নয়, এটি তাদের আত্মত্যাগের স্বীকৃতি ও অধিকার। যত বাধাই আসুক না কেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে জানান তিনি।
আরেক আন্দোলনকারী তারেক হোসেন বলেন, এখনো জুলাই সনদ না হওয়ায় শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিরা ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত। বারবার আবেদন করেও কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় বাধ্য হয়ে রাজপথে নেমেছি। দাবি না মানা পর্যন্ত শাহবাগ ছাড়বেন না বলে জানান তিনি। একইসঙ্গে তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, জুলাই সনদের ব্যাপারে সরকার প্রতিশ্রুতি পূরণ না করলে শাহবাগেই স্থায়ী মঞ্চ গড়ে অবস্থান চালিয়ে যাবেন।

পিজি হাসপাতালে স্ত্রীকে নিয়ে এসেছেন আবিদুর রহমান। শাহবাগ মোড় বন্ধ থাকায় হেঁটে মৎস্য ভবনের দিকে রওনা হন তিনি। আবিদুর বলেন, এদিকে যান চলাচল বন্ধ। এমন হবে যদি জানতাম তাহলে এদিকে আসতাম না। 
রায়হান হোসেন বলেন, সায়েদাবাদ যাব। ঢাকায় একটা কাজে এসেছি, রাস্তা ঠিকমতো চিনি না। এখানে আসামাত্র দেখি বাস থেকে যাত্রী নামিয়ে দিয়েছে। এখন বাধ্য হয়ে পায়ে হেঁটে যাচ্ছি, সামনে বাস পাবো কিনা জানি না। এদিকে, বাসের টিকিটও কেটে ফেলেছি, সঠিক সময়ে বাস না ধরতে পারলে টাকাগুলোও লস হবে। 

দুর্ভোগে পড়া সিএনজিচালক মনসুর আলী বলেন, আমরা সিএনজি চালিয়ে টাকা আয় করি। শাহবাগ থেকেই বেশির ভাগ যাত্রী পাওয়া যায়, বিশেষ করে হাসপাতালের রোগী বহন করি। যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আজকে এক টাকাও আয় করতে পারিনি। গতকালও একই অবস্থা ছিল। এভাবে চললে পরিবার নিয়ে চলবো কীভাবে?  
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালিদ মনসুর বলেন, শাহবাগ এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়তি সদস্য দায়িত্ব পালন করছে। বৃহস্পতিবার সারারাত শাহবাগে সড়কে অবস্থান করেছেন অবরোধকারীরা। গতকাল দুপুর পর্যন্ত তারা সেখানেই অবস্থান করেন। বৃষ্টির মধ্যেই তাদের সেখানে অবস্থান করতে দেখা গেছে।

অবরোধকারীদের দাবিসমূহ: জুলাই শহীদ ও আহত যোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদান। শহীদ পরিবার ও আহতদের জন্য আজীবন সম্মান, চিকিৎসা, শিক্ষা ও কল্যাণ নিশ্চিত করা। আহতদের পূর্ণ চিকিৎসা, পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নেয়া, শহীদ পরিবার ও আহতদের জন্য আজীবন সম্মানজনক ভাতা চালু করা, বিশেষ আইনি সুরক্ষা ও সহায়তা কেন্দ্র গঠন, দমন-পীড়নের ঘটনার আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বিচার ও একটি স্বাধীন ‘সত্য ও ন্যায় কমিশন’ গঠন করা। 
উল্লেখ্য, সংস্কার নিয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় ৩০টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে চলমান সংলাপের শেষ দিকে এসে জুলাই সনদ নিয়েও মতবিরোধ দেখা দেয়। দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার পর জামায়াত ও এনসিপি বলছে, জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি না দিলে তাতে তারা সই করবে কিনা, সেটা ভেবে দেখবে। আবার শেষ দিনের বৈঠকে সিপিবি ও বাসদসহ চার বামপন্থি দল জাতীয় চার নীতি বাদ দেয়াকে কেন্দ্র করে বৈঠক বর্জন করে বলেছে, কমিশনের প্রস্তাবে পরিবর্তন না এলে জুলাই সনদে তাদের সই করার সম্ভাবনা নেই। আর বিএনপি’র পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, জাতীয় সনদের এখনই আইনি ভিত্তি প্রয়োজন নেই। এমন পরিস্থিতিতে জুলাই সনদ চেয়ে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়ে দাবি জানাচ্ছেন আন্দোলনকারীরা।