Image description

যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে, যা অবিলম্বে কার্যকর হয়েছে। ওয়াশিংটন ডিসিতে তিনদিনের যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ বাণিজ্য আলোচনা শেষে বৃহস্পতিবার বিকালে হোয়াইট হাউসের এক ঘোষণায় এ তথ্য জানানো হয়েছে। ঘোষণায় বাংলাদেশ ছাড়াও আরও কয়েকটি দেশের জন্য সংশোধিত শুল্কহার উল্লেখ করা হয়েছে।
ঘোষণা অনুযায়ী, পাকিস্তানের ওপর ১৯ শতাংশ, আফগানিস্তানের ওপর ১৫ শতাংশ, ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ, ব্রাজিলের ওপর ১০ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার ওপর ১৯ শতাংশ, মিয়ানমারের ওপর ৪০ শতাংশ, ফিলিপাইনের ওপর ১৯ শতাংশ এবং শ্রীলঙ্কা ও ভিয়েতনামের ওপর ২০ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।

এর আগে, এপ্রিলে বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। তবে, ৯ই এপ্রিল থেকে তিন মাসের জন্য এই শুল্ক সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা হয়; যাতে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনার সুযোগ তৈরি হয়। তিন মাসের সময়সীমা শেষ হওয়ার আগের দিন, ৮ই জুলাই, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে একটি চিঠি দিয়ে জানান, বাংলাদেশের ওপর শুল্ক ২ শতাংশ কমিয়ে ৩৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হবে। তবে, এই হার বাস্তবে কার্যকর হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের বেঁধে দেয়া ৩১শে জুলাইয়ের সময়সীমার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ বাণিজ্য আলোচনা শেষে পূর্ব ঘোষিত শুল্কহার থেকে ১৫ শতাংশ কমিয়ে বাংলাদেশের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর করা হলো। 

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের এই শুল্ক নীতি কার্যত নতুন এক বাণিজ্য যুদ্ধের সূচনা করেছে। ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি- এই শুল্ক নীতির ফলে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি ও শিল্প পণ্য রপ্তানির পথ প্রশস্ত হবে এবং দেশের আর্থিক স্বার্থ সুরক্ষিত হবে। তবে বিশ্লেষকদের মতে, এসব পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পর্ককে জটিল করে তুলবে এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।

তবে প্রশাসনের কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, তারা অতিরিক্ত বাণিজ্য আলোচনার জন্য এখনো উন্মুক্ত। বৃহস্পতিবার সকালেই হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলাইন লেভিট বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে অনেক বড় বাণিজ্য অংশীদারের সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন করেছে, যা মার্কিন বাজারে প্রবেশের সুযোগ দিয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগের অঙ্গীকার করেছে- যদিও এসব চুক্তির শর্তাবলী এখনো অস্পষ্ট।

তিনি বলেন, যেসব দেশ এখনো কোনো চুক্তি করেনি বা কেবল একটি চিঠি দিয়েছে, তারা আজ মধ্যরাতের সময়সীমার আগেই এই প্রশাসনের কাছ থেকে খবর পাবে। লেভিট জানান, সময়সীমার আগেই আরও বাণিজ্য চুক্তির ঘোষণা আসতে পারে। বাণিজ্য আলোচনায় যুক্ত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ দূতাবাসের এমন একজন কর্মকর্তা এই প্রতিনিধিকে বলেন, বাণিজ্য আলোচনার সকল পর্যায়েই বাংলাদেশের প্রত্যাশা ছিল- বাংলাদেশ ভিয়েতনামের চেয়ে একটি ভালো ডিল পাবে, তবে শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজে, যেখানে আলোচনায় অংশ নেয়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরও কোনো ক্ষমতা নেই। ওই কর্মকর্তা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান পার্টিতে ড. ইউনূসের প্রভাবশালী বন্ধুরা বাণিজ্য আলোচনায় পরোক্ষভাবে বাংলাদেশের পাশে ছিলেন, যারা প্রত্যেকে যেকোনো লবিস্ট ফার্মের চেয়েও অনেক শক্তিশালী। 

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের নির্ধারিত শুল্কহার বাংলাদেশের পোশাক খাতের জন্য স্বস্তি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং প্রধান আলোচক ড. খলিলুর রহমান বলেন, আমরা অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে আলোচনা করেছি, যাতে আমাদের প্রতিশ্রুতি জাতীয় স্বার্থ ও সক্ষমতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। তিনি জানান, তৈরি পোশাক খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি আমদানি প্রতিশ্রুতি কেন্দ্রীভূত করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি পণ্যে। এতে একদিকে যেমন আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে, অন্যদিকে মার্কিন কৃষিপ্রধান অঙ্গরাজ্যগুলোর সঙ্গে সম্পর্কও উন্নত হবে। ড. রহমান আরও বলেন, আমরা সম্ভাব্য ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক এড়াতে সক্ষম হয়েছি। এটি তৈরি পোশাক খাত এবং এ খাতের ওপর নির্ভরশীল লাখো মানুষের জন্য স্বস্তির খবর। আমরা শুধু প্রতিযোগিতার জায়গা ধরে রাখিনি, বরং বিশ্বের বৃহত্তম ভোক্তা বাজারে প্রবেশের নতুন সুযোগও সৃষ্টি করেছি।