Image description
 

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী ও কাজী নজরুল ইসলাম হল ছাত্রলীগের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ সাইফুল্লাহ ২০১৬ সালের ১ আগস্ট কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দেওয়াকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দু’পক্ষের অন্তর্কোন্দলে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। খালেদ হত্যার ৯ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো বিচার পায়নি তার পরিবার।

 

জানা যায়, হত্যাকাণ্ডের পরদিন ২০১৬ সালের ২ আগস্ট বাদী হয়ে মামলা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা ছাদেক হোসেন মজুমদার। ওই দিনই ছাত্রলীগের তৎকালীন সহসভাপতি রূপম দেবনাথ, যুগ্ম সম্পাদক রেজাউল ইসলাম, ইংরেজি বিভাগের জাহিদুল আলম জুয়েল, লোকপ্রশাসন বিভাগের আবু বকর সিদ্দিক, সুদীপ্ত নাথ ও নৃবিজ্ঞান বিভাগের স্বজন বরণ বিশ্বাসকে আটক করা হয়। এর তিন দিন পর রাজধানী থেকে আটক করা হয় মার্কেটিং বিভাগের বিপ্লব চন্দ্র দাসকে। 

আটকের পর আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তিনি। তবে বর্তমানে তারা সবাই জামিনে রয়েছেন।

প্রথমে মামলার তদন্ত করেন জেলা গোয়েন্দা সংস্থা (ডিবি)। সংস্থাটি নয়জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়। তবে চার্জশিটে নারাজি দেন খালেদ সাইফুল্লাহর মা ফাতেমা আক্তার। দ্বিতীয় দফায় তদন্তের দায়িত্ব পায় পিবিআই। আবারও তিনি নারাজি দেন ওই চার্জশিটে। তৃতীয় দফায় মামলাটি পিবিআই থেকে সিআইডিতে যায় এবং সর্বশেষ মামলাটি কুমিল্লা পুলিশ সুপারের কাছে রয়েছে।

খালেদ সাইফুল্লাহর মা ফাতেমা বেগম এ প্রসঙ্গে জানান, ছাত্রলীগের আমলে আমার ছেলের হত্যাকাণ্ডের বিচার করা তো দূরের কথা, উল্টো তৎকালীন প্রশাসন আসামিদের চাকরি দিয়েছে। তাদের বিচার না হওয়ার জন্য আগে আসামিদের পক্ষে ছাত্রলীগের নেতারা গিয়ে সুপারিশ করতো। এখন অর্থ লেনদেন করে ছাত্রলীগের আসামিদের পক্ষে ছাত্রদলের নেতারা সুপারিশ করে।

ছাত্রদলের কারা সুপারিশ করে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সদস্য সচিব মোস্তাফিজুর রহমান শুভর কথা জানান।

তিনি আরও জানান, শুভ আসামিদের পক্ষে সুপারিশ করতে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে গিয়েছে। কেন গেছে, জানার জন্য আমি একাধিকবার শুভর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি, কিন্তু সে আমার কোনো ফোন রিসিভ করেননি। পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে আমাকে জানানো হয়েছে, শুভ আসামিদের নির্দোষ দাবি করে তাদের পক্ষে সুপারিশ করতে এসেছে।

তবে হত্যা মামলায় জড়িত ছাত্রলীগের আসামিদের পক্ষে সুপারিশ করার বিষয়টি শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব মোস্তাফিজুর রহমান শুভ অস্বীকার করেন।

সদস্য সচিবের সুপারিশের বিষয়ে জানতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল মামুনকে কল দেওয়া হলে প্রথমে তিনি কেটে দিয়ে পরে আর কল রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে জতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে দুইজনই কল কেটে দেন।

মামলার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে মামলার বাদী বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা ছাদেক হোসেন মজুমদার বলেন, মামলার তদন্তের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কুমিল্লা সদরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। মামলাটির তদন্ত এখনও চলমান রয়েছে। খালেদ সাইফুল্লাহর মায়ের নারাজির জন্য মামলার তদন্ত বারবার পিছিয়ে গেছে। মামলা দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার জন্য আমরা নিয়মিত আদালতে যাচ্ছি ও মামলার খোঁজখবর নিচ্ছি।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইফুল মালিক বলেন, এটি একটি রাজনৈতিক মামলা। গত বছরের জানুয়ারিতে তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে কাজ চলছে। মামলার অগ্রগতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, না দেখে কিছু বলা সম্ভব নয়। 

চার্জশিট থেকে কোনো আসামির নাম বাদ দেওয়ার জন্য রাজনৈতিক নেতারা সুপারিশ করছে কি না জানতে চাইলে তিনি জানান, এ ধরনের কোনো সুযোগ নেই। তবে তদন্ত কতদিন লাগবে জানতে চাইলে ব্যস্ততা দেখিয়ে কল কেটে দেন। 

উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, আমাদের আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া আছে। তারা মামলা পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছেন। আমরা নিয়মিত আইনজীবীদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করছি।