
পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ার দয়াগঞ্জে গতকাল ভোরে আরিফুল ইসলাম বাবু নামে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। পূর্ব শত্রুতার জের ধরে স্থানীয় সন্ত্রাসী রবিন, শাহীন, মাসুদ, কাদেরসহ পাঁচ-ছয়জন আরিফুলকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে।
গত ২৬ জুলাই মোহাম্মদপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের সামনে ফজলে রাব্বি সুমন নামে এক যুবককে ছুরিকাঘাতে খুন করা হয়। পেশায় সে একটি হার্ডওয়ারের দোকানের কর্মচারী। নিহতের বোন তানিয়া আক্তার বলেন, বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের সামনে মুন্না নামে এক বখাটে তার ভাইয়ের কাছে থেকে মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়ার সময় ছুরিকাঘাত করলে সুমনের মৃত্যু হয়।
গত ২৩ জুলাই রাতে ডেমরার সাইনবোর্ড শাপলা চত্বর সংলগ্ন ‘আল আকসা টাওয়ার’ নামে একটি নির্মাণাধীন ভবনে মোবাইল চুরির অভিযোগে গণপিটুনি দিয়ে মো. সোয়াদুল ইসলাম সোয়াদ নামে তরুণকে হত্যা করা হয়।
গত ১৬ জুলাই মোহাম্মদপুর ও আদাবর এলাকায় এক ঘণ্টার ব্যবধানে দুজনকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়। ওই দিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে মোহাম্মদপুরের চাঁদ উদ্যান সড়কের লাউতলায় পূর্বশত্রুতার জের ধরে আল-আমিন নামে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এর ঘণ্টাখানেক পর রাত ৮টার দিকে নবোদয় হাউজিংয়ে নিজ বাসার সামনে গুলি করে হত্যা করা হয় ইব্রাহিম নামে আরেক যুবককে।
শুধু এই পাঁচটি ঘটনাই নয়। রাজধানীতে এমন তুচ্ছ ঘটনায় প্রতিনিয়ত খুনোখুনির ঘটনা ঘটছে। প্রিয়জন হারানোর বেদনায় প্রতিনিয়ত ভারী হয়ে উঠছে আশপাশের পরিবেশ। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ছয় মাসে রাজধানীতে ২১৭ জন হত্যাকাণ্ডর শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ৩৬, ফেব্রুয়ারি ৩৮, মার্চে ৩৩, এপ্রিলে ২৯, মেতে ৩২ ও জুনে ৪৯ জন হত্যাকাে র শিকার হন। সে হিসাবে প্রতিদিন একটির বেশি খুনের ঘটনা ঘটছে। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, গত ছয় মাসে চাঁদাবাজি, তুচ্ছ ঘটনা, আধিপত্য বিস্তার, পূর্বশক্রতার জেরে খুনের ঘটনাগুলো ঘটেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, যে কারণেই খুনের ঘটনা সংঘটিত হোক না কেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। এসব ঘটনায় যারা জড়িত তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করা উচিত। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত হলে অন্যরা এসব অন্যায় করতে ভয় পাবে এবং এসব ঘটনা থেকে বেরিয়ে আসবে। ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন মো. নজরুল ইসলাম বলেন, যেখানে খুনের ঘটনা ঘটে সেখানে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে ছুটে যাই। এসব ঘটনায় মামলা হচ্ছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত প্রত্যেকেই গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। অপরাধের সঙ্গে জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হয় না। তবে অনেক অপরাধীকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হলেও তারা জামিনে বেরিয়ে এসে ফের একই অপরাধে জড়াচ্ছে।