Image description
সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন

আগামী ৫ আগস্টের মধ্যে ‘জুলাই সনদ’ চূড়ান্ত করতে যাচ্ছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। রাষ্ট্র ও সংবিধানের মৌলিক কাঠামোতে সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতের ভিত্তিতে এই সনদ হচ্ছে। ঘোষণা হতে যাচ্ছে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রও’। একই মাসে জাতীয় সংসদের সীমানা পুনর্নির্ধারণের খসড়া প্রকাশসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তুতি দৃশ্যমান করারও উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। আগস্ট মাসেই জুলাই গণহত্যার ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের আনুষ্ঠানিক বিচার কার্যক্রম দৃশ্যমান হবে। এছাড়া আগস্টের শুরুতেই ভোটের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা। শনিবার ১৪টি রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বিষয়টি উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা। সব মিলিয়ে সংস্কার (জুলাই সনদ, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র) গণহত্যার বিচার ও নির্বাচন নিয়ে অগ্রগতি আগস্টেই দৃশ্যমান হবে বলে মনে করছেন ঐকমত্য কমিশন, ইসি ও সরকার সংশ্লিষ্টরা। নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

রাজনৈতিক দলগুলো বলছে, জাতীয় নির্বাচনের আগে প্রয়োজনীয় সংস্কার, দৃশ্যমান বিচার ও জুলাই ঘোষণাপত্র-মোটা দাগে এ তিনটি দাবি সবার। মৌলিক সংস্কারের বিষয়ে সব দলের স্বাক্ষরে জুলাই সনদ প্রণীত হবে। প্রধান উপদেষ্টার জাতির উদ্দেশে ভাষণে নির্বাচনের তারিখসহ এসব দাবি পূরণের বিষয় স্পষ্ট হতে পারে। আগস্টেই দলগুলোর দাবি পূরণ হচ্ছে এ ব্যাপারে নেতারা প্রায় নিশ্চিত। নির্বাচনের মাঠে পুরোপুরি নেমে যাবে রাজনৈতিক দলগুলো। ফলে চলমান অনেক সমস্যার সমাধান হবে। যা দেশ ও দেশের মানুষের জন্য মঙ্গলজনক হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, আগামী ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থান এবং আগামী ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর পূর্তি হতে যাচ্ছে। এ দুটি দিবস সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বড় পরিসরে বৈঠকের পরিকল্পনা রয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের। এছাড়া নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের যেসব সুপারিশ এখনো ঝুলে আছে, তার অনেকগুলোই আগস্টে আলোর মুখ দেখবে। তারা জানান, নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে যে অনিশ্চয়তা ছিল তা কেটে গেছে। আগামী মাসের শুরুতেই ভোটের তারিখ ঘোষণা হবে। ইতোমধ্যে নির্বাচন সামনে রেখে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

দেশের মৌলিক সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতৈক্য তৈরির কাজ করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার যুগান্তরকে বলেন, ১৯টি মৌলিক বিষয় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের আলোচনা চলছে। ইতোমধ্যে ১২টি বিষয় নিষ্পত্তি হয়েছে। বাকিগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য দিন-রাত কাজ করছে ঐকমত্য কমিশন। রাজনৈতিক দলগুলোও আমাদের সহযোগিতা করছে। আশা করছি, আগামী ৫ আগস্টের মধ্যে কতগুলো মৌলিক সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছতে পারব। ওটাই হবে ‘জাতীয় জুলাই সনদ’।

ইসি সূত্র জানায়, জুলাই সনদের সঙ্গে নির্বাচনি প্রস্তুতির সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত যেসব পরিবর্তনে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে, সেসব বিষয়ে নির্বাচন কমিশন পদক্ষেপ নেবে। জুলাই সনদের অপেক্ষায় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রধান আইন ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ’ (আরপিও) সংশোধনী চূড়ান্ত করছে না ইসি। ওই আইন চূড়ান্ত না করা পর্যন্ত নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা এবং রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা সংশোধনীর কাজ শেষ করতে পারছে না কমিশন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নির্বাচন কমিশনার যুগান্তরকে বলেন, ঐকমত্য কমিশনের সিদ্ধান্ত আসার পর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কোথায় কোথায় পরিবর্তন আসবে তা আমরা জানতে পারব। জাতীয় সংসদের নারী আসন সংখ্যা কত হবে এবং ওই আসনে কোন পদ্ধতিতে ভোট হবে-সেটাও বুঝতে পারব। এছাড়া আরপিও সংশোধন এখনো আমরা চূড়ান্ত করিনি। কী ধরনের মতামত আসে, সেজন্য আমরা অপেক্ষায় আছি। তিনি বলেন, সংস্কার কমিশন যেসব সুপারিশ দিয়েছে, সেগুলোর ভিত্তিতে আমরা একটা খসড়া তৈরি করে রেখেছি। আমার ব্যক্তিগত মত হচ্ছে, ঐকমত্য কমিশন থেকে যদি মতামত আসে, আমরা তা যতটা সম্ভব অন্তর্ভুক্ত করতে চেষ্টা করব।

নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার যুগান্তরকে বলেন, আমরা অনেক আগ থেকেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে আসছি। এর মধ্যে অনেক কাজ আগস্ট মাসে দৃশ্যমান হবে। সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ নিয়ে একটি কারিগরি কমিটি কাজ করছে। আশা করছি, আগামী কমিশন সভার পর সংসদীয় আসনের সীমানার খসড়া প্রকাশ করতে পারব। এর মধ্য দিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ এগোবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জনসংখ্যা ও ভোটার সংখ্যা অনুপাত বিবেচনায় খুব বেশি আসনের সীমানা হয়তো পরিবর্তন আসবে না।

এদিকে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার খবরে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন রাজনৈতিক দলের নেতারা। জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, জাতীয় নির্বাচনের জন্যই এতদিনের সংগ্রাম। ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন হবে এবং সেজন্য সরকারকে ব্যবস্থা নিতে হবে। নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সময় স্পষ্ট করা হলেই সব সমস্যার সমাধান হবে। জুলাই সনদ নিয়ে এখন পর্যন্ত বিএনপিই সবচেয়ে বেশি আন্তরিকতা দেখিয়েছে। এই জুলাইয়ের ভেতরে জুলাই সনদ অর্থাৎ জাতীয় সনদ প্রণীত না হয়, সেজন্য দায়ী থাকবে এই সংস্কার কমিশন, ঐকমত্য কমিশন এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

তিনি বলেন, ‘জুলাই ঘোষণাপত্রের ভাষ্য আমরা পাঁচ মাস আগে জমা দিয়েছি। গত ৯ জুলাই একটি পরিমার্জিত ভার্সন চেয়েছে, তা নিজে গিয়ে জমা দিয়েছি। জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের যথাযথ মর্যাদা ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি আমরা দেব। সংবিধানের চতুর্থ তফশিলে তার বর্ণনা থাকবে। ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে, তার বৈধতাও সেখানে থাকবে।’

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু যেনতেন নির্বাচন চায় না জামায়াত। এখন দ্রুত সময়ের মধ্যে জুলাই সনদ, জুলাই ঘোষণাপত্র আমরা চাই। এছাড়া নির্বাচনের আগে দৃশ্যমান বিচার করতে হবে।

এদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি বলছে, জাতীয় নির্বাচনের আগে জুলাই সনদ, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র ও বিচার শেষ করতে হবে। আগামী ৫ আগস্টের আগেই জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র ঘোষণা দিতে হবে। শুক্রবার সুনামগঞ্জে এক সমাবেশে নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, আগামী ৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র আদায় করা হবে।

৫ আগস্টের আগে জুলাই সনদ চূড়ান্ত করতে যাচ্ছে ঐকমত্য কমিশন : সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, দুদক ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবিত সুপারিশ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করছে ঐকমত্য কমিশন। এর মধ্যে রাষ্ট্রের মৌলিক কাঠামো পরিবর্তন করতে হবে, এমন বিষয় রয়েছে ১৯টি। সেগুলো হচ্ছে-সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি নির্ধারণ, নির্বাচনি এলাকার সীমানা নির্ধারণ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্বসংক্রান্ত, রাষ্ট্রপতির ক্ষমা সম্পর্কিত বিধান ও বিচার বিভাগ বিকেন্দ্রীকরণ। আরও রয়েছে, সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ (উচ্চকক্ষ গঠন, নির্বাচন পদ্ধতি ও এখতিয়ার), সংসদের নারী আসন (সংখ্যা বৃদ্ধি, নির্বাচন পদ্ধতি ইত্যাদি), রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি, রাষ্ট্রের মূলনীতি, প্রধান বিচারপতি নিয়োগ, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা, জরুরি অবস্থা ঘোষণা, সংসদ সদস্যদের একাধিক পদে থাকার বিধান, প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকার বিধান, এক ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী পদে সর্বোচ্চ দশ বছর মেয়াদ, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ এবং নাগরিকের মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ সম্পর্কিত প্রস্তাব। এর মধ্যে কয়েকটি বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে বিএনপি ও সমমানা দলগুলো ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে।

ঐকমত্য কমিশনের একাধিক সদস্য জানান, সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশের ৮০ শতাংশ অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাহী আদেশে বাস্তবায়ন করতে পারবে। আর মৌলিক সংস্কারের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর স্বাক্ষরে জুলাই সনদ প্রণীত হবে। যেসব বিষয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্য হয়েছে, যে দলই আগামী নির্বাচনে ক্ষমতায় অধিষ্ঠ হোক না কেন, তা বাস্তবায়ন করতে বাধ্য থাকবে। তবে যেসব বিষয়ে বিএনপি ও সমমানা দলগুলো নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়ন করা ওই দলগুলোর জন্য বাধ্যতামূলক হবে না। ওই সদস্যরা জানান, চলতি সপ্তাহের প্রতিদিনই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ চলবে। যেসব বিষয়ে এখনো অনিষ্পন্ন রয়েছে, সেগুলো আগামী ৫ আগস্টের মধ্যেই নিষ্পত্তি করার সব প্রচেষ্টা চলছে।

জানতে চাইলে ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, রাষ্ট্রের কাঠামোগত মৌলিক বিষয় বাদে যেসব সুপারিশ আইন ও বিধিমালা সংশোধনের মাধ্যমে করা যাবে, সেগুলো সরকার এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো বাস্তবায়ন করবে। উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের সীমানা পরিবর্তন, ভোটার তালিকার খসড়া প্রকাশসহ নির্বাচনের যেসব কাজ রয়েছে সেগুলো নির্বাচন কমিশন বাস্তবায়ন করবে।

জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি : ইসি সূত্র জানিয়েছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে-সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ, ভোটার তালিকা হালনাগাদ, আরপিওসহ আইন ও বিধিমালাগুলো সংশোধন, নির্বাচনি সামগ্রী কেনাকাটা, নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধন, পর্যবেক্ষক নিবন্ধন, প্রবাসীদের ভোটাধিকার এবং নির্বাচন ও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা প্রশিক্ষণ।

সূত্র আরও জানিয়েছে, নির্বাচনি মালামাল সংগ্রহের কাজ চলছে। এ কাজে নির্বাচন কমিশনকে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) সহযোগিতা করছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে ইসি। আগামী সেপ্টম্বরের মধ্যে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় ভোটার তালিকায় ৫০ লাখের বেশি তরুণ ভোটার যুক্ত হতে যাচ্ছেন। এছাড়া আগস্ট মাসে সীমানা পুনর্নির্ধারণ করে খসড়া প্রকাশের পরিকল্পনা রয়েছে ইসির। ওই খসড়া তালিকার ওপর যেসব আবেদন জমা পড়বে, সেই আবেদন নিষ্পত্তি করে অক্টোবরের মধ্যে তা চূড়ান্ত করতে চায় কমিশন। আগস্টেই নির্বাচন কমিশন পর্যায়ে জাতীয় নির্বাচনের প্রধান আইন ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)’ সংশোধনী চূড়ান্ত করতে চায় কমিশন। এটি সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে অধ্যাদেশ আকারে জারি হতে পারে।

নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের কার্যক্রম চলছে। অক্টোবরের মধ্যে এ কার্যক্রম শেষ হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। আগামী সেপ্টেম্বর থেকে নির্বাচন কর্মকর্তা ও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে নির্বাচনি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের। প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলবে চার মাস। ইসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আরও জানান, ভোটার তালিকা আইন সংশোধন হয়ে যাওয়ায় হালনাগাদ তালিকা প্রকাশে আইনি জটিলতা নেই। আগামী সেপ্টেম্বরে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ভোটকেন্দ্রের খসড়া তালিকা তৈরির কাজ শুরু করতে শিগগিরই মাঠ পর্যায়ে চিঠি দেওয়া হতে পারে। সাধারণত ভোটগ্রহণের ২৫ দিন আগে ভোটকেন্দ্রের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়।

নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার যুগান্তরকে বলেন, নির্বাচনের প্রস্তুতির সবগুলো কাজই সমন্তরালভাবে চলছে। ভোটগ্রহণ যখনই হোক না কেন, আমাদের প্রস্তুতি আগেই শেষ করে রাখতে চাই। যাতে শেষ সময়ে কোনো ধরনের ত্রুটি না থাকে।

বিচার কাজ দৃশ্যমান হচ্ছে : এদিকে জুলাই অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে চারটি মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হচ্ছে আগস্টে। এসব মামলায় ফরমাল চার্জ (আনুষ্ঠানিক অভিযোগ) আমলে নিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলাও রয়েছে। বাকি তিনটির একটি রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় ছয়জনকে গুলি করে হত্যা এবং আশুলিয়ায় ছয় আন্দোলনকারীকে পোড়ানোর মামলা। অন্য মামলাটি রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় করা।

জানতে চাইলে প্রসিকিউটর বিএম সুলতান মাহমুদ যুগান্তরকে বলেন, ট্রাইব্যুনালে এখন পর্যন্ত ২৭টি মামলা হয়েছে, এর মধ্যে ২৩টি বিবিধ মামলা বা মিস কেস। চারটি মিস কেস নিয়মিত মামলায় রূপ নিয়েছে। এ চারটির মধ্যে নির্দেশদাতা হিসাবে শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে একটি এবং রাজধানীর চানখাঁরপুলে ছয়জনকে গুলি করে হত্যাসহ দুটি মামলার ওপেনিং স্টেটমেন্ট ও সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর জন্য রেখেছেন আদালত। সবকিছু ঠিক থাকলে আশুলিয়ায় ছয় আন্দোলনকারীকে পোড়ানো এবং রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যা মামলা দুটিরও আগস্টে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হতে পারে। তবে সবকিছু ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ার।