
গুলশান-২ এর ৮৩ নম্বর রোড। বাড়ি নং-১৩। বাসাটিতে স্বামীসহ থাকতেন সাবেক এমপি শাম্মী আহমেদ। ৫ই আগস্টের পর থেকে তিনি গাঢাকা দিয়েছেন। তার অবস্থান কোথায় তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, অস্ট্রেলিয়ায় সন্তানদের কাছে তিনি অবস্থান করছেন। এখন বাসাটিতে থাকেন তার স্বামী সিদ্দিক আবু জাফর। ১৭ই জুলাই ভোর ৫টা। সেদিন গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পদযাত্রায় হামলার ঘটনার পর কারফিউ চলছিল গোপালগঞ্জে। ওইদিন ভোরে ওই বাসাতে পলাতক এমপি শাম্মী আহমেদ অবস্থান করছেন- এমন খবর পায় গুলশান থানা পুলিশ। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের একটি টিম ওই বাসার সামনে গিয়ে দেখতে পায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) কয়েকজন নেতা। তারা পুলিশকে জানায়, আওয়ামী লীগের দোসর সাবেক এমপি শাম্মী ওই বাসায় অবস্থান করছেন। পরে পুলিশের সঙ্গে তারাও শাম্মীর ফ্ল্যাটে যান। বাসাটিতে প্রায় দেড় থেকে দুই ঘণ্টা অভিযান চালানো হয়। কিন্তু সাবেক এই এমপিকে পাওয়া যায়নি। পরে পুলিশ চলে যায়। এর ঠিক আড়াই ঘণ্টা পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক আব্দুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান রিয়াদ ও অপু সেই বাসাতে গিয়ে শাম্মীর স্বামীকে আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে গ্রেপ্তারের ভয় দেখিয়ে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। পরে সিদ্দিক আবু জাফর তাদের ১০ লাখ টাকা দেন। ১০ লাখ টাকা পেয়ে তারা থামেনি। ১৯শে জুলাই রাত সাড়ে ১০টার দিকে রিয়াদ ও অপু ফের বাসায় গিয়ে দরজায় ধাক্কাধাক্কি করে। তখন ওই বাড়ি থেকে পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়। এটি টের পেয়ে তারা পালিয়ে যায়। এরপর তারা বিভিন্ন সময়ে বাসায় এসে জাফর বাসায় আছেন কিনা খোঁজখবর নিচ্ছিলেন। বাসার নিরাপত্তাকর্মীর কাছে এসে জানতে চাইতেন। কারণে-অকারণে ভেতরে যেতে চাইতেন। কিন্তু নিরাপত্তাকর্মী তাদের ভেতরে যেতে দেননি। ২৬শে জুলাই বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে রিয়াদের নেতৃত্বে ৪ জন আবার শাম্মী আহমেদের বাসার সামনে হাজির হয়ে দাবি করা ৪০ লাখ টাকা না দিলে পুলিশে ধরিয়ে দেয়ার হুমকি দেন। তারা বাসার সামনে এসে নিরাপত্তাকর্মীর কাছে শাম্মীর স্বামী জাফরের খোঁজ জানতে চান। কিন্তু জাফর তখন বাসার বাইরে ছিলেন। বাসায় ফিরে দেখেন ফটকের সামনে ওই নেতারা দাঁড়িয়ে আছে। এরপর কথা বলতে বলতে তাদের নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে ফটকে তালা দেন। কৌশলে খবর দেন পুলিশে। পরে পুলিশ এসে তাদের ধরে নিয়ে যায়।
এ ঘটনার পর শাম্মী আহমেদের স্বামী সিদ্দিক আবু জাফর গুলশান থানায় বাদী হয়ে মামলা করেছেন। মামলার এজাহারে তিনি বলেছেন, ১৭ই জুলাই সকাল ১০টার দিকে আসামি রিয়াদ ও অপু গুলশানের ৮৩ নম্বর রোডের বাসায় যান। সেখানে গিয়ে তারা হুমকি-ধামকি দিয়ে ৫০ লাখ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার দাবি করেন। দাবি মেনে না নিলে আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে পুলিশের মাধ্যমে গ্রেপ্তারের হুমকি দেন। চাপে পড়ে তিনি ৫ লাখ টাকা নিজের কাছ থেকে এবং আরও ৫ লাখ টাকা ভাইয়ের কাছ থেকে নিয়ে মোট ১০ লাখ টাকা দেন। পরে ১৯শে জুলাই রাত সাড়ে ১০টার দিকে রিয়াদ ও অপু ফের বাসায় গিয়ে দরজায় সজোরে ধাক্কা মারে। পুলিশকে অবহিত করা হলে তারা পালিয়ে যায়। এরপর ২৬শে জুলাই বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে রিয়াদের নেতৃত্বে ৪ জন আবার শাম্মী আহমেদের বাসার সামনে হাজির হন এবং দাবি করা বাকি ৪০ লাখ টাকা না দিলে পুলিশে ধরিয়ে দেয়ার হুমকি দেন। বিষয়টি গুলশান থানায় জানালে পুলিশ তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে ঘটনাস্থল থেকে আটক করে। তবে আসামি কাজী গৌরব অপু পালিয়ে যায়। আরেক আসামি একজন কিশোর।
পুলিশ জানিয়েছে, আসামিরা সংঘবদ্ধ চাঁদাবাজ দলের সদস্য। তারা দেশের বিরাজমান পরিস্থিতিতে ছাত্র সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে অস্ত্র মামলায় আসামি করাসহ বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদা আদায় করে। ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসব কার্যকলাপ প্রকাশিত হচ্ছে। তারা গুলশান থানা এলাকায় বিভিন্ন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদা আদায় করে আসছিল। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্যক্তি এসব ঘটনার শিকার হলেও আসামিদের ভয়ে তারা মুখ খুলেনি। এ ছাড়াও আরও মানুষের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করেছে বলে বিভিন্ন থানায় অভিযোগ আছে।
পুলিশের গুলশান বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে সংগঠনের পদ-পদবি ব্যবহার করে সংঘবদ্ধ একটি চাঁদাবাজ চক্র গুলশান বনানী এলাকায় গড়ে উঠেছিল। তারা ৫ই আগস্টের পর থেকে আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে রাজনৈতিক নেতাকর্মী থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন ব্যক্তিদের বাসায় হামলা, লুটপাটের সঙ্গে জড়িত ছিল। এ ছাড়া মামলার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়, ডোনেশনের কথা বলে চাঁদাবাজি, অস্ত্রবাজি, গ্রেপ্তারের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়সহ নানা অপকর্মে জড়িত ছিল। টার্গেট করে করে তারা বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে চাঁদাবাজি করতো। কাঙ্ক্ষিত চাঁদা আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা হয়রানি করতো। গত ১১ মাস ধরে তারা কতো মানুষকে হয়রানি করে টাকা আদায় করেছে তার হিসাব পুলিশের খাতায়ও নেই। পুলিশের গুলশান ডিভিশনের গুলশান, বনানী, বাড্ডা, ভাটারাসহ বাকি থানাগুলোতে এদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মৌখিক অভিযোগের পাহাড়। বিভিন্ন সময় পুলিশ ভুক্তভোগীদের মামলা করার পরামর্শ দিলেও ভুক্তভোগীরা নীরব ছিলেন। কারণ ওই সমন্বয়ক নামধারী চাঁদাবাজরা চাঁদা আদায়ের আগে হুমকি-ধমকি দিয়ে রাখতো।
পুলিশের কর্মকর্তারা বলেছেন, অভিযোগ অনেক ছিল। কিন্তু ভুক্তভোগীরা অভিযোগ দিতে চাইতো না। কারণ তারা মব সৃষ্টি করে অপকর্ম করতো। কেউ তাদের কথার বাইরে গেলে মব সৃষ্টি করে হেনস্তা করতো। তারা পুলিশের বিরুদ্ধেও মব সৃষ্টি করার হুমকি দিতো। গ্রেপ্তারের সময়ও পুলিশের সদস্যদের কীভাবে চাকরি করে এই হুমকি দিয়েছে। এমনকি থানায় নিয়ে আসার পর বিভিন্ন মহল থেকে তাদের ছেড়ে দেয়ার চাপ সৃষ্টি করা হয়। আরেকটি সূত্র বলেছে, গ্রেপ্তারের পর তাদের থানায় নিয়ে গেলে সেখানে তাদের সহযোগীদের ভিড় বাড়তে থাকে। হামলা ও থানায় গিয়ে তাদের মারধর করা হতে পারে এমন শঙ্কায় পরে নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের ডিবিতে রেখে পরেরদিন আদালতে পাঠানো হয়।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশের সূত্রগুলো বলছে, শাম্মী আহমেদের বাসা থেকে যে ১০ লাখ টাকা রিয়াদ ও অপু নিয়েছে সেটি তারা ৫ লাখ করে ভাগ করে দু’জন নিয়েছে। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, গত ১১ মাসে লাখ লাখ টাকা তারা চাঁদাবাজি করে ভাগ-বাটোয়ারা করে নিয়েছে। এসব টাকা তারা জুয়া, বিনোদন ও আনন্দ ফুর্তি করে খরচ করেছে। ৫ই আগস্টের পর থেকে গুলশান, বনানী, বাড্ডা এলাকার এক আতঙ্কের নাম ছিল রিয়াদ-অপু চাঁদাবাজ গ্রুপ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্কুল শিক্ষকের ছেলে রিয়াদ একসময় একটি সাধারণ মেসে থাকতো। কিন্তু সংগঠনের পদ-পদবি তার ভাগ্য বদল করে দিয়েছে। এখন সে অভিজাত এলাকায় থাকাসহ, রাজনৈতিক শীর্ষ নেতা, উপদেষ্টা, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন মহলে তার বিচরণ। ফেসবুকে বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ছবি শেয়ার করে সে তার নিজের অবস্থান জানান দিতো।
পাঁচ নেতা ৭ দিনের রিমান্ডে: চাঁদাবাজির অভিযোগে গ্রেপ্তার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাসহ ৪ জনকে সাতদিনের রিমান্ডে দিয়েছেন আদালত। রোববার ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম জিয়াদুর রহমান শুনানি শেষে এই আদেশ দেন। রিমান্ড প্রাপ্ত আসামিরা হলেন- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক আব্দুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান রিয়াদ, সংগঠনের ঢাকা মহানগর শাখার বহিষ্কৃত আহ্বায়ক ইব্রাহিম হোসেন, সদস্য সাকাদাউন সিয়াম এবং সাদমান সাদাব। গুলশান থানার আদালতের প্রসিকিউশন বিভাগের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোক্তার হোসেন জানান, আসামিদের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে আদালতে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে বিচারক ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদের শেকড় অনেক গভীরে: জুলাইয়ে গণ-অভ্যুত্থানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও মুখপাত্র উমামা ফাতেমা তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজে লিখেছেন, এই চাঁদাবাজির খবর দেখে আশপাশের সবাই এত অবাক হওয়ার ভান করছেন, বিষয়টা কিছুটা হাস্যকর বটে। বলতে হবে, এই প্রথম কোনো চাঁদাবাজি করতে গিয়ে তারা পুলিশের হাতে ধরা খেলো। ঠিকমতো খোঁজ নিলে বুঝবেন, এদের শেকড় অনেক গভীরে।
তিনি বলেছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ৫ জনের চাঁদাবাজির খবর শুনে আমার পরিচিত ব্যক্তিবর্গ এতটাই আশ্চর্যান্বিত হওয়ার অভিনয় করছেন যে আমার মনে হচ্ছে আমিই সব থেকে কম আশ্চর্য হয়েছি। এই ছেলেগুলাকে তো নেতাদের পেছনে প্রটোকল দিতে দেখা গেছে এতদিন যাবৎ। সচিবালয় থেকে শুরু করে মিছিল-মিটিং, মারামারি সব জায়গাতেই সমন্বয়কদের ডান হাত, বাম হাত হিসেবে নির্বিঘ্নে প্রটোকল দিয়ে গেছে। গুলশান-বনানী গ্যাং কালচারের অজস্র অভিযোগ অভ্যন্তরীণভাবে তাদের বিরুদ্ধে ছিল। রিয়াদ নামের ছেলেটা গত ডিসেম্বর মাসে রূপায়ণ টাওয়ারে আমার সামনে অত্যন্ত উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করেছিল। আমরা মেয়েরা তাকে থামানোর চেষ্টা করলে আমাদের উপর পাল্টা চড়াও হয়। ওই ঘটনার পর ছেলেটার ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি ইতিমধ্যে তার বিরুদ্ধে হুমকি, মারামারি ও চাঁদাবাজির অভিযোগ আছে। আমি জেনে তখন মোটেও অবাক হইনি, কারণ ততদিনে বৈষম্যবিরোধীতে এই ধরনের মানুষজনের আনাগোনা সর্বত্র টের পাওয়া যেত। ঠিকই তারা রূপায়ণ টাওয়ারে অবাধে আসা- যাওয়া করতো। কারও দুর্নীতি বা অসততার ব্যাপারে অভিযোগ জানালে উত্তরে পিনড্রপ সাইলেন্স উপহার পেতে হবে। আর আমি চোখের সামনে দেখতাম এসব লোকজনই কীভাবে দিন শেষে এক্সেস করে নেয়। আজকে এত মাস পর এই প্ল্যাটফরমের দিকে তাকালে বলার ভাষা পাই না কোনো! যে যেভাবে পারছে এই প্ল্যাটফরমকে নষ্ট করেছে। ইশ! মানুষ কতো নিঃষ্পাপ! সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুর মতো তারা আবিষ্কার করেছেন এই ছেলেগুলো আজ কীভাবে চাঁদাবাজি করলো! অত্যন্ত দুঃখিত বন্ধুরা, বলতে হবে এই প্রথম কোনো চাঁদাবাজি করতে গিয়ে তারা পুলিশের হাতে ধরা খেলো। ঠিকমতো খোঁজ নিলে বুঝবেন, এদের শেকড় অনেক গভীরে।
এদিকে, কেন্দ্রীয় কমিটি ব্যতীত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সারা দেশের সব কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে জানিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম বলেছেন, কোনো অফিসে, কোনো বাসায়, কিংবা কোনো প্রতিষ্ঠানে ‘সমন্বয়ক’ পরিচয় দিয়ে কেউ চাঁদাবাজি, তদবির, মামলা বাণিজ্য করতে গেলে ধরে সোজা পুলিশে দেবেন। রোববার রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেয়া এক পোস্টের কমেন্ট সেকশনে এই মন্তব্য করেন তিনি।
গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, চাঁদাবাজির অভিযোগে হাতেনাতে পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের পর থেকে বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেকেই ফোন করে তাদের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ দিচ্ছেন। অনেকের কাছ থেকে তারা চাঁদা নিয়েছেন বলে অভিযোগ আসছে। সবাইকে বলে দিয়েছি, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।