Image description

সমুদ্রপারের নিরবতা আর অশান্ত ঢেউয়ের মাঝখানে কেটে গেছে দীর্ঘ ১৮টি দিন। তবু কোনো খোঁজ মেলেনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) প্রাণবন্ত শিক্ষার্থী অরিত্র হাসানের। সময় যত গড়াচ্ছে, ততই গভীর হচ্ছে শোক, বাড়ছে উদ্বেগ আর অপেক্ষার ভার। গত ৮ জুলাই, মঙ্গলবারের সকাল। বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে ঘুরতে গিয়েছিলেন কক্সবাজারের হিমছড়ি জাদুঘর সংলগ্ন সমুদ্রসৈকতে। রোদে ঝলমলে সেদিনের সকালই যেন হয়ে উঠেছিল তিনটি তরতাজা প্রাণের জন্য কালরাত্রি। গোসলে নামা সেই আনন্দঘন মুহূর্তেই সাগরের হঠাৎ উত্তাল ঢেউ কেড়ে নেয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের তিন শিক্ষার্থী—কে এম সাদমান রহমান সাবাব, আসিফ আহমেদ ও অরিত্র হাসানকে।

তাদের মধ্যে দু’জন—সাবাব ও আসিফের নিথর দেহ ফিরে আসে পরিবারের কাছে। সাবাবের মরদেহ উদ্ধার হয় ঘটনার দিনই। ঢাকার মিরপুরের এই তরুণের হাসিমুখ ভেসে উঠে এক বেদনাবিধুর বিদায়ের প্রতীকে। পরদিন সকালে সমিতিপাড়া উপকূলে ভেসে আসে বগুড়ার আসিফ আহমেদের মরদেহ। অথচ সেই দিন থেকে শুরু হওয়া অরিত্র হাসানের সন্ধানের লড়াই আজও থামেনি। সাগর আজও ফিরিয়ে দেয়নি অরিত্রকে!

নিখোঁজের পরপরই ট্যুরিস্ট পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও কোস্টগার্ডের যৌথ উদ্ধার অভিযান শুরু হয়। প্রতিদিন সমুদ্রের ঢেউ মনিটর করা হচ্ছে, তল্লাশি চলছে সৈকতের প্রতিটি কোনা জুড়ে। কিন্তু সাগরের নীরবতা আর তীব্র স্রোতের সামনে যেন হার মেনেছে সব প্রচেষ্টা।

ট্যুরিস্ট পুলিশের পরিদর্শক মো. আব্দুল মুকিত দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, ‘আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। কিন্তু দুঃখজনকভাবে এখনও অরিত্র হাসানের সন্ধান মেলেনি। লাইফ গার্ডের উদ্ধার অভিযান এখনও চলমান, একটি উদ্ধারকারী দল আশেপাশে সাগরের কিনারে কিনারে খুঁজে চলেছে অরিত্র হাসানের মরদেহ।'

বগুড়ার এক সম্ভাবনাময় তরুণ অরিত্র হাসান। সদ্য ভর্তি হওয়া চবি’র প্রথম বর্ষের ছাত্র। বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে প্রাণচঞ্চল, ভরসাযোগ্য আর স্বপ্নবাজ একজন। তার এই আকস্মিক নিখোঁজে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে পরিবার, শোকস্তব্ধ সহপাঠীরা। প্রতিদিন ভোর থেকে রাত—কেউ প্রার্থনায়, কেউ সমুদ্রের দিকেই তাকিয়ে থাকছে, যদি ফিরে আসে সেই প্রিয় মুখ।

এই মর্মান্তিক ঘটনা আবারও আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল প্রকৃতি যেমন মোহময়, তেমনি নির্মমও হতে পারে। সাগরের সৌন্দর্যের মোহে হারিয়ে গেলে এক মুহূর্তেই তা রূপ নিতে পারে ভয়াল ট্র্যাজেডিতে। নিরাপত্তার বিষয়টিকে অবহেলা করে কিংবা সাবধানতা ছাড়া আনন্দ করতে গিয়ে প্রাণ হারাতে হয় অকালে। অরিত্রের নিখোঁজ থাকা কেবল একটি পরিবারের নয়, বরং গোটা বিশ্ববিদ্যালয়, বন্ধুমহল এবং তরুণ প্রজন্মের জন্য এক অসহনীয় মানসিক যন্ত্রণা।