Image description

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩ জনে। এই ঘটনায় এখনও চিকিৎসাধীন রয়েছেন কমপক্ষে ৪০ জন, এর মধ্যে পাঁচ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। হতাহতদের বেশির ভাগই শিশু-কিশোর। 

এমন হৃদয়বিদারক ঘটনার মাঝেও কিছু বেঁচে ফেরার গল্প আলোড়ন তুলছে মানুষের মনে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তেমনই এক কিশোরের জীবন রক্ষা পাওয়ার গল্প শেয়ার করেছেন তার মা।

শুক্রবার (২৫ জুলাই) ‘Nayeem Wahra’ নামে এক ফেসবুক ব্যবহারকারীর টাইমলাইনে শেয়ার করা হয় ডা. শারমিন ইসলাম সাথী নামে এক মায়ের একটি আবেগঘন লেখা। তিনি লিখেছেন কীভাবে তার ছেলে সূর্য অল্পের জন্য এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবল থেকে বেঁচে ফেরেন।

ডা. সাথী লিখেছেন, ‘আমার ছেলে সূর্যের একটা ভিডিও দেখলাম একটি টিভি চ্যানেলে, যেখানে ওকে স্কুল ভবনের কার্নিশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। অনেকেই হয়তো ভিডিওটা দেখেছেন। কিন্তু সূর্য কীভাবে বেঁচে গেলো, সেই গল্পটা বলি।’

‘গত রবিবার (২০ জুলাই) স্কুলে না যাওয়ায় সোমবার সূর্য হোমওয়ার্ক না করেই ক্লাসে যায়। এ জন্য তাকে ডিটেনশন ক্লাসে যেতে বলা হয়—যেখানে নিয়মিত পড়ালেখায় পিছিয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত সময় ধরে পড়ানো হয়।’

‘ডিটেনশন ক্লাসে পাঠানোর সময় সূর্যের ক্লাস টিচার বাপ্পি স্যার পাঁচ জন শিক্ষার্থীকে ভবনের একেবারে কর্নারের দিকে থাকা একটি ক্লাসরুমে যেতে বলেন। সূর্যসহ তারা ওই কক্ষের দিকে রওনা দেয়। ঠিক সেই সময় তারা পেছন ফিরে দেখে, সূর্যের নিয়মিত ক্লাসরুমের সামনে ভয়াবহ আগুন জ্বলছে। চোখের সামনে একজন সহপাঠী বের হওয়ার চেষ্টায় মুহূর্তেই আগুনে পুড়ে যায়। আতঙ্কে সূর্যরা দ্রুত কর্নারের নির্ধারিত কক্ষে ঢুকে পড়ে।’

ডা. সাথীর ভাষ্য অনুযায়ী, ‘সেই রুমে আগুন প্রবেশ করতে না পারলেও ভেতরে তাপমাত্রা ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল। ধোঁয়ায় ভরে যাওয়া রুমে শ্বাস নিতে গিয়েই মনে হচ্ছিল শরীরের ভেতর পুড়ে যাচ্ছে। জানালার পাশে দাঁড়িয়ে শ্বাস নিতে চেষ্টা করছিল তারা। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে সূর্য রুম থেকে বেরিয়ে বারান্দায় আসে। তখন বাইরে থাকা কিছু শিক্ষার্থী তাকে হাত ইশারায় ডান দিকে যেতে বলে। সেদিকে তাকিয়ে সূর্য দেখতে পায়, গ্রিল কেটে বের হওয়ার একটি পথ তৈরি হয়েছে।’

‘সূর্য সেই পথ ধরে যাওয়ার আগে বন্ধুদের ডেকে আনে এবং তাদের আগে নামার সুযোগ করে দেয়। এরপর নিজেও নিরাপদে কার্নিশ ধরে নিচে নেমে আসে।’

শেষে, সন্তানের এমন সাহসিকতা ও মানবিক আচরণে গর্বিত হয়ে সূর্যের মা লেখেন— ‘আমি কখনও আমার ছেলেকে বলিনি, এ প্লাস পেতে হবে, ফার্স্ট হতে হবে। আমি শুধু চেয়েছি, আমার ছেলে যেন একজন মানবিক মানুষ হয়। আজ সেটা দেখে আমি সন্তুষ্ট।’

মাইলস্টোনের শিক্ষার্থী সূর্যকে মায়ের এমন আবেগঘন পোস্ট ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এই পোস্টে নিচে এই মা’র লেখাটি ইতোমধ্যেই অসংখ্য মানুষ অনুপ্রেরণার গল্প হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।

উল্লেখ্য, গত সোমবার (২১ জুলাই) রাজধানীর উত্তরা দিয়াবাড়ি এলাকার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের হায়দার আলী নাম একটি দোতলা ভবনে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। এতে সঙ্গে সঙ্গে বিমানটি বিস্ফোরিত হয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সৃষ্টি হয়। ঘটনাস্থল থেকে ফায়ার সার্ভিস ২০ জনের মরদেহ উদ্ধার করে। পরবর্তীতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও ১৩ জনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় স্কুলের প্রাইমারি ও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীসহ শিক্ষক, স্টাফ ও অভিভাবকরা হতাহতদের শিকার হন। এ দুর্ঘটনায় আহত অবস্থায় এখন বিভিন্ন হাসপাতালে ৪০ জন চিকিৎসাধীন রয়েছে। যাদের বেশিরভাগই শিশু।