Image description

বিবিসি’র সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে উত্তর কোরিয়ার সাবেক গোপন আইটি কর্মী ‘জিন-সু’ (নাম পরিবর্তিত) জানিয়েছেন, কীভাবে তিনি বহু বছর ধরে শত শত ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করে পশ্চিমা কোম্পানিতে রিমোট কাজ করতেন। এই গোপন কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য ছিল সরকারের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা।

জিন-সু জানিয়েছেন, তিনি প্রতি মাসে গড়ে ৫,০০০ ডলার আয় করতেন, যার প্রায় ৮৫% উত্তর কোরিয়ার সরকারের কাছে পাঠাতে হতো। এই প্রক্রিয়ায় অনেক কর্মী ইউরোপ ও আমেরিকায় একাধিক রিমোট চাকরি করতেন।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ২০২৪ সালের মার্চে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এই গোপন আইটি কর্মীদের মাধ্যমে প্রতি বছর উত্তর কোরিয়া ২৫০ থেকে ৬০০ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত আয় করছে।

জিন-সু প্রথমে নিজেকে চীনা নাগরিক হিসেবে পরিচয় দিতেন এবং হাঙ্গেরি, তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশের লোকদের পরিচয় ভাড়া নিতেন। পরবর্তীতে তিনি পশ্চিমা দেশগুলোর (বিশেষ করে যুক্তরাজ্য) নাগরিকদের পরিচয় ব্যবহার করে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি করতেন। অনেক সময় একটি কোম্পানিতে একাধিক উত্তর কোরিয়ার নাগরিক একসাথে চাকরি করতেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।

 

সাইবার সিকিউরিটি কোম্পানিগুলো বলছে, তারা অনেক প্রার্থীকে সন্দেহ করে উত্তর কোরিয়ার নাগরিক বলে। একাধিক সাক্ষাৎকারে দেখা গেছে, প্রার্থীরা এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিজের মুখ পাল্টে নিচ্ছে।

জিন-সু বলেন, “আমরা জানতাম এটি চুরির মতো, কিন্তু এটিই ছিল আমাদের বাস্তবতা।” তিনি আরও বলেন, “চীনে থাকার সময়, আমরা ঘর থেকে বের হতে পারতাম না, সবসময় বন্দির মতো থাকতে হতো।”

দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত ছিল জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। উত্তর কোরিয়া থেকে পালানোর পথ বিপজ্জনক এবং প্রায়শই চীন হয়ে যেতে হয়, যেখানে সীমান্তজুড়ে কড়া নজরদারি ও পুলিশের তৎপরতা থাকে। যারা ধরা পড়ে, তাদেরকে ফেরত পাঠানো হলে ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হতে হয়। 

এই আইটি কর্মী বর্তমানে পশ্চিমা একটি দেশে আইনিভাবে বসবাস করছেন এবং একজন স্বীকৃত প্রযুক্তিপেশাজীবী হিসেবে কাজ করছেন। যদিও বর্তমানে তার উপার্জন কম, তবুও তিনি তার উপার্জিত অর্থের প্রতিটি পয়সা নিজের জন্য ব্যবহার করতে পারেন। সবচেয়ে বড় কথা, এখন তিনি কথা বলতে পারেন স্বাধীনভাবে, ইচ্ছেমতো চলাফেরা করতে পারেন এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে নিজে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।