Image description

আগামী ৫ আগস্ট ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানের এক বছর পুর্ণ হবে। জাতির ঐতিহাসিক দিবসটি পালনে অন্তর্বর্তী সরকার থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু ওই দিবসে বিশৃংখলা সৃষ্টির লক্ষ্যে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ বেপরোয়া হয়ে উঠছে। ওই দিন রাজপথের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার হুংকার দিচ্ছে। গোপালগগঞ্জে ব্যাপক সন্ত্রাসের পর থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হয়ে উঠেছে। নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের পলাতক সভাপতি সাদ্দাম হোসেন থেকে শুরু করে উপজেলা পর্যায়ের নেতারা প্রতিশোদের হুংকার দিচ্ছে। দলের সব স্তরের নেতাকর্মী এবং আওয়ামী লীগ অনুগত মিডিয়া কর্মীদের রাজপথ দখলে নেয়ার বার্তা দিচ্ছে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারণার পাশাপাশি যখন যেভাবে পারছে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতারা সাধারণ ছাত্রদের সঙ্গে মিশে গিয়ে বিভিন্ন আন্দোলনে ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালাচ্ছে। সম্প্রতি মাইলস্টোন স্কুল অ্যা- কলেজে বিমান দুর্ঘটনা ইস্যুতে ৬ দফা দাবিতে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিশে গিয়ে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা শিক্ষার্থীদের উষ্কানি দেয় এবং অরাচক পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করে। মূলত নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের উষ্কানিতে মাইলস্টোনে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ও সি আর আবরারকে দীর্ঘ ৯ ঘন্টা অবরোধ করে রাখা হয়। এদিকে একই দাবিতে সচিবালয়, আশপাশের গুলিস্তান, জিপিও, তোফখানা রোডে দিনভর তান্ডব চালানো হয়। সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিশে গিয়ে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের পান্ডারা আইন শৃংখলা বাহিনীর উপর চড়াও হয় এবং সচিবালয়ের গেইট টপকে ভিতরে প্রবেশ করে। সাধারণ ছাত্রদের সঙ্গে মিশে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টার প্রতিরোধে শিক্ষার্থীদের সংগঠন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) কোনো ভুমিকা রাখছে না। কেন তারা নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ঠেকাচ্ছে না তা রহস্যজনক।

এ নিয়েও সোশ্যাল মিডিয়ায় বিতর্ক চলছে। নেটিজেনদের অনেকেই বলছেন, পলাতক হাসিনার বিচারের দাবিতে সোচ্চার হলেও এনসিপি ছাত্রদের আন্দোলনে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডের তেমন প্রতিবাদ করছেন না। তারা নির্বাচন পেছানোর দাবি জায়েজ করতে দেশে ‘নির্বাচনের পরিবেশ নেই’ ক্ষেত্র দেখতে চায়। লন্ডন ঘোণার পর জামায়াত ও এনসিপির নেতারা অনেকদিন থেকে বলে আসছেন ‘নির্বাচনের পরিবেশ নেই।’ সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই অভিযোগ তুলছেন, রাজনৈতিক ফায়দা নেয়ার জন্যই এনসিপি নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিচ্ছে না। রাজনীতিতে প্রত্যবর্তনের লক্ষ্যে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ধ্বংসাত্মক কর্মকা- করলে এনসিপি ও জামায়াতের ‘নির্বাচনের পরিবেশ নেই’ যুক্তি জোড়ালো করে নির্বাচন পেছানোর দাবি করবেন। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগ যাতে ফিরে আসনে না পারে সে লক্ষ্যে বিএনপি, এনসিপি, জামায়াতসহ সকল দলকে একাট্ট থাকতে হবে। তা না হলে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ১৫ বছর ধরে লুটপাটের বিপুল পরিমান অর্থ খরচ করেই দেশের বিশৃংখলা সৃষ্টির চেষ্টা করতে পারে।

ক্ষমতাচ্যুত হাসিনা পালিয়ে দিল্লি যাওয়ার পর থেকে ভারত নানাভাবে বাংলাদেশে বিশৃংখলা সৃষ্টির চেস্টা করে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে টার্গেট করা হয় এবং জুডিশিয়াল ক্যু, সংখ্যালঘু নির্যাতন, আনছার বিদ্রোহ, গার্মেন্টেস সেক্টরে বিশৃংখলা এবং পাহাড়ে অশান্তির চেষ্টাসহ নানা অপকা- ঘটানোর চেষ্টা করে। আইন শৃংখলা বাহিনী, সেনাবাহিনী এবং রাজনৈতিক দলগুলো ঐকবদ্ধভাবে ভারতের সেই ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে। অতপর শেখ হাসিনা একের পর এক হুংকার দেন এবং নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ও পলাতক আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের রাজপথে নেমে জ্বালাও পোড়াও এমনকি অগ্নিসংযোগ হত্যাকা-ের নির্দেশনা দেন। তার নির্দেশে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগকে অরাজকতা সৃষ্টির প্রস্তুতি নিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারণা চালানো হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মতো স্পর্শকাতর ইস্যুগুলোকে ব্যবহার করে সরকারবিরোধী বড় ধরনের বিক্ষোভ সৃষ্টির চেষ্টা হচ্ছে। গত এক বছরে অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে ছাত্র, শিক্ষক, শ্রমিক, পেশাজীবীসহ বিভিন্ন গোষ্ঠীর আন্দোলনে এমন প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। অথচ এনসিপি হাসিনা ও আওয়ামী লীগের নেতাদের বিচার দাবিতে সোচ্চার হলেও সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশে গিয়ে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাদের তা-ব নিয়ে কোনো কথা বলছেন না।

গত ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে এনসিপির পূর্বঘোষিত পদযাত্রা কর্মসূচির আগে থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নানা উসকানিমূলক প্রচারণা শুরু হয়। এ সময় শেখ মজিবর রহমানের সমাধি ভেঙে ফেলা হতে পারে এমন প্রচারণা চালিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করা হয়। ধানম-ির ৩২ নম্বরের মতো টুঙ্গিপাড়ার মুজিবের কবর ভেঙ্গে ফেলা হবে গুজব ছড়িয়ে দেওয়া হয় ফেসবুকসহ সব সোশ্যাল মিডিয়ায়। এরই জের ধরে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ তলে তলে প্রস্তুতি নিয়ে এনসিপি নেতাকর্মীদের প্রতিহতের ঘোষণাও দেওয়া হয়। দুর্বৃত্তরা রাতারাতি অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ওঠে। অথচ এর বিপরীতে সরকারের প্রস্তুতি ছিল দুর্বল। নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন প্রায়ই ফেসবুকে লাইফে এসে হুংকার দিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘দখলদার বাহিনী’ অবিহিত করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবিতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগকে মাঠে নামার নির্দেশনা দিচ্ছে। সাদ্দামকে ফলো করে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের হাজার হাজার নেতানেত্রী সোশ্যাল মিডিয়ায় দেশে অরাজতা সৃষ্টির হুংকার দিচ্ছে। গোপালগঞ্জে এনসিপির নেতাদের উপর আক্রমন এবং পরবর্তীতে ভয়াবহ কা-ের পর নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ মাইলস্টোন কলেজে বিমান দুর্ঘটনা ইস্যুতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে মিশে অরাজকতা সৃষ্টির চেস্টা করে। মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজের নিহত ও আহত শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে আওয়ামী লীগের পক্ষে সরাসরি পোস্ট দিয়েছে এমন অনেকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। এমন চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল ও হয়েছে।

আন্দোলনকে কেন্দ্র করে তারা কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে ফায়দা নেওয়ার সুযোগ নেয়। মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে কৌশলে শেখ হাসিনা মাইলস্টোন স্কুলের বিল্ডিং নির্মাণের বিরুদ্ধে ছিলেন প্রচারণা চালানো হয়। একই দিন সচিবালয়ে তা-ব ঘটায় শিক্ষার্থীদের ছত্রছায়ায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ। নিষিদ্ধ এই সংগঠনের নেতাকর্মীরা পৈচাসিক হত্যাকন্ডসহ নানা অপরাধে সিদ্ধহস্ত। আগামী ৫ আগস্ট ঘিরে ব্যপক বিশৃংখলা এবং ভয়ঙ্কর অপরাধ কান্ড ঘটাতে পারে। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মী, আওয়ামী লীগের ভাড়াটে ইউটিউবার, কন্টেইন ক্রিয়েটর, ব্লগারদের কথাবার্তা, প্রচারণা দেখে সে আশঙ্কাই করছেন সাধারণ মানুষ। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, গণ-অভ্যুত্থানে চালানো পৈশাচিক বর্বরতা আড়াল করতেই পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নতুন কৌশলে মাঠে নেমেছে। অনলাইন প্ল্যাটফরমে ক্রমেই সোচ্চার হয়ে উঠছে পলাতক ফ্যাসিস্টের দোসররা। এমনকি আত্মগোপনে থাকা সাবেক মন্ত্রী-এমপিরাও সম্প্রতি গর্ত থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছেন। তাদের কেউ কেউ ঘটনার মনগড়া ব্যাখ্যা দিয়ে এক ধরনের সহানুভূতি পেতে চাইছেন। গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর, চলতি বছরের ২৬ মার্চ ঢাকা ঘেড়ায়ের ঘোষণা দিয়ে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ সুবিধা করতে পারেনি। তখন জুলাই বিপ্লবের সকল রাজনৈতিক শক্তি ঐকবদ্ধ ছিল। কিন্তু এখন জুলাইয়ের অভ্যুত্থানে অংশ নেয়া এনসিপি, বিএনপি, জামায়াতের মধ্যে বিভেদ চলছে। এ সুযোগ নিতে পারে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ।