Image description
অনুমোদনের অপেক্ষায় ঢাকা-থ সিরিজের তিন হাজার সিএনজি অটোরিকশা অবৈধভাবে চলছে প্রায় ২৫ হাজার সিএনজি ১৪ লাখ অবৈধ ব্যাটারি রিকশা, উচ্ছেদে উদ্যোগ নেই নতুন করে যুক্ত হচ্ছে এক লাখ ই-রিকশা

ঢাকায় অবৈধ সিএনজি অটোরিকশা চলছে প্রায় ২৫ হাজার। এর সাথে বৈধ ১৫ হাজার সিএনজি অটোরিকশার সংখ্যা যোগ করলে হয় প্রায় ৪০ হাজার। তারপরেও ঢাকার বাইরের আরও তিন হাজার সিএনজি অটোরিকশাকে নতুন করে বৈধতা দিতে যাচ্ছে সরকার। ১৪ লাখ অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশা, আর ৪০ হাজার সিএনজি মিলে পরিবহন সেক্টরে এক বিশৃঙ্খল অবস্থা দীর্ঘদিন ধরে চলমান। এর সাথে তিন হাজার সিএনজি অটোরিকশা ও এক লাখ ই-রিকশা যোগ হলে পরিবহন সেক্টরে ভয়াবহ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। বাস মালিকরা অতিরিক্ত ট্যাক্স, বাণিজ্যিক যানবাহনের আয়ুষ্কাল নিয়ে জটিলতার জন্য ব্যবসায় লোকসানের কারণে নতুন বাস প্রতিস্থাপনে সাহস করছেন না। এতে করে যাত্রীসেবার মান উন্নত হওয়া তো দূরে থাক, দিন দিন অবনতি হচ্ছে। দুর্ঘটনা, যানজট, বিশৃঙ্খলা, দুর্ভোগ ঢাকাবাসীর এখন নিত্য সঙ্গী। পরিবহন বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকার রাস্তার ধারণ ক্ষমতার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি যানবাহন চলাচল করছে। এগুলো কমানো প্রয়োজন। বিশেষ করে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা এবং ঢাকার বাইরের ও প্রাইভেট সিএনজি অটোরিকশা চলাচল বন্ধ করা জরুরি। সেখানে নতুন করে ঢাকা জেলার তিন হাজার সিএনজি অটোরিকশাকে নতুন করে ঢাকায় চলাচলের অনুমোদন দিলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে। যানজট বাড়বে, বিশৃঙ্খলা বাড়বে, বাড়বে দুর্ঘটনাও।

ঢাকা সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হানিফ খোকন বলেন, ঢাকার বাইরের ও প্রাইভেট ২৫ হাজার অটোরিকশার মধ্যে তিন হাজার সিএনজিকে নতুন করে চলাচলের অনুমোদন দিলে অন্যরা বসে থাকবে না। তারাও আন্দোলন করবে, অবরোধ করবে। তাতে একটা অস্থির পরিবেশের সৃষ্টি হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) এক সাম্প্রতিক জরিপে বলা হয়েছে, রাজধানী ঢাকায় বর্তমানে চলা প্রায় ২৫ হাজার সিএনজিচালিত অটোরিকশার মধ্যে অন্তত পাঁচ হাজারই অবৈধ। বৈধ রেজিস্ট্রেশন, রুট পারমিটসহ দরকারি কাগজপত্র ছাড়াই এগুলো চলছে। এই প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি ডিটিসিএতে এক সভায় রাজধানীতে বৈধ সিএনজিচালিত অটোরিকশার সংখ্যা বাড়ানো এবং অবৈধভাবে চলাচলকারী অটোরিকশা অপসারণে কঠোর ব্যবস্থার প্রস্তাব দেওয়া হয়। অথচ বাস্তবতা হলো, ঢাকার বৈধ প্রায় ১৫ হাজার সিএনজি অটোরিকশার বাইরে ঢাকার আশপাশের জেলার অতিরিক্ত আরও প্রায় ২৫ হাজার অবৈধ সিএনজি অটোরিকশা চলাচল করছে। এর মধ্যে- ঢাকা জেলার আট হাজার, প্রাইভেট সিএনজি পাঁচ হাজার, গাজীপুর জেলার পাঁচ হাজার, নারায়ণগঞ্জের ছয় হাজার, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, নরসিংদী ও সিলেট জেলার অন্ততঃ এক হাজার অবৈধ সিএনজি অটোরিকশা পুলিশকে মাসোহারা দিয়ে ঢাকায় চলাচল করছে।

ডিটিসিএ সূত্র বলছে, বৈধ অনুমোদন ছাড়া অতিরিক্ত অটোরিকশা চলাচল করায় সরকার আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ছাড়াও সড়কে যাত্রীদের নিরাপত্তা ও পরিবহন শৃঙ্খলা বিঘিœত হচ্ছে। এ পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য গত ১৮ জুন ডিটিসিএতে ঢাকা মহানগরীতে চলাচলরত সিএনজি/পেট্রলচালিত ফোর-স্ট্রোক অটোরিকশার সংখ্যা পুনর্বিবেচনার বিষয়ে সভা হয়। সভায় প্রয়োজনের নিরিখে রাজধানীতে বৈধ অটোরিকশার সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়ে অভিমত আসে। পাশাপাশি বলা হয়, অন্য জেলার নিবন্ধিত অটোরিকশাসহ অবৈধভাবে চলা অটোরিকশা অপসারণে ডিএমপিকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

নতুন করে ঢাকা-থ সিরিজের তিন হাজার সিএনজিকে চলাচলের অনুমতি দিলে ঢাকার বাইরের সিএনজি অটোরিকশার অন্যান্য সংগঠনসহ প্রাইভেট সিএনজি মালিক কল্যাণ সমিতি আন্দোলনে নামবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ঢাকা মহানগর সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হানিফ খোকন বলেন, নতুন করে ঢাকা জেলার সিএনজি ঢাকা মেট্রো এলাকায় চলাচলের অনুমতি দিলে অন্যান্য সংগঠনগুলো ধরেই নিবে আন্দোলন করলেই অনুমোদন পাওয়া যাবে। এতে করে তারাও একই দাবিতে রাস্তায় নামবে, অবরোধ করবে। তাদের সাথে সরকারবিরোধীরা যোগ দিয়ে সরকারকে বিব্রত করতে পরিস্থিতিকে অস্থির করে তোলার চেষ্টা করবে। সুতরাং আমি মনে করি, এই মুহূর্তে সরকারের এ ধরনের আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত না নেয়াই উচিত হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অবৈধ সিএনজিচালিত অটোরিকশাগুলোর বেশির ভাগ অন্য জেলার; বিশেষ করে গ্রামাঞ্চল থেকে ঢাকায় এনে চালানো হচ্ছে। এসবের অনেকগুলোর রেজিস্ট্রেশন মেয়াদোত্তীর্ণ। অনেক চালকের বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্সও নেই। ফলে এদের নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। এগুলো রাজধানী শহরে সড়ক দুর্ঘটনা ও যানজট বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পরিবহন বিশেষজ্ঞ এবং বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. শামসুল হক বলেন, রাজধানী ঢাকার মতো একটি জনবহুল শহরে রেজিস্ট্রেশনহীন অটোরিকশার চলাচল শুধু বেআইনিই নয়, এটা নগর ব্যবস্থাপনার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। বিআরটিএ দায়িত্বশীল না হলে এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার তদারকি জোরদার না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।