Image description
আপাতত এ সিদ্ধান্ত থেকে সরছে না ট্রাম্প প্রশাসন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়িয়ে কমানো হবে বাণিজ্য ঘাটতি। মূল নেগোসিয়েশন হবে নন ডিসক্লোজার চুক্তির মাধ্যমে। আলোচনায় স্থান পাবে টিকফা ও জিএসপি প্লাস ইস্যুও

বাংলাদেশি পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ৩৫ শতাংশ শুল্কারোপের সিদ্ধান্তে এখনো অনড় অবস্থানে ট্রাম্প প্রশাসন। তৃতীয় দফা আলোচনার জন্য বাংলাদেশকে এখনো শিডিউল দেয়নি যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য দপ্তর ইউএসটিআর। তবে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ গতকাল সাংবাদিকদের বলেছেন, ১ আগস্টের আগেই বাণিজ্য উপদেষ্টার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল ওয়াশিংটনে যাবে আলোচনার জন্য।

এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য দপ্তরের (ইউএসটিআর) ঘোষিত বাংলাদেশের জন্য নতুন শুল্ক হার আসছে ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হতে যাচ্ছে। নতুন এই শুল্ক হারের তালিকায় থাকা অন্য অনেক দেশই নিজেদের মতো করে নেগোসিয়েশন করছে। এমনকি এই তালিকার ১৪টি দেশের মধ্যে জাপান ও কোরিয়াও এ আলোচনায় বেশ এগিয়েছে। তবে বাংলাদেশের ব্যাপারে ট্রাম্প প্রশাসনের আপাতত এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। এজন্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়িয়ে কমানো হবে বাণিজ্য ঘাটতি। মূল নেগোসিয়েশন হবে নন ডিসক্লোজার চুক্তির মাধ্যমে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, গতকালও এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা ও বাণিজ্য সচিব। দেশটির সঙ্গে যেসব চুক্তি করা হবে সেগুলোর খসড়ার ওপর আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত নেওয়ার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। এটি উপদেষ্টা পরিষদের সভায় অনুমোদন দেওয়া হবে। তার আগে একটি অবস্থানপত্র পাঠানো হচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইউএসটিআর থেকে তৃতীয় দফায় আলোচনার জন্য শিডিউল দেওয়া হবে। সেই শিডিউল অনুযায়ী ঢাকা থেকে একটি প্রতিনিধিদল যুক্তরাষ্ট্রে যাবেন।

জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার চাপ দিচ্ছে ইউএসটিআর। এজন্য বাংলাদেশও দেশটি থেকে আমদানি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরই মধ্যে ৭ লাখ টন গম আমদানির বিষয়ে একটি এমওইউ স্বাক্ষর করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও বিভিন্ন রকম কৃষি পণ্য, তেলবিজ, তুলা, বোয়িংয়ের উড়োজাহাজ, বিভিন্ন সামরিক সরঞ্জাম, মেডিকেল ইক্যুইপমেন্ট, তরলীকৃত গ্যাস (এলএনজি) আমদানির পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এদিকে দেশটির সঙ্গে শুধু এই রেসিপ্রোক্যাল ট্যারিফ বা পাল্টা শুল্কের বিষয়ই নয় এর সঙ্গে টিকফা চুক্তি, জিএসপি প্লাস সুবিধা পাওয়া সংক্রান্ত চুক্তির বিষয়ে আলোচনা করতে চায় বাংলাদেশ। আর যুক্তরাষ্ট্র চায় বাণিজ্য ও আন্তআঞ্চলিক নিরাপত্তা ইস্যুতে আপাতত নন ডিসক্লোজার চুক্তি। এসব বিষয়ে একমত হতে না পারলে শুল্ক প্রত্যাহারের সম্ভাবনা নেই। ননডিক্লোজার চুক্তির বিষয়ে বাণিজ্য সচিব মাহাবুবুর রহমান বলেন, আমরা যা করছি সবই ডব্লিউটিও কনভেশন মেনেই করা হচ্ছে। এদিকে ইউএসটিআর মনে করে বাংলাদেশের সরকারি কেনাকাটায় বিপুল পরিমাণ ঘুষ-দুর্নীতি ও দরপত্র প্রক্রিয়ায় অস্বচ্ছতার অভিযোগ রয়েছে। যার কারণে, যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলো সরকারি দরপত্রে অংশ নিতে পারছে না। ফলে সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলো বাংলাদেশের অনেক প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অথচ দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য অনুযায়ী এখানে দেশটির ভূমিকা রাখার মতো যথেষ্ট থাকার কথা।

জানা গেছে, তৃতীয় দফায় আলোচনার সময় যেসব ইস্যু বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তুলে ধরা হবে। সেগুলোর মধ্যে অধিক গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে- এখন থেকে সরকারি কেনাকাটায় যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোকে অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস সংশোধন করার পাশাপাশি জি-টু-জি ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়ানো হবে। বাংলাদেশে ব্যবসা করছে যুক্তরাষ্ট্রের মালিকানাধীন এমন কোম্পানিগুলোর মুনাফা, রাজস্ব ও মূলধন দ্রুত ছাড় করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনবিআরকে সব ধরনের সিস্টেম আরও সহজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে মার্কিন কোম্পানিগুলো কোনো বাধার সম্মুখীন হলে কেস-টু-কেস ভিত্তিতে সেগুলো অগ্রাধিকারভিত্তিতে সমাধান করা হবে বলে যুক্তরাষ্ট্রকে জানানো হবে।