
মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহের প্রভাবে দেশজুড়ে ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ঠ মানুষ। গত কয়েকদিন ধরেই এ অবস্থা বিরাজ করছে সারা দেশে। এরমধ্যেই শুক্রবার থেকে দেশজুড়ে টানা বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আহওয়া অধিদপ্তর।
গত কয়েকদিনে বৃষ্টি কমে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় এবং বাতাসে আদ্রতার পরিমাণ বেশি থাকায় দেশজুড়ে ভ্যাপসা গরম পড়েছে। বিশেষ করে বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহর ঢাকায় অসহনীয় ভ্যাপসা গরমে নগরবাসী অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।
বুধবার কারওয়ান বাজারের ফুটপাতের ব্যবসায়ী মোস্তফা বলেন, দিনের বেলায় রোদের তাপে শরীর যেন পুড়ে যাচ্ছে। রাতেও অসহনীয় গরমে ঘুমাতে পারি না।
রত্মা নামের এক নারী বলেন, কয়েকদিনে অসহনীয় গরম পড়েছে। এতে আমার বাচ্চারাও অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, বুধবারও ঢাকা, রাজশাহী, রংপুর, সিলেট ও খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যায়। এদিন দেশের কুড়িগ্রামের রাজারহাটে সর্বোচ্চ ৩৮ এবং রাজধানী ঢাকায় ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।
বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় আগের ২৪ ঘণ্টায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের ৫১টি সেন্টার এলাকায় তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের পরিমাণ রেকর্ড ও পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, বেশিরভাগ এলাকায় ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস কিংবা এর উপরে ছিল তাপমাত্রা। দেশের অধিকাংশ এলাকায় বৃষ্টি হয়নি, আর যেসব এলাকায় বৃষ্টি হয়েছে তা বর্ষাকাল হিসেবে পরিমাণে খুবই কম হয়েছে। এরমধ্যে সর্বোচ্চ রাঙ্গামাটিতে ৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়।
এ অবস্থা বৃহস্পতিবার নাগাদ অব্যাহত থাকতে পারে। বৃহস্পতিবার সকালের দিকে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এর প্রভাবে তাপমাত্রা কমে আসতে পারে।
আবহাওয়াবিদ একেএম নাজমুল হক বলেন, গত কয়েকদিন ধরেই দেশের বেশ কয়েকটি জেলার ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বইছে। বৃহস্পতিবার সকালের দিকেই সাগরে একটি লঘুচাপ তৈরি হতে পারে। এরপর থেকে এ অবস্থার উন্নতি হতে পারে। এরপ্রভাবে শুক্রবার থেকে সারাদেশেই বৃষ্টি হবে, তবে উপকূলীয় এলাকায় বেশি বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। টানা বৃষ্টি ২৮ জুলাই পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।
বুধবার সন্ধ্যায় আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়, মৌসুমী বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ রাজস্থান, উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারী অবস্থায় রয়েছে। পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে উত্তর বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে।
বৃহস্পতিবার রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি কিংবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে সারাদেশের কোথাও কোথাও মাঝারী ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।
এদিকে বুধবার বাংলাদেশ ওয়েদার অবজারভেশন টিম (বিডব্লিউওটি) জানিয়েছে, উত্তর-মধ্য বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হতে পারে।
প্রসঙ্গত, তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত থাকলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলা হয়। তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তা মাঝারি তাপপ্রবাহ। তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তীব্র তাপপ্রবাহ ধরা হয়। তাপমাত্রা ৪২-এর বেশি হলে তা অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বলে গণ্য হয়।
অন্যদিকে ২৪ ঘণ্টায় ১ থেকে ১০ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তা হালকা, ১১ থেকে ২২ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে মাঝারি, ২৩ থেকে ৪৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে মাঝারি ধরনের ভারি, ৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তা ভারি এবং ৮৮ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি রেকর্ড হলে সেটিকে বলা হয়ে থাকে অতিভারি বৃষ্টিপাত।