Image description

উত্তরার মাইলস্টোন স্কুলে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার পর বন্ধুর খোঁজে উদ্বিগ্ন দুই কিশোর নাবিল ও আদিব। তাদের চোখে-মুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট।

হাজার মানুষের ভিড়ে তারা খুঁজছে বন্ধু ফুয়াদের মুখ।  

বুধবার (২৩ জুলাই) উত্তরা মাইলস্টোন স্কুলে গিয়ে এমন দৃশ্যের দেখা মিলল। সকাল থেকেই প্রশাসন থেকে প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত করা হয়েছে। ভেতরে চলছে স্কুল কর্তৃপক্ষের মিটিং। শিক্ষক, কর্মকর্তাদের গাড়ি আসছে, কখনোবা বের হচ্ছে। তবে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত, আহতদের স্বজন, উৎসুক জনতা কাউকে আর আগের মতো ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমকর্মীরাও বাইরে অপেক্ষমাণ।

বিমানটা যেখানে পড়ছে, সেখানে আমরা দাঁড়িয়ে ছিলাম। খেলা ছিল। ইংলিশ ভার্সনের সঙ্গে ফাইট দিতে গিয়েছিলাম। একটা ফ্রেন্ড ডাক দিছে, আইসা পরছি। একটু সামনে গেছি। এক মিনিট বা ৫০ সেকেন্ড হবে। তখনই বিকট আওয়াজে কিছু একটা পড়ছে। পেছনে তাকিয়ে দেখি ধোঁয়া, আগুন। তখন বন্ধুরা সব পাশেই ছিল। এভাবেই নিজের চোখের সামনে ঘটে যাওয়ার বর্ণনা দিলেন মারুফ সরকার আদিব। বলেন, চোখের সামনে দেখলাম ফুয়াদের হাত, এখানে সেখানে রক্ত।

মাইলস্টোনের বাংলা ভার্সনের অষ্টম শ্রেণির এ শিক্ষার্থী বলেন, শানকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না। তবে পরে জানতে পেরেছি, ও বার্ন ইনস্টিটিউটে আছে।

ফুয়াদের খোঁজ এখনো মেলেনি। কোথাও নেই। কেউ বলতে পারছে না। ওর বাবা-মার নাম, নম্বরও জানি না। স্যারদের সঙ্গেও কথা বলতে পারছি না। ওর খবর কেউ বলতে পারেনি।

আদিব তবু কিছু বলতে পারছে। রেজোয়ান আমিন নাবিলের মুখ থেকে যেন কথাই বের হচ্ছিল না। বন্ধুর খোঁজ না মেলার স্পষ্ট ছাপ তার চোখে-মুখে। বললেন, কেউ যদি একটু খোঁজ দিতে পারত! সেদিন আমাদের সঙ্গেই ছিল ফুয়াদ। ও তো হোস্টেলে থাকত। তাই বাবা-মা কারো সঙ্গে যোগাযোগ নেই আমাদের। পরিবার সম্পর্কে তেমন কিছু জানিও না।  

দিয়াবাড়ীর আকাশে আজ হালকা রোদ। ভ্যাপসা গরম। নাবিলের চোখে ঘাম, না অশ্রু-ঠিক বোঝা গেল না।

সোমবার (২১ জুলাই) বিমানবাহিনীর ফাইটার প্লেন, যেটা প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে ব্যবহার হচ্ছিল, হঠাৎ এসে আছড়ে পড়ে মাইলস্টোনের শ্রেণিকক্ষে। মুহূর্তেই বিস্ফোরণে সব তছনছ হয়ে যায়। এ ঘটনায় মারা যান ৩১ জন। আহত হন ১৬৪ জন, যারা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অনেকের শরীর ৯০ শতাংশের বেশি পুড়ে গেছে।

এ ঘটনায় মঙ্গলবার পালিত হয়েছে রাষ্ট্রীয় শোক। স্থগিত করা হয়েছে দুটি বিষয়ের এইচএসসি পরীক্ষা।

এদিকে স্কুলে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনা, শিক্ষাখাতে নানা অব্যবস্থাপনা এবং আইন ও শিক্ষা উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা।

এর আগে নিহতদের সঠিক নাম ও তথ্য প্রকাশ, আহতদের সম্পূর্ণ ও নির্ভুল তালিকা প্রকাশ, শিক্ষকদের গায়ে সেনাবাহিনীর সদস্যদের হাত তোলার ঘটনায় নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়া, নিহত প্রতিটি শিক্ষার্থীর পরিবারকে বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া, বিমানবাহিনীর ব্যবহৃত ঝুঁকিপূর্ণ ও পুরনো প্লেনগুলো বাতিল করে আধুনিক প্লেন চালু করা ও বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ পদ্ধতি ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিবর্তন করে আরও মানবিক ও নিরাপদ ব্যবস্থা চালু করার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিলেন মাইলস্টোনের শিক্ষার্থীরা। তবে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে উপদেষ্টারা আলোচনার পর অন্তর্বর্তী সরকার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, শিক্ষার্থীদের সবগুলো দাবিই যৌক্তিক।

আলোচনা শেষে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের বলেন, মাইলস্টোন স্কুলে একটি তথ্যকেন্দ্র খোলা হয়েছে। এতে নিহত ও আহতদের তথ্য থাকছে। কেউ নিখোঁজ থাকলে সে তথ্যও থাকছে। এখান থেকে তথ্য নিয়মিত হালনাগাদ করা হচ্ছে।  

নিহত ও আহতদের পরিবারের ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন এবং ট্রমা ম্যানেজমেন্ট সাপোর্টের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।  

আসিফ নজরুল আরও বলেন, জনগণের ভিড় নিয়ন্ত্রণের সময় সেনাবাহিনীর কর্তব্য পালনকালে কয়েকজন সেনাসদস্য কর্তৃক শিক্ষার্থীদের ওপর মারধরের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের পক্ষ থেকে দুঃখপ্রকাশ করা হয়েছে এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সেনা কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।

জনবহুল এলাকায় প্রশিক্ষণ বিমান না চালানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য বিমানবাহিনীকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও দেওয়া হবে বলে উল্লেখ করেন আইন উপদেষ্টা।