
ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের পর থেকে এখনো খোঁজ মিলছে না আফসানা আক্তার প্রিয়ার। তিনি প্রতিষ্ঠানটির বাংলা মিডিয়ামের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী আফসান ওহির মা। বিমান বিধ্বস্তের আগে ছেলেকে আনতে স্কুলে গিয়েছিলেন তিনি। ছেলের স্কুলব্যাগ হাতে নিয়ে স্কুল ভবন থেকে বের হচ্ছিলেন আফসানা। একপর্যায়ে মা’কে দাঁড় করে রেখে প্রতিষ্ঠানটির তৃতীয়তলায় ফেলে আসা খাতা আনতে যায় শিশুটি। মুহূর্তেই বীভৎস এক ঘটনা ঘটে যায় সেখানে। বিমান বিধ্বস্তের পর শিশুটি বেঁচে ফিরলেও তার মা এখনো নিখোঁজ। আফসানার পরিবার এখনো তার খোঁজ পায়নি। পরিবারের সদস্যরা ছুটছেন ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতাল-মর্গে।
গতকালও জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আফসানার খোঁজে এসেছিল তার পরিবার। তাদের চোখে মুখে ছিল হতাশার ছাপ। একবার দৌড়ে যাচ্ছেন হাসপাতালটির জরুরি বিভাগে। আবার ছুটছেন মর্গে। কখনো ছুটছেন ধ্বংসস্তূপে। কিন্তু কোথাও মিলছে না তার সন্ধান। শিক্ষার্থী ওহির চাচা হাসিবুল মানবজমিনকে বলেন, বিমান দুর্ঘটনার আগে আমার ভাতিজাকে তার আম্মু স্কুলে আনতে গিয়েছিল। তখন সে বই-ব্যাগ যা ছিল তার আম্মুর কাছে দিয়ে দেয়। ভুলক্রমে তার একটা খাতা ভিতরে রয়ে যায়। তখন সে আর তার এক বন্ধু মিলে ভবনের তিন তলায় যায় খাতাটি আনতে। পরক্ষণেই বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা ঘটে। আমাদের কাছে ওহির দেয়া তথ্য অনুযায়ী, যেখানে তার মা দাঁড়িয়ে ছিলেন তার আশপাশে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। ঘটনার পর থেকে পাগলের মতো খুঁজে চলেছি এখনো ভাবীর কোনো খবর জানতে পারছি না।
তিনি বলেন, ঘটনার দিন স্কুল ছুটির আগে বাচ্চাকে আনতে যায়। এটা তার প্রতিদিনের রুটিন ছিল। দিয়াবাড়ী ফায়ার স্টেশনের সামনে বাসা। আফসান ওহি তাদের একমাত্র ছেলে। আমাদের গ্রামের বাড়ি গাজীপুরে। আমার ভাই ব্যবসা করেন। তিনি সেই থেকে ভাবীকে পাগলের মতো খুঁজে চলেছেন। বিধ্বস্তের ঘটনার পর ওহিকে তিনতলায় একটা সেভ রুমে নিয়ে যান শিক্ষকরা। ওর বাবা ওহাব তখন স্কুলের আশপাশে ছিলেন বিকট শব্দ শুনতে পেয়ে দৌড়ে স্কুলের দিকে যান। ওহি সম্পূর্ণ সুস্থ আছে কিন্তু মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। মা’কে দেখতে না পেয়ে সারাক্ষণ কাঁদছে। ওর মা স্বপ্ন দেখতো ছেলে একদিন অনেক বড় হবে। ওহি ওর মা’কে স্বপ্নের কথা জানাতো সে ভবিষ্যতে পাইলট হবে। খুব মেধাবী স্টুডেন্ট আমার ভাতিজা। সে এই ট্রমা ভুলবে কী করে। ভাবীর খোঁজ না পেয়ে আমরা উত্তরায় যতগুলো হাসপাতাল আছে সবগুলোতে খুঁজেছি। এরপর ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিট থেকে মর্গে কোথাও খুঁজতে বাকি রাখিনি। এখনো খুঁজছি পাগলের মতো। কোথায় মিলছে না তার সন্ধান। ওহি ওর খালামণি ও নানুর সঙ্গে আছে। এই দৃশ্য তার বার বার মনে পড়ছে আর মায়ের জন্য হাউমাউ করে কেঁদেই যাচ্ছে। সে তো সব বুঝতে পারে। মর্গে যে মরদেহগুলো রাখা আছে সেগুলোর কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। অনেক বীভৎস। আমরা এখনো আশায় বুক বেঁধে খুঁজে ফিরছি।