Image description

আওয়ামী লীগ আমলের টানা ১৫ বছরে দেশে ভোট না থাকায় ভোটকেন্দ্র ও কক্ষগুলোর দিকে খেয়াল রাখেনি সাবেক তিনটি নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর ফলে দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত ৪৫ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবস্থা এখন নাজুক। তাই আগামী ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংস্কারে বড় অঙ্কের চাহিদার প্রস্তাব করা হয়েছে।

এর আগে কেন্দ্রের অগ্রগতি জানতে গত ১৬ জুন সংশ্লিষ্ট কার্যালয়গুলোতে চিঠি পাঠায় ইসি। এ চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে মাঠপর্যায় থেকে জেলাওয়ারি খরচের খাতওয়ারি চাহিদা আসতে শুরু করেছে।

সূত্রমতে, দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থাও জরাজীর্ণ। ইসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তৈরি প্রতিবেদনে সেটি উঠে এসেছে। প্রতিবেদনের তথ্যমতে, শুধু একটি জেলায় ভোটকেন্দ্রের উপযোগী পরিবেশ তৈরির জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কারে লাগবে তিন কোটি টাকা। শুধু একটি জেলা নয়, প্রতিটি জেলায় এ বরাদ্দের কাছাকাছি প্রস্তাব করা হয়েছে। এ খাতে আগামী অর্থবছরে রাষ্ট্রের গচ্চা যাবে প্রায় দেড়শ কোটি টাকার উপরে। ইসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, নির্বাচনে সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে ভোটকেন্দ্র হিসেবে কাজে লাগানো হয়। প্রতি পাঁচ বছর পর সংসদ নির্বাচনের আগে এগুলো নির্বাচনের উপযোগী করতে সংস্কারের সুপারিশ করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ভোটকেন্দ্রগুলোর সার্বিক পরিস্থিতি জানতে গত ১৬ জুন ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত স্থাপনাগুলোর সংস্কার ও মেরামতসংক্রান্ত অগ্রগতির তথ্য পাঠানোর জন্য সব জেলা নির্বাচন অফিসারকে চিঠি দেওয়া হয়।

ওই নির্দেশনায় গত ১৭ জুলাইয়ের মধ্যে ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়—এমন স্থাপনাগুলোর তথ্য সংগ্রহ করে পাঠানোর জন্যও বলা হয়েছিল। এর আলোকে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, জেলা শিক্ষা অফিসার ও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের সমন্বয়ে তালিকা প্রণয়ন করা হয়। ভোটকেন্দ্র ও কক্ষ হিসেবে ব্যবহৃত প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার করবে স্ব স্ব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ।

প্রণীত তালিকা পর্যালোচনায় পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, গাইবান্ধা জেলায় ৩২টি প্রতিষ্ঠান সংস্কারের জন্য তিন কোটি টাকার চাহিদা দেওয়া হয়েছে। কোনো একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংস্কার ও মেরামতে ১৫ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছে, আবার কোনোটিতে ১০ লাখ। তবে দুই লাখের নিচে কোনো চাহিদা দেওয়া হয়নি।

এর মধ্যে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সুন্দইল দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের পাকা ভবনের সীমানা প্রাচীর নির্মাণে ১৫ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছে। একইভাবে, সুন্দরগঞ্জের সুন্দরগঞ্জ আবদুল মজিদ মণ্ডল উচ্চ বিদ্যালয়ের পাকা ভবনের বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ ও কক্ষগুলোর সংস্কারে ১০ লাখ টাকার চাহিদা দেওয়া হয়েছে।

বিভিন্ন জেলা থেকে দেওয়া চাহিদার আলোকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংস্কার ও মেরামতের জন্য ইতোমধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ; স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়; শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ; প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবকে এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর ও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলীকে অবকাঠামো উন্নয়নে নির্দেশনা দিয়েছে ইসি।

এদিকে, ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ‘ভোটকেন্দ্র স্থাপন ও ব্যবস্থাপনা নীতিমালা, ২০২৫’ জারি করেছে ইসি। সেখানে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের কর্তৃত্ব সংস্থাটির হাতে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। প্রণীত এই নীতিমালায় ডিসি ও এসপিদের ভোটকেন্দ্রের সমন্বয় থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিগত হাবিবুল আউয়াল কমিশন ইসির কর্মকর্তাদের সরিয়ে ডিসি ও এসপিদের অন্তর্ভুক্ত করেছিল।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র ছিল প্রায় ৪৪ হাজার, একাদশ সংসদে ৪০ হাজার, দশমে ৩৭ হাজার ৭০৭টি ও নবম সংসদে ৩৫ হাজার ২৬৩টি। আগামী ত্রয়োদশ সংসদে ভোটকেন্দ্র বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫ হাজার।