
রাজধানী ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনাটি গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করেছে বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যম। সোমবার বিকেলে দুর্ঘটনার পর পরই হতাহতের খবর প্রকাশ হয় রয়টার্স, সিএনএন, বিবিসি, আল জাজিরা, ডয়চে ভেলে, এনডিটিভি, ডন, জিনহুয়ার মত সংবাদমাধ্যমগুলোতে।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের সংবাদের শিরোনাম ছিল "অ্যাট লিস্ট নাইন্টিন কিলড, স্কোরস ইনজুরড অ্যাজ বাংলাদেশ এয়ারফোর্স জেট ক্র্যাশেজ ইনটু কলেজ ক্যাম্পাস," অর্থাৎ 'কলেজ ক্যাম্পাসে' বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর বিমান আছড়ে পড়ে অন্তত ১৯ নিহত, অনেকে আহত। সংবাদের সাথে ছিল ঘটনার একটি ভিডিও। পরবর্তীতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২৭ এবং এর বেশিরভাগই শিশু, এমন একটি সংবাদ প্রকাশ করে সংস্থাটি। সর্বশেষ "কী করে একটি বাংলাদেশ বিমান ফাইটার জেট একটি স্কুল ক্যাম্পাসে আছড়ে পড়লো?" এমন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে তারা।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যমে সিএনএনের সংবাদের শিরোনাম ছিল, "ডিসরট স্টূডেন্টস ডিমান্ড আন্সারজ আফটার প্লেন ক্র্যাশ টার্নড বাংলাদেশ স্কুল ইনটু 'ডেথ ট্র্যাপ,'" অর্থাৎ, বিমান দুর্ঘটনায় বাংলাদেশের স্কুল 'মৃত্যুকূপে' পরিণত হওয়ার ঘটনায় উত্তর চান বিচলিত শিক্ষার্থীরা।
বাংলাদেশের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এর বরাত দিয়ে চীনের সংবাদমাধ্যম জিনহুয়া জানিয়েছে এই দুর্ঘটনায় রাষ্ট্রীয় শোক পালন করা হচ্ছে বাংলাদেশে, এবং মঙ্গলবার নাগাদ এই দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩১। তাদের সংবাদের শিরোনাম ছিল, "বাংলাদেশ অবজার্ভস মোর্নিং ডে আফটার জেট ক্র্যাশ কিলস থার্টি ওয়ান।"
যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যমে বিবিসিতে প্রত্যক্ষদর্শী এক শিক্ষার্থীর বয়ান প্রকাশ করা হয়েছে। চোখের সামনে বন্ধুর নিহত হওয়ার মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী ফারহান হাসানের সাথে। এ সংবাদের শিরোনাম ছিল, "'মাই ফ্রেন্ড ডাইড রাইট ইন ফ্রন্ট অব মি': স্টুডেন্ট ডেসক্রাইবস মোমেন্ট এয়ার ফোর্স জেট ক্র্যাশড ইনটু স্কুল।"
মধ্যপ্রাচ্যের কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাতেও উঠে এসেছে হৃদয়বিদারক এই ঘটনার চিত্র। তাদের শিরোনাম ছিল, "বাংলাদেশ এয়ার ফোর্স প্লেন ক্র্যাশেস ইনটু কলেজ ক্যাম্পাস, কিলিং অ্যাট লিস্ট থার্টি ওয়ান।" সংবাদটিতে বলা হয়, আহতদের বেশিরভাগেরই বয়স আট থেকে চৌদ্দের মাঝে।
"বাংলাদেশ: মেনি কিলড আফটার প্লেন ক্র্যাশেস ইনটু স্কুল" শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে জার্মানির সংবাদমাধ্যমে ডয়চে ভেলে। এতে বলা হয়, বিগত ৪০ বছরের মাঝে বাংলাদেশের সবচেয়ে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা ছিল এটি।
প্রতিবেশী দেশ ভারতের সংবাদমাধ্যমগুলোতেও এসেছে মাইলস্টোন স্কুলে বিমান বিধ্বস্তের সংবাদ। এনডিটিভির সংবাদের শিরোনাম ছিল, "বাংলাদেশ স্কুল জেট ক্র্যাশ ডেথ কাউন্ট রাইজেস টু টুয়েন্টি সেভেন, ডজেনস স্টিল ক্রিটিক্যাল।" সংবাদে বলা হয়, বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ায় কেঁপে ওঠে স্কুল ভবনটি, এর পর পরই একটি বড় বিস্ফোরণ ঘটে বলে জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
"অ্যাট লিস্ট টুয়েন্টি সেভেন ডেড, মোস্টলি চিলড্রেন, ইন বাংলাদেশ এয়ার ফোর্স জেট ক্র্যাশ," শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম 'ডন।' বিমানের যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটে, বলা হয়েছে তাদের সংবাদে।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, সোমবার (২১ জুলাই) দুপুর ১টা ৬ মিনিটে রাজধানীর কুর্মিটোলার বিমানবাহিনী ঘাঁটি এ কে খন্দকার থেকে উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পর বিমানটি স্কুল ভবনের ওপর এসে বিধ্বস্ত হয়। দুপুর ১টা ১৮ মিনিটে এই খবর পায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স।
পরে জানা যায়, বিমানবাহিনীর এফটি-৭ বিজিআই বিমানটি মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ চত্বরের একটি দোতলা ভবনে বিধ্বস্ত হয়েছে। প্রশিক্ষণের কাজে ব্যবহৃত চীনের তৈরি এই যুদ্ধবিমান যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে উত্তরার ওই স্কুল ভবনে আছড়ে পড়েছিল।
বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পরপরই আগুন ধরে যায় স্কুল ভবনে। তখন দগ্ধ শিশুদের আর্তনাদ, সন্তানের খোঁজে পাগলপ্রায় মা-বাবা ও স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে চারপাশ।
মঙ্গলবার নাগাদ এ ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩১ জনে পৌঁছেছে, জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। এছাড়া ১৬৫ জন বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।