
ইট-পাথরের আবৃত শহর ঢাকা/সেথায় এক স্বপ্ন সারথির আঁকা/ সবুজে সবুজ ক্যাম্পাস প্রশান্তিময়/শত প্রজাতির পুষ্পে পুষ্পময়...’- কবিতার এই লাইনসংবলিত একটি বড় আকৃতির সাইনবোর্ড উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের হায়দার আলী একাডেমিক ভবনের সামনে টানানো আছে। সোমবার এই ভবনটিতেই ঘটে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ভয়াবহ ঘটনা। আগুনের লেলিহানে পুড়ে অঙ্গার হয়েছে কোমলমতি কোনো কোনো শিক্ষার্থী, আবার ঝলসে গেছে কারও কারও শরীর। সবুজে ঘেরা এ ক্যাম্পাসও এখন পুড়ে বিবর্ণ। প্রাণোচ্ছল ক্যাম্পাস যেন মৃত্যুপুরী। ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে শিশুদের বই, খাতা, ব্যাগ, টিফিন বক্স। থমকে গেছে শত প্রজাতির পুষ্পে পুষ্পময়-কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পদচারণা। ক্যাম্পাসের আকাশে-বাতাসে ভেসে বেরাচ্ছে স্বজনদের কান্নার আওয়াজ। মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত ৩১ জন নিহতের তথ্য জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। এছাড়া আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১৬৫ জন। তবে মৃত্যুর এ সংখ্যা নিয়ে ঘোর আপত্তি জানিয়েছে বিক্ষোভে উত্তাল মাইলস্টোনের শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিযোগ-মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি। সোমবারের ভয়াবহ এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। পুলিশ তদন্ত শুরু করেনি। আলামত সংগ্রহের পাশাপাশি তারা চালাচ্ছেন ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কার্যক্রম।
এদিকে সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে প্রায় ১০ ঘণ্টা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, শিক্ষা উপদেষ্টা সিআর আবরার, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এবং শতাধিক পুলিশ সদস্যসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট বয়েকজন কর্মকর্তা। এদিকে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে শিক্ষা সচিব সিদ্দিক জুবায়েরকে প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে তাদের বাকি দাবিগুলো বিশ্লেষণে একটি তদন্ত কমিটি গঠন প্রক্রিয়াধীন বলে জানানো হয়েছে সরকারের তরফ থেকে।
মঙ্গলবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, বিধ্বস্ত মাইলস্টোনের হায়দার আলী একাডেমিক ভবন এখন অনেকটা ধ্বংসস্তূপ। ভবনের সামনের গাছগুলোও যেন সাক্ষ্য দিচ্ছে ঘটনার ভয়াবহতার। উম্মে তামিমা তার আদরের সন্তানকে মঙ্গলবার খুঁজতে ছুটে আসেন মাইলস্টোনে। তার মেয়ে মারিয়া উম্মে আফিয়া মাইলস্টোনের তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর থেকেই আফিয়ার খোঁজ মিলছে না। মা উম্মে তামিমা মঙ্গলবার ভোরে হায়দার আলী ভবনের সামনে আর্তনাদ করে বলেন, ‘ওরে কোথাও খুঁজে পায় নাই। কালকে (সোমবার) সব হসপিটাল খুঁজেছি। কোথাও নেই আমার বাচ্চা। কোথায় আছে কেউ খবর দিতে পারে না।’
আফিয়ার মতো এমন নিখোঁজ কতজন তার তথ্য নেই কারও কাছে। স্বজনরা হাসপাতাল থেকে ঘটনাস্থল, ছুটছেন দিগি¦দিক। নিখোঁজ আরেক শিক্ষার্থীর মাকে হায়দার আলী ভবনের সামনে বিলাপ করতে দেখা গেছে। তিনি বলেন, ‘ওরা তো বলবে আমার বাচ্চাটা আছে না নাই। আমারে তো কেউ বলে না। আমি তো পাই না। আমার বাচ্চাকে ওরা গুম করে ফেলেছে না কিছু করছে আমারে তো বলবে।’
এদিকে দুর্ঘটনায় প্রাণে বাঁচাদের আতঙ্ক এখনো কাটেনি। বিমানটি যখন স্কুলের সামনে আছড়ে পড়ে তখন ভবনটির দ্বিতীয়তলায় ছিল নোহান। আগুনে দগ্ধ হয়েছে সেও। ভয়াবহ সেই ঘটনার বর্ণনা দিয়ে নোহান বলেন, আগুন আগুন বলে সবাই যখন চিল্লাচ্ছিল তখন আমি ক্লাস থেকে বের হয়ে পড়ি। আমার ব্যাগ রুমেই রেখে এসেছিলাম। বের হয়ে দেখি লাশ আর লাশ। লাশের ওপর দিয়েই বের হয়েছি। তখন আমার হাত ও কান পুড়ে গেছে।
হায়দার আলী ভবনের ওপর দিয়ে প্রতিদিন শত শত বিমান উড়ে যায় যা শিক্ষার্থীদের আনন্দের একটি উপলক্ষ্যও বটে। সেই বিমানই যে তাদের ওপর আছড়ে পড়ে এত মানুষের প্রাণ যাবে সেটি কে জানত। চোখের সামনে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের দগ্ধ নিথর দেহ মানতে পারছে না কেউ। এ ঘটনায় কারও গাফিলতি আছে কিনা তা খতিয়ে দেখার দাবি জানিয়েছে সবাই।
মঙ্গলবার সরেজমিন গিয়ে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে উৎসুক জনতার ভিড় চোখে পড়ে। প্রবেশপথে দীর্ঘ লাইন ধরে ঢুকছিলেন ছাত্র-জনতা। কয়েক হাজার শিক্ষার্থীকে কলেজের মাঠে বিক্ষোভ করতে দেখা যায়। ধ্বংসস্তূপ দেখতে ছুটে এসেছিলেন অনেক অভিভাবকও। বিপুলসংখ্যক সাবেক শিক্ষার্থীও এসেছিলেন। সবার চোখে-মুখে দেখা যায় আতঙ্কের ছাপ। লাশের প্রকৃত সংখ্যা লুকানো হচ্ছে দাবি করে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। হায়দার আলী ভবনের চারপাশে অসংখ্য নারকেল ও ফুল-ফলের গাছের সবুজ পাতা পুড়ে কালো হয়ে সাক্ষ্য দিচ্ছে ঘটনার ভয়াবহতার। ক্যাম্পাসের এই ভবনের নিচতলায় একটি ক্লাসরুমে আঘাত করে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান। মুহূর্তেই আগুনের লেলিহান ছড়িয়ে পড়ে পাশের সিঁড়িঘরেও। এতে কয়েকশ শিক্ষার্থী ভবনের মধ্যে আটকে পড়ে। তাৎক্ষণিক তারা বের হতে না পারায় বাড়ে হতাহতের সংখ্যা।
বিধ্বস্ত ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে মঙ্গলবার দুপুরে জুরেনা আক্তার নামে এক অভিভাবক জানান, তার মেয়ে তাসমিয়া জাহান অথৈই সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। বিধ্বস্ত ভবনটির দ্বিতীয়তলায় তার ক্লাসরুম। ক্লাস শেষে কোচিংয়ের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। দুর্ঘটনার দুই মিনিট আগে বান্ধবীর সঙ্গে ক্লাসরুম থেকে বের হয়ে ভবনের সামনের রাস্তায় যায়। ঠিক তখনই বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যায় তাসমিয়া। জুরেনা আক্তার বলেন, ‘আমার মেয়ে ট্রমায় চলে গেছে। সে ঠিকমতো ঘুমাতেও পারছে না।’
বিধ্বস্ত ভবনটির চারপাশ ঘুরে দেখা গেছে, তিনতলা হায়দার আলী ভবনটি নিচু জায়গায় হওয়ায় নিচতলা মাটি দিয়ে ভরাট করে রাখা হয়েছে। ভবনটির দ্বিতীয় ও তৃতীয়তলায় চলে শিক্ষা কার্যক্রম। ২৪টি ক্লাসরুম এখানে। প্লে থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ইংলিশ ভার্সনের শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়া হয় সেখানে। পুরো ভবনের বের হওয়ার একটিই পথ। ঠিক সেই পথের পাশেই বিমান বিধ্বস্ত হয়। যেখানে বিমানটি আছড়ে পড়ে সেখানকার মাটি কয়েক ফুট গভীর হয়ে গেছে। যে ক্লাসরুমে ঢুকে পড়ে বিমান, সেই রুমটি এখন ধ্বংসস্তূপ। কংক্রিট ভেঙে লোহার রড বেরিয়ে আছে সেখানে। আশপাশের কয়েকটি রুম ও বারান্দার গ্রিল ভাঙা। ভবনটির সামনে এখনো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে বইখাতা। আটকে পড়া শিক্ষার্থীদের বের করতে ভবনের পূর্বদিকের বারান্দার গ্রিল ভেঙে ফেলা হয়েছে। অনেক শিক্ষার্থী সেখান দিয়ে গাছ বেয়ে বের হয়েছেন বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।
একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, তাৎক্ষণিকভাবে শিক্ষার্থীরা বের হতে না পারায় বেড়েছে হতাহতের সংখ্যা। দ্বাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সাখাওয়াত হোসেন আবির যুগান্তরকে বলেন, বিমানবন্দর থেকে যখন বিমান চলাচল করে, সাধারণত আমাদের কলেজের ওপর দিয়ে যায়। তাই আমরা বিকট আওয়াজ শুনে অভ্যস্ত। সোমবারও আমরা ক্লাসে থাকা অবস্থায় বিকট আওয়াজ করে বিমানটি আছড়ে পড়ে। পাশের ভবনে আমাদের ক্লাস চলছিল। ঘটনার পরপরই আমরা ঘটনাস্থলে ছুটে আসি। এদিন বিএনসিসি ও স্কাউটের ট্রেনিং থাকায় তারাও উদ্ধারকাজে অংশ নেয়। কিছু সময় পরপর ছোট ছোট বিস্ফোরণ হওয়ায় বিমানের কাছাকাছি যাওয়া যাচ্ছিল না।
আহতরা কোথায় : বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় যারা আহত হয়েছেন, তাদের মধ্যে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ৮, বার্ন ইনস্টিটিউটে ৪৬, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচএস) ২৮, উত্তরার লুবনা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড কার্ডিয়াক সেন্টারে ১৩, উত্তরা আধুনিক হসাপতালে ৬০, উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ১, শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১, ইউনাইটেড হাসপাতালে ২ এবং কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ৩ জন চিকিৎসাধীন আছেন।
হতাহতদের পরিচয় : নিহতদের মধ্য থেকে বার্ন ইনস্টিটিউট থেকে ১০, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ১, সিএমএইচ থেকে ১৬, লুবনা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড কার্ডিয়াক সেন্টার থেকে ২, উত্তরা আধুনিক হাসপাতাল থেকে ১ এবং ইউনাইটেড হাসপাতাল থেকে একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। পরিচয় নিশ্চিত হওয়া নিহত এই ১১ জনের মধ্যে নয়জনই ছাত্র। তাদের বয়স ১০ থেকে ১৪ বছর। অপর দুইজনের মধ্যে একজন মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সমন্বয়ক। তার নাম মাহেরীন চৌধুরী। নিহত মাসুকা একজন শিক্ষিকা। ৩৭ বছর বয়সি মাসুকার শরীরের ৮৫ ভাগ দগ্ধ হয়েছিল।
শতাধিক পুলিশ অবরুদ্ধ : মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৫ নম্বর ভবনে শতাধিক পুলিশকে অবরুদ্ধ করেন শিক্ষার্থীরা। তারা কলেজ ক্যাম্পাস থেকে গণমাধ্যমকর্মীদের বের করে দেন। মঙ্গলবার দুপুর সোয়া ২টার পর এ ঘটনা ঘটে। সরেজমিন দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা ৫ নম্বর ভবনের দিকে ইট ছুড়ে মারছেন। এতে ভবনের গ্লাস ভেঙে যায়। কয়েকশ শিক্ষার্থী পুলিশকে ধাওয়া দিয়ে ভবনের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়। এ সময় উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। তবে ঘটনাস্থলে উপস্থিত মাইলস্টোনের সহকারী শিক্ষক মো. ফজলুল করিম রুবেল যুগান্তরকে বলেন, ‘যারা উত্তেজনা তৈরি করছে, তারা কেউ মাইলস্টোনের শিক্ষার্থী না। তারা বাইরে থেকে এসেছে। তাদের ভিন্ন উদ্দেশ্য থাকতে পারে।’ এ বিষয়ে ডিএমপির উত্তরা বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মো. মহিদুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। কোনো ধরনের সমস্যা হয়নি। শিশু ও উৎসুক জনতাকে সরাতে গিয়ে হয়তো কারও গায়ে লাগতে পারে। পুরো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সরেজমিন দেখা যায়, দুপুরের পর থেকেই শিক্ষার্থীরা উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনের মূল সড়কটি অবরোধ করে রাখেন। মাইলস্টোনের মধ্যে আটকে পড়া উপদেষ্টাদের বের করতে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যৌথভাবে মূল সড়ক থেকে সরিয়ে দেন বিক্ষুব্ধ জনতাকে।
নিহতের সংখ্যা গোপনের অভিযোগ শিক্ষার্থীদের : উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতদের সঠিক নাম ও পরিচয় প্রকাশ করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা। তাদের তোপের মুখে পড়ছেন গণমাধ্যম কর্মীরাও। তারা অভিযোগ করেন, সরকার লাশের সঠিক সংখ্যা দিচ্ছে না আর মিডিয়াও সঠিক সংখ্যা প্রকাশ করছে না। আলমাস হোসেন তূর্য নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি নিজেই দেখেছি অন্তত ৫০টি লাশ হেলিকপ্টারে তুলতে। কিন্তু লাশের সংখ্যা লুকানো হচ্ছে। এটা খুবই দুঃখজনক।’
মাইলস্টোন কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র মাহিন ইসলাম বলেন, ‘বিমান দুর্ঘটনার সময় আমি কলেজের হোস্টেলে ছিলাম। দৌড়ে ক্যাম্পাসে এসে দেখি শিক্ষার্থীরা আগুনে ছটফট করছে। আগুন নেভনোর পর দেখেছি অন্তত ৪০ জন ঘটনাস্থলেই মারা গেছে। অথচ সোমবার রাতে বলা হয়েছে ২০ জন মারা গেছে।’ তিনি বলেন, উদ্ধার অভিযান শেষ ঘোষণার পর রাত ১২টায় অনেক অ্যাম্বুলেন্স ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে। কলেজ ক্যাম্পাস থেকে অনেক মরদেহ বের করা হয়েছে। এছাড়া অনেক অভিভাবক এখন তাদের সন্তানকে খুঁজে পাচ্ছে না।
উদ্ধারকারী শিক্ষার্থীরা জানান, শিশু শিক্ষার্থীদের অনেকের মৃতদেহগুলো পড়েছিল শ্রেণিকক্ষের বেঞ্চে। দেহগুলো পুরো আটকে ছিল সেখানে। সহজেই তা ওঠাতে পারছিলেন না উদ্ধারকর্মীরা। যারা বেঁচে ছিল, তীব্র যন্ত্রণায় তাদের কোনো চেতনাই ছিল না। অনেক শিশু বাঁচার চেষ্টা করছিল। যারা জানালার দিকে ছিল, তাদের হাত ঝুলছিল। দেহগুলো পড়ে ছিল নিচে। প্রতিটি জানালার সঙ্গে কোনো না কোনো পোড়া হাত লেগে ছিল। মাথার চুল থেকে শুরু করে পুরো চামড়া পুড়ে গেছে অনেকের।
দ্বাদশ শ্রেণির আদিব ও তার বন্ধুরা দুর্ঘটনার পরপর ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে উদ্ধারকাজে অংশ নেন। এতে আদিবের দুই হাত কিছুটা পুড়ে গেছে। ব্যান্ডেজ বেঁধে মঙ্গলবার সকালে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে চলে আসেন তিনি। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি ক্যান্টিনের ওখানে ছিলাম। খাবার নিয়ে আসছিলাম। তখন দেখি প্লেনটা এসে বিল্ডিংয়ের ভেতরে ঢুকে যায়। ঢোকার পর প্রথমে বিস্ফোরণ হয়। বিস্ফোরণের পর ট্যাংকের যে ফুয়েল ছিল, সেটার কারণে আবার বিস্ফোরণ হয়। বিস্ফোরণের পর অক্সিজেন ট্যাংকে আবার বিস্ফোরণ হয়। আগুন চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে। ব্লাস্টের কারণে যারা পড়ে যায়, তাদের মাঠের মধ্যে এনে রাখা হয়। কিছুক্ষণ পর ফায়ার সার্ভিস এসে এন্ট্রি পয়েন্টগুলোয় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এরপর ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে আমরা ভেতরে ঢুকি। ঢুকে ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে রেসকিউ অপারেশনে কাজ শুরু করি।
পুলিশের বক্তব্য : ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) নাসিরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, যে কোনো ঘটনা ঘটলে আমরা ডিবি নিজস্ব পদ্ধতিতে কার্যক্রম চালাই। দিয়াবাড়ির ঘটনায় দ্রুত আমাদের টিম পাঠাই। ডিবির উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) সেখানে গিয়েছেন। আমি নিজে বার্ন ইউনিটে গিয়েছি। পুলিশ হিসাবে ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্টের যে ভূমিকা পালন করার কথা, সেটি আমরা তাৎক্ষণিকভাবে করেছি। এখনো করে যাচ্ছি।
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, ঘটনার পর থেকেই ডিএমপি সেখানে আইনশৃঙ্খলা মোকাবিলায় ব্যস্ত। উদ্ধারকাজ থেকে শুরুর করে আহতদের হাসপাতালে পাঠানোর দায়িত্ব পালন করেছে। রাস্তাঘাট ক্লিয়ার করেছে। আজও (মঙ্গলবার) সেখানে অনেক জমায়েত হয়েছে। সশস্ত্র বাহিনীর পাশাপাশি সেখানে পুলিশও কাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে ১০ প্লাটুন অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তিনি বলেন, বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে সশস্ত্র বাহিনীর পক্ষ থেকে একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি হয়েছে। ঘটনা নিয়ে ডিএমপির তদন্ত এখনো সেভাবে শুরু হয়নি। পুলিশ আপাতত ঘটনাস্থল থেকে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছে। মামলার পরই মূলত পুলিশের তদন্ত শুরু হবে।