Image description

কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) পুকুর থেকে সাজিদ আব্দুল্লাহ নামে এক শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধারের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফুলপরী খাতুন। শুক্রবার (১৮ জুলাই) দুপুরে নিজের ফেসবুক আইডিতে একটি পোস্ট দিয়ে তিনি এই ক্ষোভ জানান।

ফেসবুক পোস্টে ফুলপরী ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘ক্যাম্পাসে ছেলেমেয়েদের জীবনের কোনো দাম নাই, ছেলেমেয়ে মরলেও যেন কিছুই যায় আসে না।’ পোস্টের সঙ্গে তিনি দুটি ছবিও সংযুক্ত করেছেন, যাতে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার একটি পুকুর ও ঘটনাস্থলের দৃশ্য দেখা যায়।

২০২৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন শেখ হাসিনা আবাসিক হলের গণরুমে আটকে রেখে ফিন্যান্স বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ফুলপরীকে নির্যাতন করা হয়। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করার পর সারা দেশে আলোচনার ঝড় ওঠে। ওই ঘটনায় একই বছরের ২১ আগস্ট ছাত্রলীগের নেত্রীসহ পাঁচজনকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট।

বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের পুকুর থেকে সাজিদ আব্দুল্লাহ নামে এক শিক্ষার্থীর ভাসমান লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সেই ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ফুলপরী লিখেছেন, ‘কাল বিকেলে পুকুরে পাশের রাস্তা দিয়েই টিউশনে গিয়েছিলাম, তখনো পুকুরের দিকে তাকিয়েও ছিলাম, অতটা খেয়াল করিনি। সন্ধ্যায় আসার সময় দেখি অনেক মানুষের ভিড়, একটা মরা মানুষ পানিতে ভেসে আছেন। আমি পুকুরের পাড়ে দাঁড়িয়ে জীবনে প্রথম দেখলাম, একটা মানুষ তার নিথর দেহ শক্ত হয়ে ভেসে উঠেছে মাঝপুকুরে। আর সেই প্রাণহীন দেহটা বড় বাঁশ দিয়ে মরা মাছ যেমন পুকুর থেকে টেনে টেনে তোলে, সেই ভাবে তুলছে। তার হাত শক্ত হয়ে উঁচু হয়ে আছে। পাঁচ মিনিট দাঁড়িয়ে থেকে তা আর দেখতে পারলাম না।’

ফেসবুক স্ট্যাটাসে ফুলপরী আরও লিখেছেন, ‘কতটা নির্মম এ সমাজ। এরা শুধু ক্ষমতা আর রাজনীতি বোঝে, তা ছাড়া কিছুই বোঝে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রশাসনগুলো কেমন ছিল, তা খুব ভালো করে বুঝতে পেরেছি আমি। কিন্তু এখন! ১৫ বছর লেজ গুটিয়ে ছিল যারা, এখন যে দায়িত্ব পেয়েছে, তা পালন করতে অনীহা কেন?’

সাজিদ আব্দুল্লাহর পানিতে ভেসে থাকা মরদেহের ছবি পোস্ট করে ফুলপরী ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘আমাদের কি স্টুডেন্ট মনে হয় না, আমাদের গাধা মনে হয়, এই ক্যাম্পাসে ছেলেমেয়েদের জীবনের কোনো দাম নাই। নিরাপত্তা কোথায়? নামে শুধু নিরাপত্তা দেয়। কই আড়াই বছরে কোনো নিরাপত্তা তো চোখে পড়ল না।’

সাজিদ আব্দুল্লাহর মৃত্যু নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রশ্ন রেখে ফুলপরী সবশেষ লিখেছেন, ‘একটা ছেলে যে সাঁতার জানে, যে পুকুরে কেউ গোসলও করে না তেমন। এমনি এমনি তাজা দেহটা ভেসে আছে। কাল আমি, আমার অন্য বন্ধু বা কোনো ভাই–বোনের লাশ পড়ে থাকবে না, তার গ্যারান্টি কোথায়? দায়িত্ব পালন করতে না পারলে সে দায়িত্ব নিতে হয় না।’