Image description
আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছর

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে রেকর্ড পরিমাণে। ওই সময়ে বৈদেশিক ঋণও বেড়েছে মাত্রাতিরিক্ত হারে। এর মধ্যে স্বল্পমেয়াদি ঋণও বেড়েছে যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। রিজার্ভ থেকে অর্থ নিয়ে সরকার বিভিন্ন তহবিল গঠন করেছে। ওই তহবিল থেকে দেওয়া ঋণ ফেরত আসেনি। হয়েছে খেলাপি। এরপরও সেই অর্থ রিজার্ভে দেখানো হয়েছে। মূল রিজার্ভ থেকে স্বল্পমেয়াদি বৈদেশিক দায় বাদ দিয়ে হিসাব করতে হয়, সরকার সেটি করেনি। এ নিয়ে আইএমএফও তীব্র আপত্তি করেছে। একপর্যায়ে সরকার নিট রিজার্ভ প্রকাশ করতে বাধ্য হয়েছে। এসব দায়দেনা বাদ দিলে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ সরকার রিজার্ভ যেভাবে বেড়েছে বলে প্রচার করেছে, এর বড় অংশই ছিল ‘ফাঁকা বুলি’। বরং রিজার্ভের মতো অর্থনৈতিক একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক নিয়ে সরকার রাজনীতির ফুলঝুরি খেলেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার সময় দেশের বৈদেশিক মুদ্রার গ্রস রিজার্ভ ছিল ৭০০ কোটি ডলার। ২০২২ সালের আগস্টে গ্রস রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার ৮০৬ কোটি ডলার। আলোচ্য সময়ে রিজার্ভ বেড়েছে ৪ হাজার ১০৬ কোটি ডলার বা ৫৮৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ। এরপর থেকে বৈশ্বিক মন্দার অজুহাতে রিজার্ভ কমেছে। যতটুকু না বৈশ্বিক মন্দার প্রভাবে কমেছে, এর চেয়ে বেশি কমেছে অর্থ পাচারের কারণে।

আওয়ামী লীগের শুরুর দিকে অর্থাৎ ২০০৯ সালের শুরু দিকে মোট বৈদেশিক ঋণের স্থিতি ছিল ২ হাজার ২৭৯ কোটি ডলার। গত বছরের জুলাইয়ে অর্থাৎ আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৫৫৬ কোটি ডলারে। আলোচ্য সময়ে ঋণ বেড়েছে ৮ হাজার ২৭৭ কোটি ডলার, অর্থাৎ ৩৬৩ দশমিক ১৯ শতাংশ। অর্থাৎ রিজার্ভ যে হারে বেড়েছে, তার চেয়ে অর্ধেকের বেশি হারে বেড়েছে ঋণ। ঋণের মধ্যে স্বল্পমেয়াদি ঋণ বেড়েছে বেশি মাত্রায়, যা রিজার্ভে চাপ সৃষ্টি করেছে। এটি ২০২৩ সালের শেষদিকে ২ হাজার ২০০ কোটি ডলারে উঠেছিল। গত জুনে স্বল্পমেয়াদি ঋণের পরিমাণ কমে দাঁড়ায় ১ হাজার ৩০০ কোটি ডলার। আওয়ামী লীগ সরকারের শুরুতে স্বল্পমেয়াদি ঋণ ছিল ১৬০ কোটি ডলার। বেড়েছে ২ হাজার ৪০ কোটি ডলার বা ১ হাজার ২৭৫ শতাংশ। অর্থাৎ রিজার্ভের চেয়ে বেশি হারে বেড়েছে স্বল্পমেয়াদি ঋণ। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে ডলার সংকটের কারণে সরকার বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ স্থগিত করেছিল। এতে স্বল্পমেয়াদি ঋণের চাপ আরও বেড়েছে, যা বর্তমান সরকারকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে।

আইএমএফ-এর নিয়ম অনুযায়ী, কোনো দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে যদি কোনো তহবিল গঠন করা হয় বা মজুতের বাইরে অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা হয়, তা রিজার্ভ থেকে বাদ দিতে হবে। একই সঙ্গে সরকারের স্বল্পমেয়াদি যেসব দায় রয়েছে, যেমন: ৩/৪ মাসের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে-এমন বৈদেশিক ঋণ। একই সময়ের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে এলসির দায় এবং রিজার্ভ থেকে বাদ দিতে হবে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার তা বাদ না দিয়ে গ্রস রিজার্ভকেই মূল রিজার্ভ হিসাবে দেখানো শুরু করে। এতে ২০১৫ সালে আইএমএফ-এর একটি মিশন ঢাকায় এ বিষয়ে আপত্তি তোলে। তারা বলে, রিজার্ভের নিট হিসাব প্রকাশ করতে হবে। বাংলাদেশের রিজার্ভ এখন যেভাবে বেশি দেখানো হচ্ছে তাতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিভ্রান্তি দেখা দিতে পারে। কিন্তু সরকার ওই সময়ে এটি আমলে নেয়নি। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির শেষদিকে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করলে বৈশ্বিক মন্দা দেখা দেয়। এতে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বেড়ে যায়। ফলে বাংলাদেশের আমদানি ব্যয়ও বেড়ে যায়। তখন আইএমএফ-এর কাছে সরকার ঋণ সহায়তা চায় (আন্তর্জাতিক ভাষায় একে বলে বেল আউট)। তখন আইএমএফ-এর একটি মিশন বাংলাদেশ সফরে এসে ঋণের শর্ত হিসাবে নিট রিজার্ভ প্রকাশের কথা বলে। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে অনেক দরকষাকষি হয়। পরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সীমিত আকারে নিট রিজার্ভ প্রকাশ করে। ২০২৪ সালের ২ জুলাই কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিট রিজার্ভ প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, ওই নিট রিজার্ভ ছিল ১ হাজার ৬৭৭ কোটি ডলার। আইএমএফ-এর স্বীকৃত পদ্ধতি অনুযায়ী রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ১৭৭ কোটি ডলার। গ্রস রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৬৮৮ কোটি ডলার। অর্থাৎ গ্রস রিজার্ভ থেকে নিট রিজার্ভ ১ হাজার ১১ কোটি ডলার বা ৬০ দশমিক ২৯ শতাংশ কম। সরকার অনেক স্বল্পমেয়াদি দায় গোপন করেছিল। যেগুলো সামনে আনলে রিজার্ভ আরও কম হতো। এছাড়া চলতি এলসির দায় মেটাতে যে ডলার লাগত, তা বাদ দিলে রিজার্ভ ১ হাজার কোটি ডলারের নিচে নেমে আসত। অর্থাৎ তৎকালীন সরকার সর্বোচ্চ রিজার্ভ দেখিয়েছে ৪ হাজার ৮০৬ কোটি ডলার। অথচ ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ ছিল হাজার কোটি ডলারের মতো।

২০২২ সালের আগেস্ট রিজার্ভ যখন সর্বোচ্চ মাত্রায় উঠেছিল, অর্থাৎ গ্রস রিজার্ভ ৪ হাজার ৮০৬ কোটি ডলার। ওই সময়ে আইএমএফ-এর স্বীকৃত পদ্ধতি অনুযায়ী ছিল ৪ হাজার ৬৭ কোটি ডলার। অর্থাৎ ৭৩৯ কোটি ডলার বা ১৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ কম। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে গ্রস বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩ হাজার ২০০ কোটি ডলার। এ থেকে ওই সময়ে ৬০০ কোটি ডলার নিয়ে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ফান্ড গঠন করে সরকার। এই ফান্ড থেকে পায়রা বন্দর ড্রেজিং করতে বৈদেশিক মুদ্রায় অর্থাৎ ৫৭ কোটি ইউরো ঋণ দেওয়া হয়। আরও ঋণ দেওয়ার প্রক্রিয়ায় ছিল। এছাড়া রিজার্ভ থেকে বেসরকারি খাতকেও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছিল সরকার। আইএমএফ-এর নিয়ম অনুযায়ী রিজার্ভ থেকে ওই ৬০০ কোটি ডলার বাদ দেওয়ার কথা থাকলে সরকার তা দেয়নি। ৬০০ কোটি ডলার বাদ দিলে রিজার্ভ দাঁড়াত ২ হাজার ৬০০ কোটি ডলার। কিন্তু ২০২০ সালের মার্চে করোনার সংক্রমণ শুরু হলে ওই তহবিল থেকে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ স্থগিত করা হয়। কিন্তু ওই সময়ে অনেকেই ধারণা করেছিল মূলত অর্থ পাচার করার জন্যই রিজার্ভ থেকে বেসরকারি খাতে ঋণ দেওয়ার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। কারণ, ওইসব ঋণ দেওয়া হতো সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীদের। ওই সময়ে রপ্তানি খাতকে সহযোগিতা করতে রিজার্ভ থেকে ৭০০ কোটি ডলার নিয়ে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের আকার বাড়ানো হয়। এ থেকে রপ্তানিকারকদের ঋণ দেওয়া হতো। কিন্তু ওই অর্থও গ্রস রিজার্ভে দেখানো হতো। ফলে রিজার্ভ ৭০০ কোটি ডলার বাদ দলে রিজার্ভ দাঁড়াত ১ হাজার ৯০০ কোটি ডলারে। ওই সময়ে স্বল্পমেয়াদি ঋণ ছিল ১ হাজার ১০০ কোটি ডলার। যেটি বাদ দিয়ে রিজার্ভ দাঁড়াত ৮০০ কোটি ডলারে। রিজার্ভ থেকে শ্রীলংকাকে ঋণ দেওয়া হয়েছে ২৫ কোটি ডলার। সেটিও বাদ দেওয়া হয়নি। অবশ্য কয়েক দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে শ্রীলংকা সুদসহ পুরো ঋণ শোধ করেছে।

এদিকে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল থেকে যেসব ঋণ দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে বেশকিছু গ্রুপ খেলাপি হয়েছে। এর মধ্যে বেক্সিমকো গ্রুপ রপ্তানির জন্য ঋণ নিয়েও রপ্তানির মূল্য দেশে আনেনি। অর্থাৎ ঋণের টাকাসহ পণ্যের মূল্যও পাচার করেছে। কেয়া গ্রুপ রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল থেকে ঋণ নিয়ে খেলাপি হয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংশ্লিষ্ট ব্যাংক থেকে ঋণের টাকা আদায় করে নিয়েছে। ওইসব ঋণ এখন সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের দায়। এভাবে রিজার্ভের টাকা লুটপাট করা হয়েছে।

রিজার্ভের টাকা যে কয়েকটি গ্রুপ লুট করেছে, সে বিষয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের শেষদিকে গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

এদিকে ২০২২ সালের পর ডলার সংকটে সরকার বৈদেশিক ঋণের কিস্তি বারবার স্থগিত করেছে। এতে ঋণের পরিমাণ বেড়েছে, যা বর্তমান সরকারকে শোধ করতে হচ্ছে। গত বছরের আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত সরকার আওয়ামী লীগ সরকারের রেখে যাওয়া ঋণের মধ্যে প্রায় ৭০০ কোটি ডলার পরিশোধ করেছে।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের দায় বাবদ ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত পরিশোধ করা হয়েছে ২০ কোটি ৮০ লাখ ডলার। পরবর্তী সময়ে ঋণ পরিশোধ স্থগিত করায় ২০২৪ সালের জুনে পরিশোধ করা হয় ৭৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার। গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত পরিশোধ করা হয়েছে ৭৩ কোটি ২০ লাখ ডলার।

পেট্রোবাংলার বকেয়া বাবদ ২০২৩ সালের জুনে ৬০ কোটি, ২০২৪ সালের জুনে ৫৬ কোটি ২০ লাখ এবং একই বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫০ কোটি ৪০ লাখ ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের দায় বাবদ ২০২৩ সালের জুনে ১৭ কোটি, ২০২৪ সালের জুনে ২৫ কোটি এবং ওই বছরের ডিসেম্বরে ৪ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। অর্থাৎ ২০২৩ সালের জুনে ৮৭ কোটি, ২০২৪ সালের জুনে ১৫৭ কোটি এবং ডিসেম্বরে ১২৮ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়। সার আমদানি বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে ১৩৮ কোটি ডলার। এসব ঋণ পরিশোধ স্থগিত করা হলেও এর বিপরীতে রিজার্ভ থেকে কোনো সংস্থান রাখা হয়নি। কিন্তু রিজার্ভকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানো হয়েছে। সফলতা নিয়েছে সরকার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতা ছাড়ার শেষ মুহূর্তে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার গ্রস রিজার্ভ কমে ১০০ কোটি ডলারের নিচে নেমে যায়। এ নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারকে ওই সময়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এসে রিজার্ভ সংকটের কারণে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) দেনা পরিশোধ করতে পারছিল না। ফলে এক কিস্তির দেনা পরিশোধ স্থগিত করে ঋণ হিসাবে ৩৯ কোটি ডলার নেয় আকুর কাছ থেকে। আওয়ামী লীগ সরকারের সৃষ্ট দায় পরের কিস্তিতে তা পরিশোধ করা হয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে একবারই আকুর দায় শোধ স্থগিত করতে হয়েছে। সেটি আওয়ামী লীগের কারণে সৃষ্ট সংকটের জন্য। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে আগের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে রিজার্ভ বাড়ানোর জোরালো পদক্ষেপ নেয়। তাদের সময়ে ২০১০ সালের জুনে গ্রস রিজার্ভ প্রথমবার ১ হাজার কোটি ডলার অতিক্রম করে। ২০১৪ সালের জুনে ২ হাজার কোটি ডলার অতিক্রম করে। ২০১৬ সালের জুনে ৩ হাজার কোটি ডলার এবং ২০২০ সালের অক্টোবরে ৪ হাজার কোটি ডলার অতিক্রম করে। ২০২১ সালের আগস্টে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার ৮০৬ কোটি ডলারে, যা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রিজার্ভ। এই রিজার্ভ নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার অনেক গর্ব করে। রাজনৈতিকভাবে রিজার্ভ বাড়ানোর প্রোপাগান্ডা চালায়।

২০২০ সালে তীব্র সমালোচনাকে উপেক্ষা করে রিজার্ভ থেকে ডলার নিয়ে প্রকল্পে বিনিয়োগ করা হয়। এরপর থেকেই রিজার্ভ কমতে থাকে। তবে তা কমছিল খুবই ধীরগতিতে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করলে বৈশ্বিকভাবে পণ্যের দাম বাড়তে থাকে। এতে আমদানি ব্যয়ও বাড়তে থাকে। ফলে ডলার খরচ বেড়ে যায়। ডলারের দাম বাড়তে থাকে। চাপে পড়ে রিজার্ভ। রিজার্ভ বৃদ্ধি নিয়ে আওয়ামী লীগের এত গর্ব সংকটের সময় চার মাসও টিকল না। রিজার্ভ সাশ্রয় করতে ২০২২ সালের ১১ এপ্রিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমদানি নিয়ন্ত্রণের জন্য অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ছাড়া বাকি সব পণ্য আমদানিতে এলসি মার্জিন আরোপ করে। এতেও রিজার্ভের নিম্নগতি রোধ করা সম্ভব না হলে এক মাসের মাথায় এলসি মার্জিন আরও বাড়িয়ে দেয়। ১০ মে থেকে বিলাসী পণ্যে ৭৫ এবং বাণিজ্যিক পণ্যে ৫০ শতাংশ মার্জিন আরোপ করে। এর ৫৫ দিনের মাথায় ৫ জুলাই বিলাসী পণ্যে শতভাগ মার্জিন আরোপ এবং অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ছাড়া বাকি সব পণ্য আমদানিতে ঋণ বন্ধ করে দেয়। ওই বছরের জুলাইয়ে গ্রস রিজার্ভ নেমে আসে ৩ হাজার ৯৬০ কোটি ডলারে। প্রায় তিন বছরে দেশের গ্রস রিজার্ভ কমেছে ২ হাজার ৩৫৪ কোটি ডলার। আওয়ামী লীগের শেষ সময়ে গ্রস রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৫৯২ কোটি ডলার। আইএমএফ-এর হিসাব অনুযায়ী ২ হাজার ৪৯ কোটি ডলার। ওই সময়ে স্বল্পমেয়াদি দায় ছিল ১ হাজার ৬০০ কোটি ডলার। ওই রিজার্ভ থেকে স্বল্পমেয়াদি দায় বাদ দিলে ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ থাকত ৪৪৯ কোটি ডলার।