Image description

আজ ১৬ জুলাই, ছাত্রলীগের পতনের দিন। চব্বিশের উত্তাল জুলাইয়ের এই দিনে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে ছাত্রলীগের দীর্ঘদিনের একচ্ছত্র আধিপত্যের পতন ঘটে। সাধারণ ছাত্রদের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধে গুড়িয়ে দেয়া হয় ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী দখলদারিত্ব, ভেঙে ফেলা হয় আবাসিক হলগুলোতে গড়ে ওঠা ‘টর্চার সেল’ হিসেবে পরিচিত কুখ্যাত নেতাকর্মীদের কক্ষ। 

মূলত ১৫ জুলাইয়ের বর্বর হামলা নিপীড়িত ছাত্রসমাজকে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দিয়েছিল। এর পরদিন থেকেই আবাসিক হলগুলোতে শুরু হয় প্রতিরোধ- ধাপে ধাপে বিতাড়িত হন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।

শিক্ষাঙ্গনে বিপদের বন্ধু হওয়ার বদলে, শিক্ষার্থীদের কাছে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠেছিলো ছাত্রলীগ। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন হিসেবে গত ১৬ বছরে তারা গড়ে তোলে একচ্ছত্র দখলদারিত্ব- গেস্টরুমে নির্যাতন, সিট বাণিজ্য, জোরপূর্বক মিছিলে নেয়া, হল দখলসহ নানা নিপীড়নের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পেত না। কিন্তু জুলাইয়ের সেই উত্তাল দিনে পাল্টে যায় দৃশ্যপট।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘সেদিন মূল ঘটনাটা শুরু হয় বিজয়-৭১ হল থেকে। আমরা যখন হলে ঢুকি, তখন ছাত্রলীগের নেতারা আমাদের ওপর হামলা চালায়। খবর পেয়ে রাজু ভাস্কর্যে অবস্থানরত নাহিদ ভাই, আসিফ ভাইরা বড় মিছিল নিয়ে হলে আসেন, এবং তখন থেকেই প্রতিরোধ শুরু হয়।’

গুড়িয়ে দেয়া হয় ছাত্রলীগের সাদ্দাম, ইনান, সৈকতসহ শীর্ষ নেতাদের কক্ষ।  আর সেই মুহূর্ত থেকেই শুরু হয় ছাত্রলীগের ক্যাম্পাস চ্যুতির অধ্যায়।

আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ওরা ছিল সবসময় আমাদের চারপাশে- জোর করে কাজ করাতো, নির্যাতন করত। তাদের বিরুদ্ধে মুখ খোলা আর হলে থেকে বের করে দেয়া খুবই কঠিন সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু আমরা তা পেরেছি।’

ঐক্যের শক্তিতে যে ছাত্ররা ক্যাম্পাসকে নিরাপদ করেছেন, তারা বলছেন- ভবিষ্যতে যেকোনো ছাত্র সংগঠনের জন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে ছাত্রলীগের পরিণতি। তারা বলেন, ‘প্রতিটি হল রাজনৈতিকভাবে স্বাধীন থাকা উচিত। শুধু ছাত্রলীগ নয়- ভবিষ্যতে যদি অন্য কেউ স্বৈরাচারী আচরণ করে, তবে তার পরিণতিও এমনই হবে।’

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক সহাবস্থানকে সাধুবাদ শিক্ষার্থীদের। তবে, মুক্ত চিন্তায় আঘাত কিংবা শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করা হলে, আবারও প্রতিরোধ গড়ে তোলার প্রত্যয় তাদের।