Image description

গাজার ভয়াবহ যুদ্ধ শুধু ফিলিস্তিনিদের জীবনকেই ধ্বংস করছে না, ইসরায়েলি সেনাদের মানসিক স্বাস্থ্যেও মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। যুদ্ধপরবর্তী মানসিক ট্রমা, সামরিক তদন্ত এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের চাপ—এই সব মিলিয়ে আত্মহত্যার পথে পা বাড়াচ্ছেন গাজা থেকে ফিরে আসা সেনারা। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, সম্প্রতি আত্মহত্যার এই প্রবণতা ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে।

 

মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) টিআরটি ওয়ার্ল্ডের প্রতিবেদনে জানানো হয়, সর্বশেষ আত্মহত্যাকারী সেনা ‘নাহাল ব্রিগেড’-এর সদস্য ছিলেন। এই ঘটনাতেও সামরিক পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।

 

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়, ওই সেনাকে ঘাঁটিতে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। এর আগে, গত সপ্তাহে এক রিজার্ভ সেনা আত্মহত্যা করেন এবং অন্য একজনকে ঘাঁটিতে একইভাবে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। এই ধারাবাহিক ঘটনাগুলোতে দেশটির রাজনৈতিক ও চিকিৎসা মহলে ব্যাপক উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

ইসরায়েলি সংসদের বিরোধী নেতা ইয়াইর লাপিদ সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, “গত এক সপ্তাহে তিনজন সেনা আত্মহত্যা করেছেন। এটা এক দমবন্ধ করা বাস্তবতা।”

 

দক্ষিণাঞ্চলীয় স্দে তেইমান সামরিক ঘাঁটিতে এক ইসরায়েলি সেনা আত্মহত্যা করেছেন। হারেৎজ পত্রিকা জানায়, তিনি গোলানি ব্রিগেডের সদস্য ছিলেন এবং কিছুদিন আগেই গাজা যুদ্ধ শেষে ঘাঁটিতে ফিরেছিলেন। তবে ফিরে আসার পর সামরিক পুলিশের তদন্ত ও জেরার মুখে পড়েন। মাসখানেক আগে তার বিরুদ্ধে একটি তদন্তও শুরু হয়েছিল, যার জেরে তার ব্যক্তিগত অস্ত্র জব্দ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু ওই সেনা তার ঘুমন্ত বন্ধুর অস্ত্র ব্যবহার করে নিজেকে গুলি করেন।

এই ঘটনার কারণ হিসেবে ‘ব্যক্তিগত আচরণ’ নয় বলে উল্লেখ করা হলেও বিস্তারিত কিছু জানায়নি কর্তৃপক্ষ। হারেৎজ জানায়, আত্মহত্যাকারী সেনার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু গাজায় এক বিস্ফোরণে নিহত হন, যা হয়তো তার মানসিক চাপ আরও বাড়িয়ে দেয়।

এছাড়া, সিরিয়ার গোলান মালভূমির এক সামরিক ঘাঁটিতেও গাজা যুদ্ধফেরত এক সেনা আত্মহত্যা করেন। গত ১০ দিনের মধ্যেই এ ধরনের তিনটি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।

 

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর এখন পর্যন্ত অন্তত ১৫ জন ইসরায়েলি সেনা আত্মহত্যা করেছেন। শুধু ২০২৪ সালেই এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১-এ। হারেৎজের মতে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া গাজা যুদ্ধের পর আত্মহত্যার সংখ্যা কমপক্ষে ৪২ জনে পৌঁছেছে।

এই পরিসংখ্যান নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে—গাজার যুদ্ধ কেবল ফিলিস্তিনিদের জন্যই নয়, ইসরায়েলি সেনাদের জন্যও কি এক মানসিক গণধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হয়েছে?

 

এদিকে, আন্তর্জাতিক মহলে ইসরায়েলের এই যুদ্ধ নিয়ে সমালোচনার ঝড় অব্যাহত। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত গাজায় প্রায় ৫৭ হাজার ৭০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।

 

এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গালান্তের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।

 

এছাড়া, আন্তর্জাতিক বিচার আদালতেও (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে মামলা চলছে।

গাজায় চলমান এই দীর্ঘ যুদ্ধ আন্তর্জাতিক আইন ও মানবিকতাকে গভীরভাবে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।

 

ঢাকাটাইমস