
রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে শুরু হয়েছে চিরুনি অভিযান। এর মূল টার্গেট দখলদারচক্র, অস্থিরতা সৃষ্টিকারী এবং মব সহিংসতায় জড়িতরা। এছাড়া খুনি, অস্থিরতা সৃষ্টিকারী, ধর্ষক, চাঁদাবাজ, মাদক এবং অস্ত্র ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন অপরাধীকেও আনা হচ্ছে এর আওতায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট রোববার রাত থেকে মাঠে নামলেও সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এ সংক্রান্ত অভিযানে নামেনি এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়ে র্যাব যে কোনো সময় মাঠে নামবে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
সূত্র জানায়, গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে দেশকে অস্থিতিশীল করার একের পর এক ষড়যন্ত্র চলছিল। এই সুযোগে তৎপর হয়ে ওঠে পেশাদার অপরাধীরা। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলেও ব্যবহৃত হয় তারা। এছাড়া মব সৃষ্টি করে নৈরাজ্য এবং একের পর এক নৃশংস ঘটনার জন্ম দিচ্ছিল সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া হয় বিভিন্ন উদ্যোগ। স্বাভাবিক অভিযানের পাশাপাশি চালানো হয় বেশ কয়েকটি বিশেষ অভিযান। একটি অভিযান শুরুর পর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই আবারও সক্রিয় হয়ে ওঠে অপশক্তি। যে কারণে স্থায়ীভাবে স্বাভাবিক হচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। ‘ডেভিল হান্ট’ অভিযান চলছে বেশ কিছুদিন ধরেই। এই অভিযানে প্রতিনিয়ত গ্রেফতার করা হচ্ছে অপরাধীদের। উদ্ধার করা হচ্ছে অস্ত্র ও গোলাবারুদ। এরপরও বন্ধ হচ্ছে না সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজদের তৎপরতা। মব সৃষ্টি করে নৈরাজ্যের পাশাপাশি ঘটছে একের পর এক নৃশংস ঘটনা।
গত ৯ জুলাই মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ নামে এক ব্যবসায়ীকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে ও মাথা থেঁতলে হত্যার ঘটনাটি দেশব্যাপী চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। নৃশংস ওই ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর সারা দেশে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। দোষীদের শাস্তির দাবিতে বিভিন্ন স্থানে কর্মসূচি পালন করছে বিভিন্ন সংগঠন। এমন প্রেক্ষাপটে রোববার সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভা শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী চিরুনি অভিযানের ঘোষণা দেন। এরপরই পুলিশ সদর দপ্তর থেকে মাঠপর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটকে (র্যাব ছাড়া) এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দেওয়া হয়।
র্যাব লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক এমজেডএম ইন্তেখাব চৌধুরী সোমবার সন্ধায় যুগান্তকে বলেন, চিরুনি অভিযানসংক্রান্ত সরাসরি কোনো নির্দেশনা এখনো আমরা পাইনি। আমাদের ডিজি মহোদয় উপদেষ্টা মহোদয়ের সঙ্গে ঢাকার বাইরে আছেন। তিনি ঢাকায় ফেরার পর বিষয়টি নিয়ে আমরা প্রস্তুতিমূলক সভা করব। ওই মিটিং থেকে যে নির্দেশনা দেওয়া হবে আমরা সেই নির্দেশনা অনুযায়ী মাঠে নামব। এমনো হতে পারে, এক ঘণ্টার নোটিশেই আমাদের চিরুনি অভিযানে নামা লাগতে পারে।
চিরুনি অভিযানে কোন ধরনের বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে-জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি ইনামুল হক সাগর যুগান্তরকে বলেন, চুরি, ছিনতাই, দখলদারিত্ব, অস্থিরতা সৃষ্টি, ধর্ষণ, মাদক, অস্ত্র এবং মব সহিংসতাসহ সব ধরনের অপরাধ প্রতিরোধে আমাদের অভিযান শুরু হয়েছে। আগামী নির্বাচনকে ঘিরে কেউ যাতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে সেই বিষয়টিও আমরা বিবেচনায় রাখছি। তিনি বলেন, অভিযান সফল করতে রাজনৈতিক দলসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সহযোগিতা প্রত্যাশা করি। চিরুনি অভিযানে সফলতা জানতে চাইলে তিনি বলেন, চিরুনি অভিযানসহ নানামুখী অভিযানে একদিনে আমরা এক হাজার ৪৯৬ জনকে গ্রেফতার করেছি। এর মধ্যে বিভিন্ন মামলা এবং ওয়ারেন্টপ্রাপ্ত আসামি এক হাজার ২২ জন। অন্য আসামি ৪৭৪ জন। এছাড়া দুটি বিদেশি পিস্তল ৬ রাউন্ড গুলি, দুটি ম্যাগাজিন, তিন রাউন্ড কার্তুজ এবং একটি এলজি উদ্ধার করা হয়েছে।
এআইজি ইনামুল হক সাগর বলেন, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ এবং খুনিসহ অপরাধীদের ধরতে পুলিশের অভিযান আগে থেকেই চলছিল। চিরুনি অভিযানসংক্রান্ত স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার ঘোষণার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। রোববারই আমরা মাঠপর্যায়ে বিশেষ বার্তা দিয়েছি। তিনি বলেন, বিশেষ অভিযানে গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের কার্যক্রম চলমান। এমন কিছু তথ্য পাওয়া গেছে সেগুলো এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য যারা দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে তাদেরও আমরা আইনের আওতায় আনছি।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উপকমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, নিয়মিত অভিযানের পাশাপাশি আমাদের বিশেষ অভিযান চলছে। অপরাধপ্রবণ এলাকাকে গুরুত্ব দিয়ে আমাদের কার্যক্রম চলছে। চিরুনি অভিযানে রোববার রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে ৩৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে ১৫ পিস ইয়াবা ও ৩৭ পুরিয়া গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর একেকটির ধরন একেক রকমের। আমরা অপরাধের ধরনগুলো বিশ্লেষণ করে সে অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি।