
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জনশক্তি রফতানিতে চলছে ভাটার টান। উদ্যোগ নেই বন্ধকৃত শ্রমবাজার পুনরুদ্ধারে। বিদেশে বাংলাদেশি মিশনগুলোতে ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসররা এখনো বহাল তবিয়তে। ফলে শ্রমবাজার সম্প্রসারণে মিশনে কর্মরত ফ্যাসিস্ট এর দোসররা কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। অনেক মিশনের ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসর রাষ্ট্রদূত ও শীর্ষ পর্যায়ের ফ্যাসিস্ট কর্মকর্তারা কর্মস্থল থেকে বিদেশে পালিয়ে যাচ্ছে। এতে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা ক্ষুণœ হচ্ছে। এতে শ্রমবাজার সম্প্রসারণ এর পরিবর্তে নিম্নমুখী হচ্ছে। ইউরোপের ভিসা না পেয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে কর্মীরা। ঢাকায় লেবার উইং চালু করতে ইউরোপীয় ইউনিয়নে অনীহা। বহির্বিশ্বের চাহিদানুযায়ী দক্ষ কর্মী তৈরিতে চোখে পড়ার মতো নেই সরকারি উদ্যোগ। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে জনশক্তি রফতানিতে বিপর্যয়ের আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। একাধিক জনশক্তি রফতানিকারক এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। এদিকে, এয়ারলাইন্সগুলোর সিন্ডিকেটের দরুন গত দু’সপ্তাহে ওমরাযাত্রী ও লেবার ফেয়ার বেড়েছে জনপ্রতি ১৫ হাজার টাকা। এতে বিদেশগামী কর্মী ও ওমরাহযাত্রীদের টিকিট কিনতে গলদঘর্ম।
জনশক্তি রফতানির সর্ববৃহৎ দেশ সউদী আরব অদক্ষ কর্মীর পরিবর্তে দক্ষ কর্মী নিয়োগের দিকে ঝুঁকছে। আধুনিক প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে দেশটি ২০৩০ সালকে টার্গেট করে বিভিন্ন সেক্টরে দক্ষ অভিবাসী কর্মী নিয়োগে গুরুত্ব দিচ্ছে। দেশটিতে বিভিন্ন মেগা সিটির উন্নয়ন কার্যক্রম চলছে জোরেশোরে। দেশটিতে দক্ষ জনশক্তি রফতানি বাড়াতে পারলে আমাদের রেমিট্যান্স আয়ও আশানুরূপ বাড়বে।
বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম খাত হচ্ছে জনশক্তি রফতানির খাত। দেশের প্রায় সোয়া কোটি মানুষ এখন সারাবিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তারা তাদের শ্রমলব্ধ অর্থ (রেমিট্যান্স) দেশে পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকা আরও গতিশীল করছেন। এদিকে, বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশিরা চলতি জুলাই মাসের ৭ দিনে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ৮১২৫ কোটি টাকা। চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ের প্রথম সাত দিনে ৬৬ কোটি ৬০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ (এক ডলার ১২২ টাকা ধরে) আট হাজার ১২৫ কোটি ২০ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, জুলাইয়ের প্রথম সাত দিনে ৬৬ কোটি ৬০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। যা গত বছরের একই সময়ে (২০২৪ সালের জুলাইয়ের ৭ দিন) ছিল ৫৩ কোটি ১০ লাখ ডলার। সে হিসাবে গত বছরের একই সময়ে তুলনায় ১৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার বা ৬ হাজার ৪১২ কোটি টাকা বেশি এসেছে।
জনশক্তি রফতানি খাত বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নতুন প্রাণ সঞ্চার করেছে। এ অবস্থায় বিদেশে নিত্যনতুন শ্রমবাজার খুঁজে বের করে ব্যাপকহারে আরও জনশক্তি রফতানির পথ উন্মুক্ত করা জরুরি হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে দক্ষ জনশক্তি রফতানির পথ সুগম করার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং কর্তৃপক্ষকে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশ্বের বিভিন্ন রিসিভিং কান্ট্রি অদক্ষ কর্মীর নিয়োগের চেয়ে দক্ষ কর্মীর দিকে বেশি হাত বাড়াচ্ছে। অদক্ষ কর্মীর চাহিদা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। জনশক্তি রফতানির সর্বোচ্চ দেশ সউদী আরব এখন অদক্ষ কর্মীর ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। আউটসোর্সিং কোম্পানীর নামে অনেক বাংলাদেশি লোক ভিসা ট্রেডিং এর মাধ্যমে হাজার হাজার কর্মী নিয়ে দেশটিতে কাজ দিতে পারছে না। কাউকে প্রতি মাসে এক সপ্তাহ দশ দিনের কাজ দিলেও অধিকাংশ সময়ই এসব কর্মীরা কাজ পাচ্ছে না। এতে নানা সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। অনেকে দেশের আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে খাবার কিনে খেতেও বাধ্য হচ্ছে। এনিয়ে সউদীর রিয়াদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস, জেদ্দাস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট, বিএমইটি ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে ভুক্তভোগিদের বিপুল সংখ্যক অভিযোগ পড়ে রয়েছে। পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে এখন দেশটির কর্তৃপক্ষ দক্ষ কর্মী নিয়োগের ওপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। সউদী আরবের হিউম্যান রিসোর্স এন্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্টের তাকামুলের মাধ্যমে স্কিল ভেরিফিকেশন প্রোগ্রাম (এসভিপি) এর আওতায় সউদী গমনেচ্ছু কর্মীদের স্কিল টেস্ট কার্যক্রম (পেশাগত সার্টিফিকেট) ক্লিনার ও লোড/ আনলোডসহ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এখন থেকে অনলাইনে আবেদন করে স্কিল টেস্ট ছাড়া কেউ সউদী আরবে যেতে পারবে না।
সউদী তাকামুল অনুমোদিত বিএমইটির ১৪টি টিটিসি এবং বিআরটিসি’র ১টি ট্রেনিং সেন্টারে সর্বমোট ৭১টি ট্রেডে স্কিল টেস্ট কার্যক্রম জোরেশোরে শুরু হয়েছে। সউদী গমনেচ্ছু কর্মীদের সউদী তাকামুল পোর্টালে ( ংাঢ়-রহঃবৎহধঃরড়হধষ.ঢ়পপ.ংধ) ৫০ মার্কিন ডলার জমা দিয়ে স্কিল টেস্টে অংশ নিতে হয়। এর মধ্যে ২৫ মার্কিন ডলার বিএমইটি ও টিটিসি পায়। গত ২ জুলাই পর্যন্ত সউদী গমনেচ্ছু ২৯ হাজার ৪৫২ জন কর্মী স্কিল টেস্টে অংশগ্রহণ করেন। এসব প্রার্থীর মধ্যে ২১ হাজার ২৭৭ জন উত্তীর্ণ হয়েছে। এদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ভুক্তভোগি ইনকিলাবকে জানান, বিএমইটির বিভিন্ন টিটিসির তাকামুল সেন্টারে দীর্ঘ দিনের দক্ষ সউদী গমনেচ্ছু কর্মীদের কোনো কারণ ছাড়াই ফেল (অনুত্তীর্ণ) দেখাচ্ছে। এতে বারবার তাকামুলে অনলাইন আবেদনে স্কিল টেস্ট দিতে প্রতিবারে ৫০ মার্কিন ডলার দিতে হচ্ছে। এতে বিএমইটি ও টিটিসি চার্জ হিসেবে ২৫ মার্কিন ডলার পেয়ে লাভবান হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে। ফলে সউদী তাকামুল অনুমোদিত টিটিসিগুলোতে প্রতিনিয়ত সউদী গমনেচ্ছু কর্মীরা চরম হয়রানির শিকার হচ্ছে।
বিএমইটির সূত্র জানায়, সউদী তাকামুলের মাধ্যমে স্কিল টেস্ট পরিচালনায় ২০২২ সালের ২৭ মার্চ সউদীর এসভিপি’র আওতায় তাকামুল ও বিএমইটির মধ্যে আনুষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ২০২৩ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি প্রথমে পাইলটিং হিসেবে এসভিপি’র আওতায় ঢাকায় ৫টি ট্রেডে স্কিল টেস্ট কার্যক্রম চালু হয়। দীর্ঘ দিন পার হলেও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় দক্ষ কর্মী তৈরিতে বাস্তবমুখী উদ্যোগ নিতে সক্ষম হয়নি। সারা দেশে ১০৪ টি টিটিসিতে মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণের অভাবে দক্ষ কর্মীর সংখ্যা আশানুরূপ বাড়ছে না। এ নিয়ে প্রবাসী উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল প্রায় ৮ মাস আগে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ঘোষণা দিয়েছিলেন এক মাসের মধ্যেই টিটিসিগুলোতে প্রশিক্ষণের মান বাড়ানো হবে। কিন্তু বাস্তবে তা’ এখনো হয়নি।
জানতে চাইলে বায়রার সাবেক ইসি সদস্য মোহাম্মদ আলী গতকাল সোমবার ইনকিলাবকে বলেন, ভ্রান্ত নীতি ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে শ্রমবাজার সম্প্রসারণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বন্ধকৃত শ্রমবাজার পুনরুদ্ধারে প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের চোখে পড়ার মতো কোনো উদ্যোগ নেই। ওমান, দুবাই, লিবিয়া, ইরাক, বাহরাইন, ব্রুনাই, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার পুনরুদ্ধারে সরকার চরমভাবে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। সংশ্লিষ্ট দেশে বাংলাদেশি মিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা শ্রমবাজার পুনরুদ্ধারে কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। তিনি বলেন, ভারতের ভিসা বন্ধ থাকায় ইউরোপের দেশগুলোতে বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগে চরম ভাটার টান শুরু হয়েছে। আগে ইউরোপ গমনেচ্ছু কর্মীরা দিল্লি গিয়ে ওয়ার্ক ভিসা নিয়ে আসতো। এখন দিল্লি যেতে না পারায় অনেক চাহিদা থাকার পরেও বাংলাদেশিরা ইউরোপের শ্রমবাজারে ঢুকতে পারছে না। এতে অনেক বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক পথে বসছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগে ঢাকায় অধিকাংশ ইউরোপীর দেশের দূতাবাসের লেবার উইং চালু হবার ঢাক-ঢোল পেটানো হলেও বাস্তবে তা’ স্বপ্ন হিসেবেই রয়েছে। ফলে ইউরোপ গমনেচ্ছু শত শত কর্মী দীর্ঘ দিন যাবত চরম হয়রানির শিকার হচ্ছেন। তিনি বলেন, জনশক্তি রফতানির সর্বোচ্চ শ্রমবাজার সউদী আরব দক্ষ কর্মী নিয়োগের নিশ্চয়তায় তাকামুলের মাধ্যমে স্কিল টেস্টে পরীক্ষা নিয়ে কর্মী নেয়ার প্রক্রিয়া চালু করেছে। এতেই বুঝা যাচ্ছে বিদেশে চাকরি নিয়ে যেতে হলে দক্ষ হিসেবেই যেতে হবে। এতে দেশের রেমিট্যান্স আয়ের পরিমাণও বাড়বে। জনশক্তি রফতানিতে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করতে হলে দক্ষ জনশক্তি রফতানির বিকল্প নেই বলেও বায়রার সাবেক নেতা মোহাম্মদ আলী উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিপুল পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের এ খাতটি যাতে কিছুতেই কোনো রকম হুমকির মুখে না পড়ে সে ব্যাপারেও সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশ ১৬৮টি দেশে কর্মী পাঠায়, এটি সরকারের দাবি হলেও ৯০ শতাংশের বেশি কর্মী যান গুটিকয়েক দেশে। বিএমইটির তথ্য বলছে, ২০২২ সালে বিদেশে গেছেন ১১ লাখ ৩৫ হাজার ৮৭৩ জন কর্মী। এর মধ্যে সউদী আরব যান ৬ লাখ ১২ হাজার ৪১৮ জন। ২০২৩ সালে মোট কর্মী রফতানি হয় ১৩ লাখ ৫ হাজার ৪৫৩ জন; সউদী আরব যান ৪ লাখ ৯৭ হাজার ৬৭৪ জন। গত বছর মোট ১০ লাখ ১১ হাজার ৯৬৩ জনের মধ্যে সউদী আরব গেছেন ৬ লাখ ২৮ হাজার ৫৬৪ জন।
গত এক বছরে মালয়েশিয়া, ইউএই এবং ওমান তাদের শ্রমবাজার বন্ধ করে দিয়েছে। কাতার, কুয়েত এবং সউদী আরব বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ কমিয়েছে। এ অবস্থায় অভিবাসন খাতের পতন ঠেকাতে প্রচলিত বাজার পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি নতুন বাজার সৃষ্টির দিকে সরকারের নজর বাড়াতে হবে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, সরকার নতুন শ্রমবাজার খোঁজার চেষ্টা করছে। এর মধ্যে রয়েছে রাশিয়া, পর্তুগাল, মাল্টা, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম ও ইরাক। এজন্য দক্ষ শ্রমিক তৈরি করতে প্রশিক্ষণ বাড়ানো এবং ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে সরাসরি চুক্তি করার উদ্যোগ রয়েছে। বেশ কিছু নতুন শ্রমবাজার নিয়ে কাজ চলছে। ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসররা এখনো ইরাকের বাগদাদে বাংলাদেশ দূতাবাসে বহাল তবিয়তে। ফলে দেশটির শ্রমবাজার পুনরুদ্ধারে কোনো উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না।
ইরাকস্থ বাংলাদেশ প্রবাসী কল্যাণ সংস্থার সভাপতি মো. খোরশেদ আলম মজিদ গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, ইরাকের বর্তমান পরিস্থিতি খুবই ভালো। দেশটিতে প্রচুর উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। একজন বাংলাদেশি নির্মাণ শ্রমিক কমপক্ষে ৪ থেকে ৫শ’ মার্কিন ডলার বেতন পাচ্ছে। কিন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য ২০১৮ সালের শেষের দিকে ফ্যাসিস্ট সরকারে দোসর ইরাকের বাগদাদে বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত ফরহাদ ও তৎকালীন লেবার কাউন্সেলর রেজাউল করিমের মাঝে কর্মী প্রেরণের সত্যায়নের বকশিসের টাকার ভাগবাটোয়ার নিয়ে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হওয়ায় দূতাবাস থেকে ইরাক সরকারকে এক চিঠি দিয়ে বাংলাদেশি কর্মীদের ১ বছরের মাল্টিপোল ভিসা বন্ধ হয়ে যায়। ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসররা এখনো বাগদাদ দূতাবাসে বহাল তবিয়তে। এসব ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসররা নানা অযুহাত তুলে দেশটির শ্রমবাজার পুনরুদ্ধারে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। কূটনৈতিক উদ্যোগ নিলে শুধু ইরাকেই দুই থেকে তিন লাখ বাংলাদেশির চাকরির সুযোগ রয়েছে। এই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে তিনি প্রধান উপদেষ্টার প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন। বাগদাদে কোনো বাংলাদেশি ব্যাংক না থাকায় ইরাকে কর্মরত হাজার হাজার কর্মী দুবাই হয়ে হুন্ডির মাধ্যমে দেশে রেমিট্যান্স পাচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। এতে সরকার প্রচুর রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেই বাংলাদেশের শ্রমবাজার সবচেয়ে বেশি সম্প্রসারিত। সেখানে চিকিৎসক এবং নার্সের ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু চাহিদার তুলনায় সেখানে ডাক্তার ও নার্স পাঠাতে পারছে না বাংলাদেশ। মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহে ডাক্তার এবং নার্সের যে চাহিদা রয়েছে সে চাহিদা পূরণে বাংলাদেশ থেকে ডাক্তার ও নার্স পাঠানোর ব্যবস্থা করতে পারলে জনশক্তি রফতানির আয় সহজেই বাড়ানো যায়।
সেন্ডিং কান্ট্রিগুলো এখন আর অদক্ষ কর্মী পাঠানোর পরিবর্তে দক্ষ কর্মী প্রেরণেই বেশি তৎপর। এ কারণে দক্ষ জনশক্তির শ্রমবাজার প্রায় হারাতে বসেছে বাংলাদেশ। সাম্প্রতিককালে সউদী সরকার সে দেশের স্বাস্থ্য সেক্টরে ব্যাপক বিনিয়োগ ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন কর্মকা- করছে। ফলে চিকিৎসক-নার্স ও অন্যান্য দক্ষ জনশক্তির ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সউদী আরব, কুয়েত, কাতার, বাহরাইন, ওমান, লিবিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের বেশিরভাগ দেশ ডাক্তার-নার্স নেওয়ার জন্য ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইন, নেপালের মতো দেশের দিকে ঝুঁকছে। অথচ এক্ষেত্রে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হলে বাংলাদেশ মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বড় এই দক্ষ জনশক্তির বাজার ধরতে পারতো। মালয়েশিয়ার বন্ধ শ্রমবাজার পুনরুদ্ধারেও সরকার কোনো সফলতার স্বাক্ষর রাখতে পারছে না। ফলে দালাল চক্রের মাধ্যমে এয়ারপোর্ট কান্ট্রাক্টে ভিজিট ভিসায় দেশটিতে কর্মী যাচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। মালয়েশিয়ার সারওয়াক থেকে নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনালের ওভারসীজ ডিরেক্টর মো.বাবুল হোসেন গতকাল ইনকিলাবকে জানান, সারওয়াকে প্রচুর বাংলাদেশি কর্মীর চাহিদা রয়েছে। এক্ষেত্রে সরকারি উদ্যোগের অভাবে সারওয়াকের বাজার হাতছাড়া হবার উপক্রম। বিশ জন কর্মী নিয়োগের চাহিদাপত্র হাতে পেয়েছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন। বিদেশগামী কর্মী ও ওমরাহযাত্রীদের টিকিটের ভাড়া রাতারাতি আকাশচুম্বি হওয়ায় আটাবের সভাপতি আব্দুস সালাম আরেফ ও মহাসচিব আফসিয়া জান্নাতের আহবানে রোববার আটাব কার্যালয়ে এক প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে আটাব নেতৃবৃন্দ বিদেশগামী কর্মীদের ও ওমরাহযাত্রীদের টিকিট নিয়ে সিন্ডিকেট চক্রের আকাশচুম্বি মূল্য বৃদ্ধির তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়। নেতৃবৃন্দ বলেন, বিমানের সিস্টেমে কোনো সিট খালি নেই। অথচ বিভিন্ন রুটে বিমানের অর্ধেক সিটই খালি যাচ্ছে। আটাব নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে বিদেশগামী কর্মী ও ওমরাহযাত্রীর বিমান ভাড়া সহনীয় পর্যায়ে কমিয়ে আনার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার লক্ষ্যে সরকারের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।