
গণভবনে বসে সংবাদ সম্মেলন করার ঘটনাকে ‘পোয়েটিক জাস্টিস বা আল্লাহর বিচার’ বলে মন্তব্য করেছেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
আর গণভবনকে ‘স্বৈরাচারের পাহাড়’ মন্তব্য করে নারী ও শিশু বিষয়ক উপদেষ্টা শারমীন এস. মুরশিদের পাল্টা প্রশ্ন ছিল, “এখান থেকে শুরু করব না তো কোথা থেকে শুরু করব?''
জুলাই কন্যা দিবস উদযাপনের মধ্য দিয়ে সোমবার থেকে শুরু হয়েছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে পুনর্জাগরণ অনুষ্ঠানমালা।
এ অনুষ্ঠানমালার বিস্তারিত তুলে ধরতে এদিন দুপুর ২টায় গণভবনে সংবাদ সম্মেলন হয়।
সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিক বলেন, “গণভবনে আপনারা সংবাদ সম্মেলন করছেন। আমরা দেখেছি, আগে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে হত। আজ ১৪ তারিখ। এই ১৪ তারিখে আমরা এক ধরনের সংবাদ সম্মেলন গতবছর দেখেছিলাম ‘রাজাকার ইস্যুতে’। আজকের সংবাদ সম্মেলনটা সেটারই কোনো রেটরিক বা মেটাফোরিক্যাল কি না?”
জবাবে সংস্কৃতি উপদেষ্টা বলেন, “আপনাকে ধন্যবাদ। আমি এমন একটা প্রশ্নের অপেক্ষাতেই ছিলাম, যেটা শেষমেশ এল।”
ওই সাংবাদিককে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, “আপনি একেবারে সঠিক কথা বলেছেন। আমি মনে করি এটা ‘পোয়েটিক জাস্টিস’।
“এই গণভবনে, আমার পেছনে যেটা, সেই দালানটা। আমাদের দেশের রাষ্ট্রক্ষমতার শীর্ষে বসে একজন মানুষ দম্ভ করে সবাইকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতেন। বলতেন, ‘১৬ কোটি মানুষকে আমি খাওয়াই’।”
উপদেষ্টা বলেন, “১৪ তারিখে এই গণভবনের ভেতরে সংবাদ সম্মেলনে কী হয়েছিল, আপনারা জানেন। পোয়েটিক জাস্টিস এ কারণে যে, আজ সেই গণভবনে সংবাদ সম্মেলন হচ্ছে।
“সংবাদ সম্মেলনের পরে যেসব মেয়ে রাস্তায় নামবে, তাদের সেলিব্রেট করার জন্য আমরা আজ প্রেস কনফারেন্স করছি। আমি মনে করি, এটা পোয়েটিক জাস্টিস বা আল্লাহর বিচার।”
সংবাদ সম্মেলনে নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস. মুরশিদ ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।
গণভবনে সংবাদ সম্মেলন করার বিষয়ে শারমীন এস. মুরশিদ বলেন, ''যেই পাহাড়ে বসে স্বৈরাচার শাসন করেছে, জুলাই আন্দোলন সেই পাহাড়টা ঘুড়িয়ে দিয়েছে। তো এখান থেকে শুরু করব না তো আর কোথা থেকে শুরু করব?''
এক সাংবাদিক বলেন, এই গণভবন থেকেই গণহত্যার পরিকল্পনা হয়েছিল এবং সেটা বিভিন্ন তদন্ত সংস্থার প্রতিবেদনে এসেছে। জায়গাটা তো একটা ক্রাইম সিন। জুলাই জাদুঘর করতে গেলে এই ক্রাইমসিন নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয় কি না?
জবাবে সংস্কৃতি উপদেষ্টা বলেন, “প্রথম কথা হচ্ছে, এখান থেকে যা যা প্রমাণ প্রয়োজন, সেগুলো আমাদের সঙ্গে কোলাবরেশনের ভিত্তিতে ট্রাইব্যুনাল অলরেডি নিয়ে গেছে। ফলে এখানে যে জিনিসগুলো আদালতে আলামত হিসেবে উপস্থাপিত হবে, এগুলো আইসিটির হেফাজতে আছে। আমাদের কাছে শুধু এটার কপি আছে। যখন বিচার শেষ হয়ে যাবে, তখন এটার অরিজিনাল কপি আমাদের কাছে আসবে। এটা প্রথম উত্তর।
“আর দ্বিতীয়ত আপনি ঠিকই বলেছেন— এই বাড়িতে বসে খুনের পরিকল্পনা হয়েছে। এই বাড়ির যে অফিস রুমটা আছে, সেখানে গেলে আপনাদের গা ছমছম করবে।
“কিছুদিন আগে একটা অডিও আপনারা শুনেছেন।… অডিওটা খুব সম্ভবত এই অফিসে বসে উনি কথা বলেছেন। তাই এসব জায়গা হার্ডকোর ক্রাইম হরর। ফলে ওই এক্সপেরিয়েন্সটা—আপনারা যখন জুলাই মিউজিয়ামে আসবেন, এক্সপেরিয়েন্সের ভিতর দিয়ে যাবেন, ওই বেদনার ভিতর দিয়ে যাবেন।”
ফারুকী বলেন, “আমাদের উদ্দেশ্য খুব সিম্পল। শেখ হাসিনা এবং তার গ্যাংয়ের অপরাধের বিচার তো আদালত করবেই, আর এই জাদুঘরটা হচ্ছে এদের অপরাধের আজীবনের বিচার। ভিজিটর একবার করে এখানে আসবেন এবং উনি উনার মত করে বিচার করবেন।”
আরেক প্রশ্নে ফারুকী বলেন, “আমরা আগে (জাদুঘর) বানানো শেষ করি, তারপর এটার একটা আইনি কাঠামো— এটা ট্রাস্টের ভিত্তিতে পরিচালিত হবে, না কীভাবে হবে, সেটা ঠিক করা হবে।”
“আমি মনে করি, বাংলাদেশে এটা ডিসাইডেড যে হাসিনার এসব অপকর্ম একদিকে, আর সারা বাংলাদেশ আরেক দিকে। এখন রাজনৈতিক কারণে বিভিন্ন রাজনৈতিক স্টেকহোল্ডারস, সোশ্যাল স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে মতবিরোধ থাকবে, যেটা যেকোনো ডেমোক্রেটিক সোসাইটির সৌন্দর্য। তর্কবিতর্ক থাকবে—এটাও সৌন্দর্য। কিন্তু হাসিনার ১৬ বছরের দুঃশাসন এবং জুলাই—আমার বিশ্বাস এই প্রশ্নে বাংলাদেশের পলিটিক্যাল স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই।”
‘পুনর্জাগরণ’ অনুষ্ঠানমালার খরচের প্রসঙ্গও আসে সংবাদ সম্মেলনে।
সংস্কৃতি উপদেষ্টা বলেন, ''এটার ক্ষেত্রে একটা টাকাও কোনো মন্ত্রণালয়কে বাড়তি বরাদ্দ দেওয়া হয় নাই। মন্ত্রণালয় তার যে রেগুলার বাজেট, রুটিন বাজেট, সেই রুটিন ওয়ার্ক থেকে এই কাজটা করছে। ফলে এটার জন্য রাষ্ট্রকে বাড়তি কোনো টাকা বরাদ্দ দিতে হয়নি।”
একই প্রশ্নের উত্তরে নারী ও শিশু বিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, “আমরা যে কাজটা করছি, আসলে আমরা কোনো বাড়তি বরাদ্দ নিয়ে করছি না। গবেষণার ক্ষেত্র আছে, নারীদের ক্ষমতায়নের কর্মসূচি আছে, বাজেট আছে—সেগুলোকেই আমরা কাজে লাগাচ্ছি।”