
পুশব্যাক বা পুশইন যেটাই বলেন এটা প্রতিনিয়ত হচ্ছে। হয়তো মাঝেমধ্যে ২/১ দিন বন্ধ থাকছে। কিন্তু চূড়ান্ত প্রক্রিয়াটা পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। এমন মন্তব্য করেছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী।
তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমরা আমাদের পক্ষ থেকে বিএসএফের কাছে কড়া প্রতিবাদ সবসময় দিচ্ছি। আমরা বলেছি নিয়মমাফিকভাবে হ্যান্ডওভার করতে।
বিজিবির ১০৩তম রিক্রুট ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ আজ (বৃহস্পতিবার) চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার বায়তুল ইজ্জতে বিজিবির ঐতিহ্যবাহী প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার এন্ড কলেজের (বিজিটিসিএন্ডসি) বীর উত্তম মজিবুর রহমান প্যারেড গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে নবীন সৈনিকদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ শেষে সাংবাদিকদের করা প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি। এ সময় বিজিটিসিএন্ডসির কমান্ড্যান্ট ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গাজী নাহিদুজ্জামানসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, আমরা বলেছিলাম নিয়মমাফিকভাবে হ্যান্ডওভার করতে। যদি আমাদের কেউ (বাংলাদেশি) অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশ করে থাকে তাহলে আমরা বিএসএফকে বুঝিয়ে মিটিংয়ের মাধ্যমে সমঝোতা করে তাদের ফিরিয়ে আনা নিশ্চিত করেছি। কিছু কিছু জায়গায় তারা আমাদের কাছে অফিসিয়ালি হ্যান্ডওভার করছে। কিন্তু সবক্ষেত্রে বিএসএফ শুনছে না। কিছু কিছু জায়গায় পুশ ইন এখনো চলছে।
বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, আমরা বিএসএফকে বলার পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একাধিকবার ভারতীয় হাই কমিশনে লেখা হয়েছে। বাংলাদেশ দূতাবাসেও লেখা হয়েছে। বাংলাদেশে ভারতীয় দূতাবাসের হাইকমিশনারের সঙ্গে আমি যোগাযোগ রাখছি। আমরা এটা প্রতিহত করার চেষ্টা করছি। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যারা আসছেন তারা বাংলাদেশি যারা আগে ভারতে গিয়েছিল।
তবে তিনি বলেন, শুধু বাংলাদেশিকেই পুশইন করানো হচ্ছে না, কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভারতীয় নাগরিককেও পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে, কিছু কিছু রোহিঙ্গা নাগরিককেও পাঠিয়ে দিচ্ছে, যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল হয়ে যাচ্ছে বলে কঠোর প্রতিবাদ করেছি।
এক প্রশ্নের জবাবে বিজিবি ডিজি বলেন, জনবলের সংকট রয়েছে। এটা আপেক্ষিক একটা বিষয়। আমাদের জনবল সব মিলে প্রায় ৫৭ হাজার। আমাদের ৪৪২৭ কিলোমিটারের অত্যন্ত দীর্ঘ বর্ডার। বিভিন্ন ধরনের প্রতিকূল ভূমিও আছে। সে তুলনায় জনবল আমাদের আরও বাড়ানো প্রয়োজন। জনবল বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে।
তিনি বলেন, কিছুদিন আগে উখিয়াতে একটা ব্যাটালিয়ন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। আরো বিভিন্ন জায়গায় আরো কিছু ব্যাটালিয়ন চালু করার প্রক্রিয়া চলছে। নতুন নতুন বিওপি বাড়ানো হচ্ছে। অচিরেই আরও ৫ হাজারের মতো জনবল বৃদ্ধির আশ্বাস আমাদের দিয়েছে বর্তমান সরকার। অচিরেই আমরা হয়তো এই রিক্রুটমেন্ট এবং ট্রেনিং শেষ করে, বর্ডারে অন্যান্য কার্যক্রমসহ আসন্ন যে জাতীয় নির্বাচন সেখানেও আমরা কাজে লাগাতে পারি। গতকালই প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আমাদের এ সংক্রান্ত বিষয়ে বৈঠক হয়েছে। এ ব্যাপারে পর্যাপ্ত আলোচনা হয়েছে। শুধু বিজিবি না অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ও জনবলসহ অন্যান্য সংকট দূরকরণে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, জনবল বৃদ্ধি সময় সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল একটি ব্যাপার। এটা চলমান প্রক্রিয়া, আমরা চেষ্টা করব জনবল আরও বেশি করার জন্য।
জাতীয় নির্বাচন সম্পন্নে প্রস্তুতি চলছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আপনাদের কোনো প্রস্তুতি বা নির্দেশনা রয়েছে কি না? এসব প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, সীমান্ত রক্ষা বা নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পরই বাকি জনবলগুলো আমরা সুষ্ঠু-সুন্দর ফেয়ার জাতীয় নির্বাচনের জন্য যে সাপোর্টটুকু দেওয়া দরকার তা যেন দিতে পারি।
তিনি বলেন, সীমান্তের ৮ কিলোমিটার এলাকায় ভোট কেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তা ও সুষ্ঠু ভোটগ্রহণে বিজিবির স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নিয়োজিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ভবিষ্যতে এটা নির্বাচন কমিশন বা সরকার যেভাবে দায়িত্ব দেয় আমরা সেভাবে কাজ করবো। এ ব্যাপারে নির্বাচন কেন্দ্রে, বা ভোট কেন্দ্রে যদি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয় বা জনজীবনের নিরাপত্তা হানি ঘটে সেজন্য শুধু বিজিবি নয় পুলিশ, আনসার, কোস্ট গার্ডসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সকল বাহিনীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সকলকে বাহিনীকে নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার উপস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।