Image description
পুলিশের অস্ত্রে চলছে ডাকাতি, দস্যুতা, খুনাখুনি পাঁচ হাজার ৭৫৩টি অস্ত্র লুট করা হয়েছিল উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে চার হাজার ৩৮৪টি অস্ত্র এক হাজার ৩৬৯টি অস্ত্র উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি

রাজধানী ঢাকাসহ দেশে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার বাড়ছেই। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থানা ও ফাঁড়ি থেকে লুট হয় পুলিশের অস্ত্র ও গোলাবারুদের একটি অংশ। এখন এসব অস্ত্র ব্যবহার করে খুনাখুনি, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধ করছে দুর্বৃত্তরা।

অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশে অপরাধ বৃদ্ধির বড় কারণ অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার। লুট হওয়া পুলিশের অস্ত্রেও বাড়ছে অপরাধ। বিশেষ করে রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তার ও মাদক কারবারে অবৈধ অস্ত্র বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র বলছে, গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে দেশের ৬৬৪টির মধ্যে ৪৬০ থানায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট হয়। ১১৪টি ফাঁড়িতেও লুটপাট চালায় দুর্বৃত্তরা।

থানা ও ফাঁড়িতে হামলা চালিয়ে পিস্তল, রিভলভার, শটগানসহ ১১ ধরনের পাঁচ হাজার ৭৫৩টি অস্ত্র লুট করে হামলাকারীরা। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র বলছে, এখন পর্যন্ত লুট হওয়া চার হাজার ৩৮৪টি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি এক হাজার ৩৬৯টি অস্ত্র উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া লুট হওয়া ছয় লাখ ৫১ হাজার ৮৩২টির মধ্যে তিন লাখ ৯৪ হাজার ৮৭টি গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি দুই লাখ ৫৭ হাজার ৮৪৫টি গোলাবারুদ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানান, লুট হওয়া অস্ত্রের বড় অংশ এখন সন্ত্রাসী, ডাকাত, ছিনতাইকারী, মাদক কারবারি ও কিশোর গ্যাংয়ের হাতে চলে গেছে। লুটের এসব অস্ত্র কেউ কেউ নিজের কাছে রেখেছে, আবার কেউ বিক্রি করে দিয়েছে। লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারে গত সেপ্টেম্বরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী জোরেশোরে নেমেছিল। পরে তার গতি কমে যায়। যদিও যৌথ বাহিনী বিভিন্ন স্থানে আবার অভিযান শুরু করেছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর কালের কণ্ঠকে বলেন, থানা থেকে লুট হওয়া পুলিশের অস্ত্রের পাশাপাশি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চলছে। এরই মধ্যে অনেক অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে।

পুলিশ বলছে, লুট হওয়া অস্ত্র দিয়ে গত বছরের অক্টোবর-নভেম্বরে মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে গোলাগুলি করে একাধিক হত্যাকাণ্ডসহ নানা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানো হয়েছে। গত বছরের নভেম্বরে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে থেকে উদ্ধার করা হয় ময়মনসিংহের কোতোয়ালির মো. মোতালেবের মেয়ে শাহিদা ইসলামের গুলিবিদ্ধ লাশ। তিনি পুরান ঢাকার ওয়ারীতে মা ও ভাইয়ের সঙ্গে ভাড়া বাসায় থাকতেন। এ ঘটনায় তাঁর প্রেমিক তৌহিদ শেখ তন্ময়কে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে জানা যায়, শাহিদাকে যে অস্ত্র দিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, সেটি ছিল পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র।

পুলিশের তথ্য বলছে, উদ্ধার না হওয়া বিপুলসংখ্যক আগ্নেয়াস্ত্র অপরাধীদের হাতে চলে গেছে বহু আগেই। সর্বশেষ গত ২৮ মে চট্টগ্রামের পাহাড়তলী থানা এলাকা থেকে মো. পারভেজ ও রিয়াজুর রহমান নামের দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ সময় দুজনের কাছ থেকে ধারালো দেশি অস্ত্রসহ একটি রিভলভার ও গুলি উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ বলছে, এসব রিভলভার ও গুলি গত বছরের ৫ আগস্ট পাহাড়তলী থানা থেকে লুট করে দুর্বত্তরা। ওই দুই ব্যক্তি লুট করা অস্ত্র দিয়ে পাহাড়তলী টোল সড়কে বিমানবন্দর ও পতেঙ্গাগামী যাত্রীদের ছিনতাই করত। গত বছরের ১৪ আগস্ট থেকে চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থান থেকে অস্ত্র উদ্ধার করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। এর বেশির ভাগই বিদেশি পিস্তল ও রিভলভার। এ ছাড়া চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে পুলিশ চট্টগ্রাম নগর থেকে অস্ত্র ও গুলিসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে। পরে পুলিশ জানতে পারে, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা ডাকাত ও ছিনতাইকারী দলের সদস্য। উদ্ধার হওয়া অস্ত্র চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানা থেকে তারা লুট করেছিল।

গত ১৭ এপ্রিল ভোরে চট্টগ্রাম নগরের ডবলমুরিং থানার বারিক বিল্ডিং মোড় থেকে আরিফ হোসেন নামের এক ব্যক্তিকে থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র ও গুলিসহ গ্রেপ্তার করে নগরের পুলিশ। পরে তাঁর আস্তানা থেকে ইতালির তৈরি একটি পিস্তল ও ৫০ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। ডবলমুরিং থানার ওসি রফিক আহমেদ বলেন, গ্রেপ্তার আরিফ ডাকাতদলের নেতা।