
নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়রপ্রার্থী ও স্বঘোষিত ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্ট জোহরান মামদানি রোববার (স্থানীয় সময়) এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমার মনে হয় না আমাদের সমাজে কোটিপতি থাকা উচিত।’ এনবিসি নিউজ-এর ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে উপস্থাপক ক্রিস্টেন ওয়েলকার তাকে প্রশ্ন করেন : আপনি নিজেকে ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্ট বলেন। আপনি কি মনে করেন কোটিপতিদের থাকার অধিকার আছে?
উত্তরে মামদানি বলেন, ‘আমি মনে করি না আমাদের সমাজে কোটিপতি থাকা উচিত। কারণ এটি অসমতার এক চরম রূপ-এক দিকে বিপুল অর্থ, অন্য দিকে এত মানুষের অভাব। আমাদের দরকার আরো বেশি সমতা-শহরে, রাজ্যে এবং গোটা দেশে।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমি ধনীদের সাথেও কাজ করতে প্রস্তুত, যেন আমরা সবাই মিলে একটি ন্যায়সঙ্গত শহর গড়ে তুলতে পারি।’
এই সপ্তাহে আমেরিকান রাজনীতি পর্যবেক্ষকদের চমকে দিয়ে মামদানি নিউইয়র্ক সিটির ডেমোক্র্যাটিক মনোনয়নের দৌড়ে সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুওমোকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যান। নির্বাচিত হলে মামদানি হবেন নিউইয়র্ক সিটির প্রথম মুসলিম ও এশীয় বংশোদ্ভূত মেয়র।
এক্স (সাবেক টুইটার) এ পোস্ট করে মামদানি বলেন, ‘নেলসন ম্যান্ডেলার ভাষায় : এটি সবসময়ই অসম্ভব মনে হয় -যতক্ষণ না এটি হয়ে যায়। বন্ধুরা, এটি সম্পন্ন হয়েছে। আর আপনারাই এটি সম্ভব করেছেন। আমি গর্বিত নিউ ইয়র্ক সিটির ডেমোক্র্যাটিক মনোনীত প্রার্থী হতে পেরে।’
‘মিট দ্য প্রেস’-এ তিনি আরো বলেন, ‘নিউ ইয়র্কের প্রতি চারজনে একজন দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করছে, আর অন্যরা রয়ে গেছে এক অনিশ্চয়তার জালে। এই শহরকে এমন হতে হবে, যা প্রতিদিনের পরিশ্রমে যারা এটি গড়ে তুলছে তাদের যেন নাগালের মধ্যে থাকে।’
মামদানি ‘ভদ্র না হলে’ নিউ ইয়র্ক সিটির অর্থ বন্ধের হুমকি ট্রাম্পের : গত রোববার (স্থানীয় সময়) প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুমকি দিয়েছেন যে, যদি নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র পদে ডেমোক্র্যাটিক সোশালিস্ট প্রার্থী জোহরান মামদানি নির্বাচিত হন এবং ‘শিষ্ট আচরণ’ না করেন, তাহলে শহরটির জন্য ফেডারেল অর্থায়ন বন্ধ করে দেবেন তিনি।
মামদানি অবশ্য ট্রাম্পের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, ‘আমি কমিউনিস্ট নই।’ তবে তিনি নিজের অবস্থানে অটল থেকে বলেন, ‘আমি মনে করি না সমাজে কোটিপতিদের থাকা উচিত,’ এবং নিউ ইয়র্কের ধনীদের ওপর কর বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতিও পুনর্ব্যক্ত করেন।
ফক্স নিউজে মারিয়া বার্টিরোমোর সাথে এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, “মামদানির জয় অসম্ভব বলে মনে করি, কারণ সে একজন বিশুদ্ধ কমিউনিস্ট।” তিনি আরো বলেন, “ধরুন সে জিতে যায়, আমি তখন প্রেসিডেন্ট থাকব। সে যদি সঠিক কাজ না করে, তাহলে তারা এক ডলারও পাবে না।” নিউ ইয়র্ক শহরে ফেডারেল বিভিন্ন কর্মসূচি ও সংস্থার মাধ্যমে বছরে $১০০ বিলিয়নেরও বেশি অর্থ প্রবাহিত হয়, শহরের কম্পট্রোলারের হিসাব অনুযায়ী।
এ দিকে এনবিসির ‘মিট দ্য প্রেস’-এ মামদানি বলেন, ‘আমি কমিউনিস্ট নই।’ তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার গায়ের রঙ, উচ্চারণ, পরিচয় নিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কথা বলেন শুধু জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে নিতে।
মামদানি বলেন, তিনি মার্কিন নাগরিক অধিকার আন্দোলনের নেতা মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের কথায় অনুপ্রাণিত, যিনি বলেছিলেন : “ডেমোক্র্যাসি বলুন বা ডেমোক্র্যাটিক সোশালিজম দেশের প্রতিটি মানুষ যেন সঠিকভাবে সম্পদের ভাগ পায়, সেটাই আসল কথা।”
তিনি বলেন, তার করনীতির লক্ষ্য হলো বহির্বর্তী এলাকা যেমন ব্রঙ্কস বা কুইন্সের মধ্যবিত্তদের ওপর থেকে করের বোঝা সরিয়ে ধনীদের ওপর কর আরোপ করা। মামদানির কথায়, “এটি জাতিভিত্তিক নয়, বরং যে এলাকাগুলো করবঞ্চিত, সেগুলোর একটি বাস্তব মূল্যায়ন।”
তার জয় নিয়ে অনেক মধ্যপন্থী ডেমোক্র্যাট উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। নিউ ইয়র্ক গভর্নর ক্যাথি হোকুল বলেন, “আমাদের মাঝে কিছু মতভেদ আছে, তবে কথাবার্তা চালিয়ে যেতে হবে।” মামদানি বলেন, “আমার নীতিমালা বাস্তবতার নিরিখে তৈরি। মানুষ এখন বোঝতে পারছে, ডেমোক্র্যাটিক পার্টি যদি সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ায়, তবে ট্রাম্পীয় কর্তৃত্ববাদের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব।” ট্রাম্প মামদানির জয় নিয়ে প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “এটা সত্যিই চমকে দেয়ার মতো।” তিনি মামদানির ইসরাইল-বিরোধী অবস্থান, অভিবাসন নীতির সমালোচনা এবং নেতানিয়াহুকে গ্রেফতারের হুমকি নিয়েও তীব্র সমালোচনা করেন। বলেন, “সে এক উন্মাদ বামপন্থী।”
জবাবে মামদানি বলেন, “ডেমোক্র্যাটরা কেবল ট্রাম্পের বিরুদ্ধে নয়, নিজেদের পক্ষেও কিছু নিয়ে এগিয়ে আসুক। আমাদের এই প্রচারাভিযান শ্রমজীবী মানুষের পক্ষে সম্মান পুনরুদ্ধারের জন্য।”