
সংবাদ প্রকাশ করে ভুয়া (ফেইক) হওয়ার কারণে তা প্রত্যাহার করে নেয়ার ক্ষেত্রে শীর্ষস্থানে রয়েছে প্রথম আলো। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে দৈনিক কালবেলা এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছে দৈনিক ইত্তেফাক।শনিবার সকালে প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআইবি) আয়োজিত সেমিনারে এক গবেষণা প্রবন্ধে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। গবেষণাটি করেন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলা ভাষা সমৃদ্ধকরণ (ইবিএলআইসিটি) প্রকল্পের পরামর্শক মামুন অর রশীদ। তার গবেষণার শিরোনাম ছিল ‘বাংলাদেশের গণমাধ্যমর সাম্প্রতিক অপতথ্যের গতি-প্রকৃতি।
এতে বলা হয়, গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার বিপ্লবের পর দেশের গণমাধ্যমে ভুয়া (ফেইক) খবর প্রকাশের প্রবণতা বেড়েছে। এ প্রবণতা এতোটাই বেড়েছে যে মূলধারার শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যমেও ভুয়া (ফেইক) খবরের ছড়াছড়ি।
গণমাধ্যমগুলো সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ খবর প্রকাশের চেয়ে ভাইরাল হওয়ার দিকেই মনোযোগ বেশি দিচ্ছে। এ ধরনের খবর গণমাধ্যমে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রচার করা হচ্ছে। ভাইরাল নিউজের বাণিজ্যিক ও আর্থিক মূল্য বিবেচনায় এমনটা করা হচ্ছে।

ভুয়া (ফেইক) খবর প্রকাশের পর নিউজ প্রত্যাহারের তালিকায় অন্য গণমাধ্যমগুলোর মধ্যে রয়েছে যথাক্রমে দৈনিক যুগান্তর, ডেইলি স্টার, ঢাকা পোস্ট, বাংলা টিবিউন, বিডিনিউজ, দৈনিক কালের কণ্ঠ, যমুনা টিভি, বিবিসি বাংলা, চ্যানেল২৪বিডি, সময় নিউজ, জাগোনিউজ২৪, বাংলানিউজ২৪, দৈনিক জনকণ্ঠ, ঢাকা টিবিউন, টিবিএস, দৈনিক দেশ রুপান্তর, দৈনিক ইনকিলাব, আইটিভি, সময়ের কণ্ঠস্বর, একাত্তর, এনটিভি ওয়েব, যায়যায়দিন, আমাদের সময়, সময়ের আলো, বিডি প্রতিদিন।
মামুন অর রশীদ বলেন, ‘এটি আমার নিজস্ব গবেষণা কর্ম, গত জানুয়ারি থেকে চলতি জুন মাস নাগাদ গবেষণায় এ সব চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণা কর্মটি জার্নালে প্রকাশের জন্য আরো তথ্য হালনাগাদ করা হচ্ছে।’
গবেষণায় ফ্যাক্ট-চেক সাইট থেকে নেয়া ছয় মাসের স্ক্র্যাপ ডেটা, মূলধারার গণমাধ্যমের ৬৯৪টি পৃথক ডেডলিংকসহ ৫টি পদ্ধতির কথা উল্লেখ করা হয়।
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহম্মদ তৈয়্যব আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পরিমাণ মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। দল থেকে শুরু করে প্রার্থী পর্যায়েও এই মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হতে পারে বলেও জানান তিনি।
ফয়েজ আহম্মদ বলেন, বানোয়াট ও চাঞ্চল্যকর তথ্য মানুষ বেশি পছন্দ করে, তাই অনেক গণমাধ্যম আর্থিকভাবে লাভবান হবার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে বানোয়াট তথ্য ছড়ায়। ৫ আগষ্টের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আওয়ামী লীগের উপস্থিতি অনেকটাই বেড়েছে। যার বিপরীতে সামাজিক মাধ্যমে বিএনপিসহ বিরোধীদের উপস্থিতি প্রায় অর্ধেক বলেও দাবি করেন তিনি।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পড়েন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলা ভাষা সমৃদ্ধকরণ (ইবিএলআইসিটি) প্রকল্পের পরামর্শক মামুন অর রশীদ। প্রবন্ধের ওপর মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন বিভিন্ন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব। সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন পিআইবির জ্যেষ্ঠ গবেষণা কর্মকর্তা গোলাম মোর্শেদ।
এতে বক্তব্য রাখেন আমার দেশ এর চীফ রিপোর্টার বাছির জামাল, প্রথমা প্রকাশনার প্রধান সমন্বয়কারী মশিউল আলম, একাত্তর টিভির সিওও শফিক আহমেদ, যুগান্তরের নগর সম্পাদক মিজান মালিক, যমুনা টিভির মাহফুজ মিশু প্রমুখ।
সংবাদমাধ্যমে অপতথ্য মোকাবিলায় গণমাধ্যমকর্মীদের প্রয়োজনীয় দক্ষতাবৃদ্ধি, প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত বিনিয়োগের বিষয়গুলোকে তুলে ধরা হয়।