Image description
আইনশৃঙ্খলা

চাঁদাবাজির মামলায় চট্টগ্রামে চান্দগাঁও থানা ইসলামী আন্দোলনের নেতা হাবিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। তবে দলটির নেতাকর্মীরা মামলাটি মিথ্যা দাবি করে তাকে ছাড়াতে থানা ঘেরাও করে অবস্থান নেন। শেষ পর্যন্ত পুলিশ মামলার এজাহারভুক্ত ওই আসামিকে ছেড়ে দেয়। গত ২০ জুন এ ঘটনা ঘটে।

এর আগে ১১ জুন কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে মাংস চুরির অভিযোগে রিনা খাতুন নামে এক নারীকে গাছে বেঁধে নির্যাতনের পর মাথার চুল কেটে দেওয়া হয়। ওই ঘটনায় মামলার পর পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে, তাদের ছেড়ে দিতেও থানা ঘেরাও করা হয়। সর্বশেষ গত বুধবার খুলনায় মামলার আসামি এক পুলিশ কর্মকর্তাকে মারধর করেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। পরে তাকে থানায় সোপর্দ করা হয়। কিন্তু তাকে মামলায় গ্রেপ্তার না দেখানোয় খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর দপ্তর ঘেরাও করেন দলটির নেতাকর্মীরা। তারা টায়ার জ্বালিয়ে এবং সদর দপ্তরের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে ব্যাপক বিক্ষোভ করেন।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় যুক্ত কর্মকর্তারা বলছেন, একটা সময় কোনো জাতীয় ইস্যুতে থানা ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচি দেখা যেত, তাও ছিল অনেকটা প্রতীকী। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ‘পান থেকে চুন খসা’র মতো ঘটনায়ও মব সৃষ্টি করে থানা ঘেরাওয়ের ঘটনা ঘটছে। নানা দাবি আদায়ের পাশাপাশি এজাহারভুক্ত আসামিকে ছেড়ে দেওয়ার মতো দাবি জানিয়েও এ ধরনের কর্মসূচি চলছে। এ ধরনের কর্মসূচি ‘মামা বাড়ির আবদারে’ পরিণত হয়েছে। যদিও থানা ঘেরাও করে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা আইনত অপরাধ।

সাম্প্রতিক সময়ে নানা দাবিতে ঘেরাওয়ের শিকার অন্তত পাঁচটি থানার অফিসার ইনচার্জদের (ওসি) সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তুচ্ছ ঘটনায় থানা ঘেরাওয়ের মতো ঘটনায় থানার নিয়মিত কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটে। সেবাপ্রত্যাশীরা আতঙ্কিত হন এবং সেবাবঞ্চিত হন। এই আতঙ্কটা নানা কারণে থানায় কর্মরত পুলিশ সদস্যদের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়ে।

তারা বলছেন, থানা ঘেরাওয়ের মতো কার্যক্রম আইনত অপরাধ হলেও এর বিরুদ্ধে তারা সবক্ষেত্রে আইনগত ব্যবস্থাও নিতে পারেন না।

কালবেলার কাছে থাকা গত ছয় মাসের পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা গেছে, নানা আবদারে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি দলের অঙ্গসংগঠন, ছাত্র সংগঠন, সাধারণ ছাত্র, শ্রমিক সংগঠন এবং সাধারণ মানুষ-স্বজনরাও থানা ঘেরাওয়ের মতো ঘটনা ঘটিয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। তবে খুব কম ঘটনাতেই আইনগত ব্যবস্থা নিতে পেরেছে পুলিশ; বরং ঘেরাওকারীদের দাবি মেনে নিয়েছে কিংবা তা মানতে বাধ্য হয়েছে।

পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে সারা দেশে অন্তত ৪৩ বার থানা ঘেরাওয়ের মতো ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে জানুয়ারিতে পাঁচবার, ফেব্রুয়ারিতে সাতবার, মার্চে ৯ বার, এপ্রিলে ১০ বার, মে মাসে সাতবার এবং চলতি জুনে পাঁচবার থানা ঘেরাওয়ের মতো ঘটনা ঘটেছে।

বারবার থানা ঘেরাও এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম কালবেলাকে বলেন, ‘থানা বা পুলিশি স্থাপনা ঘেরাও করে পুলিশ সদস্যদের জিম্মি করে কোনো কিছু আদায় করা কোনোভাবেই গ্রহণীয় নয়।’

একই সঙ্গে বিগত পনেরো বছর এবং জুলাই অভ্যুত্থানে পুলিশের ভূমিকার প্রসঙ্গ টেনে পুলিশপ্রধান বলেন, ‘৫ আগস্টের পর তো থানায় পুলিশই ছিল না। সেখান থেকে পুলিশ আবার ঘুরে দাঁড়িয়ে কাজ করার চেষ্টা করছে। সেই অবস্থা থেকে থানা ঘেরাও করে, থানায় ঢুকে মব তৈরি যারা করছে, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া এখনো খুব সহজ হচ্ছে না।’

তবে পুলিশের সাবেক আইজি নুরুল হুদা কালবেলাকে বলেন, ‘থানা বা পুলিশের স্থাপনা ঘেরাও করলে অবশ্যই অ্যাকশন নিতে হবে, সঙ্গে সঙ্গে অ্যাকশন নিতে হবে। এই কাজে সরকারের শক্ত সাপোর্ট থাকতে হবে। ঘেরাও করছে, তালা দিয়ে দিচ্ছে—এগুলোতে নৈরাজ্য। এটা সহ্য করা যাবে না।’

আর সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ তৌহিদুল হক কালবেলাকে বলেন, ‘থানা ঘেরাও করা, আসামি ছিনিয়ে নেওয়া এবং পুলিশের ওপর যে হামলার ঘটনাগুলো ঘটছে, সেটা পুলিশের কার্যক্রমের প্রতি জনগণের অনাস্থার কারণেই হচ্ছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বারবার থানা ঘেরাও, আসামি ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনার সঙ্গে অবশ্যই রাজনৈতিক প্রভাব এবং অন্যান্য চাপ আছে। পুলিশ নিজেরাও তা জানে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের এই শিক্ষক বলেন, বর্তমান সময়ে পুলিশের অবস্থার কারণে তারা এসব বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না। কারণ, তারা নিজেরা কখন আক্রান্ত হয়, সেই শঙ্কাও তাদের রয়েছে। ঘেরাওকারীরাও পুলিশের এই দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে।

থানা ঘেরাও করছে কারা: থানা ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচিগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বেশিরভাগ ঘটনাই কোনো দল বা সংগঠনের ব্যানারে সরাসরি ঘটেনি। তবে এসব ঘটনায় দল ও সংগঠনের স্থানীয় নেতাকর্মীরা অংশ নিয়ে থাকেন এবং নিজ নিজ দলের নামে স্লোগানও দেন। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গত জানুয়ারি থেকে ২৫ জুন পর্যন্ত বিএনপির নামে সাত দফায়, ছাত্রদলের নামে চার দফায়, যুবদলের নামে দুই দফায়, স্বেচ্ছাসেবক দলের নামে দুবার, জামায়াতের নামে চারবার, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নামে ছয়বার, শিক্ষার্থীদের নামে চারবার, স্বজন-স্থানীয় জনতার নামে আটবার, তৌহিদি জনতার নামে দুবার, গার্মেন্টস শ্রমিকদের নামে দুবার, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন ও খেলাফত আন্দোলনের নামে একবার করে এবং শাহবাগবিরোধী ঐক্য নামের একটি সংগঠনের ব্যানারে একবার থানা ঘেরাও হয়।

জুনে পাঁচবার থানা ও পুলিশ স্থাপনা ঘেরাও: চলতি মাসের ২৫ জুন পর্যন্ত দেশে অন্তত পাঁচবার থানা ও পুলিশ স্থাপনা ঘেরাওয়ের মতো ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) কার্যালয় ঘেরাওয়ের পর মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে ব্যাপক বিক্ষোভ করেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। গত ২০ জুন চাঁদাবাজির একটি মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া ইসলামী আন্দোলনের নেতাকে ছাড়িয়ে নিতে চান্দগাঁও থানা ঘেরাও করেন দলটির নেতাকর্মীরা। পরদিন পুলিশ ওই নেতাকে আদালতে না পাঠিয়ে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। এর আগের দিন নামের ভুলে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা খন্দকার নূরনবী কাজলকে পুলিশ গ্রেপ্তার করলে তাকে ছাড়াতে থানা ঘেরাও করেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। ঢাকা মহানগর পুলিশের তুরাগ থানায় পদায়ন করা হয়েছিল এস এম শাহাদাত হোসেন নামে এক ইন্সপেক্টরকে। তবে গত ১৭ জুন তার যোগ দেওয়া ঠেকাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নামে নেতাকর্মীরা থানার গেটে বিক্ষোভ করেন।

মে মাসে ঘেরাও হয় ৬ থানা: ২৯ মে চট্টগ্রামে বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলোর মোর্চা গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটের কর্মসূচিতে হামলার ঘটনায় পুলিশ আটক করেছিল দুই ব্যক্তিকে। পরে তাদের মুক্তি দাবিতে কোতোয়ালি থানায় কয়েক ঘণ্টা ঘেরাও করে রাখে ‘অ্যান্টি-শাহবাগ মুভমেন্ট’ (শাহবাগবিরোধী ঐক্য) নামের একটি সংগঠন।

এর দুদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রকে চোর অপবাদ দিয়ে মারধর করে নিউমার্কেট এলাকার ব্যবসায়ীরা। ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা নিউমার্কেট থানা ঘেরাও করে। গত ১৬ মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার ‘প্রকৃত’ আসামিদের গ্রেপ্তার দাবিতে শাহবাগ থানা ঘেরাও করে। গত ১২ মে নেত্রকোনায় নাশকতা মামলায় গ্রেপ্তার খেলাফত আন্দোলনের শ্রমিক নেতা ও ‘হোটেল শ্রমিক সংগঠনে’র সভাপতি আনোয়ার হোসেনকে ছাড়াতে থানা ঘেরাও করেন দলটির নেতাকর্মীরা।

বাগেরহাটের মোংলায় পৌর বিএনপির ২১ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছিল। এর প্রতিবাদে বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীরা ওই থানা ঘেরাও করেন। ১৭ মে বরিশালে মহানবী (সা.)-কে কটূক্তির অভিযোগে গ্রেপ্তার যুবকের শাস্তির দাবিতে থানা ঘেরাও করে তৌহিদি জনতা।

৪ মে বগুড়ার নন্দীগ্রামে সাংবাদিকের ওপর হামলার অভিযোগে দায়ের মামলায় চারজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই আসামিদের ছাড়িয়ে নিতে থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেন জামায়াতের নেতাকর্মীরা।

এপ্রিলে ১০ থানা ঘেরাও: বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়িতে তল্লাশির নামে হয়রানি ও স্থানীয় যুবদল নেতা মামুন ভূঁইয়া পাপনকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে স্থানীয় যুবদল গত ৩০ এপ্রিল খুলনার খানজাহান আলী থানা ঘেরাও করে। তবে ২১ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতা সাগর হাসানকে গ্রেপ্তার করলে এর প্রতিবাদে ছাত্রলীগ ও সাগরের সহপাঠী বন্ধুরা থানা ঘেরাও করে। ২৯ এপ্রিল নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের একজন কর্মীকে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগে পুরান ঢাকার কোতোয়ালি থানা ঘেরাও করে প্রায় চার ঘণ্টা বিক্ষোভ করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।

জমি নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে সৃষ্ট ঘটনার জেরে প্রতিপক্ষের করা মামলার চুয়াডাঙ্গার জীবননগর থানা পুলিশ দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছিল, কিন্তু ওই আসামিদের ছাড়িয়ে নিতে গত ৬ এপ্রিল থানা ঘেরাও করে শত শত মানুষ। গত ১৬ এপ্রিল ঠাকুরগাঁয়ের রানীশংকৈল এলাকায় যুবলীগ নেতা ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মতিউর রহমান মতিকে গ্রেপ্তার করলে তাকে ছিনিয়ে নিতে থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ করে নিষিদ্ধ যুবলীগের নেতাকর্মীরা। জামালপুরের মাদারগঞ্জ থানা পুলিশ ২৪ এপ্রিল সমবায় সমিতির নামে গ্রাহকদের আমানত আত্মসাৎ করার অভিযোগে জামায়াত নেতা মাহবুবুর রহমানকে আটক করে। তাকে ছেড়ে দেওয়ার খবরে এবং শাস্তি নিশ্চিতের দাবিতে গ্রাহকরা থানা ঘেরাও করে রাখেন। ১৭ এপ্রিল চট্টগ্রামে আকবর শাহ থানা ঘিরে পাল্টাপাল্টি অবস্থান নেন ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা।

গত ৮ এপ্রিল নাটোরের লালপুর থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুবেল উদ্দিনকে। তাকে অনুসারীরা ওইদিন থানা ঘেরাও করে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক নেতার কাছ থেকে জিলাপি খেতে চাওয়ার ঘটনায় প্রত্যাহারের আদেশ হয়েছিল কিশোরগঞ্জের ইটনা থানা পুলিশের ওসি মো. মনোয়ার হোসেনের। তবে তাকে পুনর্বহালের দাবিতে গত ১৬ এপ্রিল ওই থানা ঘেরাও করেন স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা!

মার্চে ঘেরাও করা হয় ৯ থানা: ১০ মার্চ সাতক্ষীরার তালা থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল ছিনতাই ও অজ্ঞান পার্টির সদস্য অভিযোগে রিয়াজুল ইসলাম মোড়লকে। তিনি ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের বহিষ্কৃত নেতা, কিন্তু তাকে ছাড়িয়ে নিতে তার অনুসারীরা থানা ঘেরাও করে! একাধিক চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও অস্ত্র মামলায় এই রিয়াজুল কারাগারে ছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্ট তিনি জেল থেকে পালিয়েছিলেন।

রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানা এলাকায় স্থানীয় লোকজন মো. বিচ্ছাদ নামে এক ব্যক্তিকে ধরে পুলিশে দেয়। তাকে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠালে তিনি জামিন পান। গত মার্চ ওই ব্যক্তিকে আওয়ামী লীগের দোসর অভিযোগ তুলে তাকে ফের গ্রেপ্তারের জন্য ৬ মার্চ থানা ঘেরাও করে স্থানীয়রা।

গত ৬ মার্চ ঢাবির এক ছাত্রীকে হেনস্তার ঘটনায় পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করে। কিন্তু আটক ব্যক্তিকে ছাড়িয়ে নিতে টানা ৮ ঘণ্টা ধরে শাহবাগ থানা অবরোধ করে রাখে তৌহিদি জনতা। একই দিন গাজীপুরের বাসন থানা পুলিশ এক পোশাক শ্রমিক নেতাকে গ্রেপ্তার করলে কয়েকশ পোশাক শ্রমিক থানা ঘেরাও করে ওই নেতাকে ছিনিয়ে নেয়।

৯ মার্চ অবশ্য চট্টগ্রামে ঘটে ভিন্ন ঘটনা। ওইদিন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির প্রতিবাদে পুলিশের জবাবদিহির দাবি জানিয়ে চট্টগ্রাম নগরের খুলশী থানা ঘেরাও করে স্থানীয় ছাত্র-জনতা। ৭ মার্চ মাগুরায় শিশু ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া দুই আসামির শাস্তি নিশ্চিতের দাবিতে থানা ঘেরাও করে জনতা। ১৪ মার্চ মেহেরপুরে এক ধর্ষকের পক্ষ নেওয়ার অভিযোগ তুলে এসআইকে প্রত্যাহার করার দাবিতে থানা ঘেরাও করেন স্থানীয়রা। ২৪ মার্চ যশোরে শিশু ধর্ষণচেষ্টায় জড়িত সন্দেহে এক যুবককে পিটুনি দেয় জনতা। পুলিশ ওই যুবককে আটক করে থানায় নিলে তার শাস্তি নিশ্চিতের দাবিতে থানা ঘেরাও করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা।

ফেব্রুয়ারিতে ঘেরাও ৭ থানা: এদিকে তিন ছাত্র আটক করায় গত ৪ ফেব্রুয়ারি উত্তরা পশ্চিম থানা ঘেরাও করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। ১২ ফেব্রুয়ারি মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখানে নিখোঁজ স্কুলছাত্রের সন্ধান চেয়ে থানা ঘেরাও করে বিক্ষুব্ধ সহপাঠী ও স্বজনরা। একই দিন অটোরিকশা চালকরা মহাসড়কে তাদের গাড়ি চালানোর দাবিতে সাভারে হাইওয়ে থানা ঘেরাও করেন। তারা অটোরিকশা দিয়ে থানা গেট অবরুদ্ধ করে রেখেছিলেন।

২৪ ফেব্রুয়ারি শেরপুরের নকলায় এক কিশোরীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় বিচারের দাবিতে থানা ঘেরাও করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা।

২৫ ফেব্রুয়ারি গাইবান্ধায় হামলায় তিন নেতা আহতের ঘটনায় সদর থানা ঘেরাও করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। ‘দাগি অপরাধীদের’ আটকের পর থানা থেকে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগে ১৬ ফেব্রুয়ারি যশোরের মনিরামপুর থানা ঘেরাও করেন উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা।

বছরের শুরুর মাসেই ঘেরাও ৫ থানা: গত ১১ জানুয়ারি মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলা যুবদলের সদস্য মো. তরিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তারের পর তাকে থানা ঘেরাও করে ছিনিয়ে নিয়ে যান নেতাকর্মীরা। নারায়ণগঞ্জে গাজী টায়ারের কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের পর নিখোঁজদের সন্ধানে গত ৮ জানুয়ারি রূপগঞ্জ থানা ঘেরাও করেন স্বজনরা।

৬ জানুয়ারি চট্টগ্রামে কোতোয়ালি থানার সাবেক ওসিকে হেনস্তার পর তার বিচারের দাবিতে থানা ঘেরাও করেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। ৪ জানুয়ারি গাজীপুরে আটকের পর থানা থেকে আওয়ামী লীগ নেতা শফিকুল সিকদারকে ছাড়িয়ে নিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন জামায়াত নেতারা। এ ছাড়া গত ২৬ জানুয়ারি চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বনানী থানার সামনে অবস্থান নেন কড়াইল বস্তির বাসিন্দারা।

জনসেবাস্থল হিসেবে থানা ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচি ঠেকানোর বিষয়ে সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ তৌহিদুল হক বলেন, এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে পুলিশের সদিচ্ছা দরকার। জড়িতরা যে-ই হোক না কেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি বিভিন্ন দল ও সংগঠনগুলোরও চিন্তা করতে হবে, নিজেদের স্বার্থে তারা এ ধরনের কাজ করবে কি না।