Image description

নিউইয়র্কের মেয়র পদে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন জোহরান মামদানি। প্রাথমিক নির্বাচনে অ্যান্ড্রু কুমোকে পরাজিত করে তিনি সামনে এগিয়ে গেছেন নভেম্বরের মূল নির্বাচনের দিকে। এ নির্বাচনে জয়ী হলে নিউইয়র্ক শহরের ইতিহাসে তিনিই হবেন প্রথম মুসলিম, প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত এবং সবচেয়ে কম বয়সী মেয়র।

মামদানির বয়স ৩৩ বছর। তিনি নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলির সদস্য। তার রাজনীতি ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত প্রগতিশীল শক্তি এবং ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্টস অব আমেরিকার সঙ্গে। জন্ম উগান্ডার কাম্পালায়। শৈশবে দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনে কেটেছে কিছুদিন। সাত বছর বয়সে নিউইয়র্কে আসেন পরিবারের সঙ্গে। তার বাবা মাহমুদ মামদানি কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতিমান অধ্যাপক। মা মীরা নায়ার আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চলচ্চিত্র নির্মাতা। জোহরান ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হন।

মামদানি তার ধর্মীয় পরিচয়কে কখনো আড়াল করেননি। রমজানে রোজা রেখেছেন, ঈদের দিনে সভায় বক্তব্য রেখেছেন, মসজিদে গিয়েছেন প্রচারের সময়। তার প্রচারণায় অংশ নেন ২২ হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবক। কোটিপতি তো নন-ই, বরং কাজ করেছেন গরিব ভাড়াটিয়াদের হাউজিং অ্যাডভোকেট হিসেবে। রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার আগে তিনি হিপহপ শিল্পী ছিলেন ‘ইয়াং কার্ডামম’ নামে। নিউইয়র্কের বাস সার্ভিস বিনামূল্যে করা, নতুন দুই লাখ সরকারি অ্যাপার্টমেন্ট তৈরি, শিশুদের জন্য ডে-কেয়ার চালু, সস্তা মূল্যে মুদি দোকান চালু, ধনীদের ওপর বাড়তি কর আরোপ এবং মানসিক স্বাস্থ্য ও সামাজিক সহায়তার জন্য নতুন বিভাগ গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। তার এসব পদক্ষেপ তরুণদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।

ইসরায়েল-ফিলিস্তিন ইস্যুতে তার অবস্থান স্পষ্ট। তিনি গাজায় ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলাকে গণহত্যা হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন এবং নিউইয়র্কের অর্থ যেন ইসরায়েলি বসতি বা যুদ্ধের কাজে ব্যবহৃত না হয়, তা নিশ্চিত করতে বিল উত্থাপন করেছেন। তিনি নেতানিয়াহুকে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে নিউইয়র্কে গ্রেপ্তারের পক্ষে বক্তব্য দিয়েছেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাকে আক্রমণ করে বলেন, ‘একশ ভাগ কমিউনিস্ট, দেখতে খারাপ, কণ্ঠ বিরক্তিকর!’ তাকে ভবিষ্যতের মেয়র হিসেবে কল্পনাও করতে পারছেন না ট্রাম্প। তবে তার এ সমালোচনা মামদানির সমর্থকদের উল্টো উজ্জীবিত করেছে বলে অনেকেই মনে করেন।

ডেমোক্রেটিক প্রাইমারি ভোটে মামদানি পেয়েছেন ৪ লাখ ৩২ হাজারের বেশি ভোট। কুমো পেয়েছেন ৩ লাখের কিছু বেশি। র্যাংকড চয়েস ভোটিংয়ে মামদানি স্পষ্ট ব্যবধানে এগিয়ে থেকেছেন। নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন রিপাবলিকান দলের কার্টিস স্লিওয়ার বিপক্ষে।

জোহরান মামদানির প্রার্থিতা শুধু ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে নয়, বরং তার স্পষ্ট রাজনৈতিক অবস্থান, সাহসী উচ্চারণ এবং প্রান্তিক মানুষের প্রতিনিধিত্বের কারণে একটি যুগান্তকারী মুহূর্ত তৈরি করেছে নিউইয়র্ক শহরে। নির্বাচনে জয়ী হলে নিউইয়র্ক পাবে এক নতুন কণ্ঠ, এক ভিন্ন নেতৃত্ব—এমনই মনে করেন অনেক বিশেষজ্ঞ।

রাজনৈতিক কৌশলবিদ ট্রিপ ইয়াং বলেন, ‘মামদানির জয় দেখিয়ে দিল, ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন হোয়াইট হাউসে, তখন নিউইয়র্কের ডেমোক্র্যাটরা এমন নেতৃত্ব চান, যারা সাহস ও স্পষ্ট বার্তা নিয়ে এগিয়ে আসতে পারেন।’ নিউইয়র্কের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ইতিহাসে মামদানির জয়কে সবচেয়ে বড় অঘটন বলেও মন্তব্য করেছেন ট্রিপ ইয়াং।

উদারপন্থি শহর হিসেবে পরিচিত নিউইয়র্কে সাধারণত ডেমোক্র্যাট প্রার্থীই জয়ী হন। ফলে এ প্রাইমারির ফলই আগামী নভেম্বরে মেয়র নির্বাচনে কে জিতবেন, তা নির্ধারণ করে দিতে পারে।

আবার শাহানা হানিফ: নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলের সদস্য এবং শহরের ইতিহাসে প্রথম মুসলিম নারী নির্বাচিত প্রতিনিধি শাহানা হানিফ মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত ডেমোক্রেটিক প্রাইমারিতে জয়ী হয়ে ফের ব্রুকলিনের কাউন্সিল সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।

শাহানা হানিফ, যিনি পার্ক স্লোপ, উইনসর টেরেস ও কেনসিংটনের মতো অঞ্চলগুলোর প্রতিনিধিত্ব করেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন মায়া কর্নবার্গ। কর্নবার্গ ব্রেনান সেন্টার ফর জাস্টিসের একজন সিনিয়র রিসার্চ ফেলো এবং এই প্রথমবার নির্বাচনে অংশ নেন। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের প্রতিবেদনে হানিফের জয় নিশ্চিত করা হয়েছে বলে নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।