Image description
তালিকায় ১১০ ভারতীয় নাগরিক ও ৬৪ বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা এক হাজার ৫৫৬ জনকে পুশ ব্যাক করেছে বিজিবি ১১০ জন ভারতীয়র মধ্যে ১০৬ জনকে পুশ ব্যাক করা হয় গতকাল পঞ্চগড়ের তিনটি সীমান্ত এলাকা দিয়ে নারী শিশুসহ ১৮ জনকে পুশ ইন

যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে জোরপূর্বক প্রায় প্রতিদিনই পুশ ইন করছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। গত ৭ মে থেকে ২৫ জুন পর্যন্ত ৪৯ দিনে দেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে অনন্ত এক হাজার ৭১৩ জনকে পুশ ইন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, পুশ ইনের মাধ্যমে আসা অনেকে ঠেলে পাঠানোর আগে তাদের ওপর নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ করেছে।

এ ব্যাপারে অবশ্য বিস্তারিত জানা যায়নি। বাংলাদেশ পুশ ইন না করার বিষয়ে ভারতকে বারবার তাগিদ দেওয়ার পরও তা থামছে না।

অপরাধ ও সমাজ বিশ্লেষকরা বলছেন, দিনের পর দিন পুশ ইনের বিষয়টি গভীর উদ্বেগের। এটি নিরাপত্তা পরিস্থিতির ওপর প্রভাব ফেলছে।

সর্বশেষ গতকাল বুধবার পঞ্চগড়ের তিনটি সীমান্ত এলাকা দিয়ে নারী-শিশুসহ ১৮ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে (পুশ ইন) পাঠিয়েছে বিএসএফ। ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত সদর উপজেলার অমরখানা ইউনিয়নের ভিতরগড় সীমান্তে ছয়জন, চাকলাহাট ইউনিয়নের জয়ধরভাঙ্গা সীমান্তে সাতজন এবং তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুর ইউনিয়নের শুকানী সীমান্তে পাঁচজনকে ঠেলে পাঠানো হয়। আগের দিন মঙ্গলবারও সিলেটের জৈন্তাপুর, সুনামগঞ্জের ছাতক ও লালমনিরহাটের পাটগ্রাম সীমান্ত দিয়ে ৪৬ জনকে পুশ ইন করা হয়। ঠেলে পাঠানো মোট ব্যক্তিদের মধ্যে ১১০ জন ভারতীয় নাগরিক ও ৬৪ জন ভারতীয় তালিকাভুক্ত বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা। বাংলাদেশ সরকার অবৈধ অনুপ্রবেশ বন্ধ করার জন্য বেশ কয়েকবার অনুরোধ করলেও ভারত সরকার তা মানছে না।

সংশ্লিষ্ট সূত্র অনুযায়ী,  গত ৭ মে থেকে ১৭ জুন পর্যন্ত বিএসএফ দেশের ২২টি জেলার সীমান্ত এলাকা দিয়ে এক হাজার ৫৬০ জনকে বাংলাদেশে পুশ ইন করেছে। এদের মধ্যে এক হাজার ৫৫৬ জনকেই পুশব্যাক করেছে বিজিবি। ১৮ জুন থেকে গতকাল পর্যন্ত আরো ১৫৩ জনকে পুশ ইন করা হয়েছে।

সূত্র মতে, ভারতীয় নাগরিকদের মধ্যে ১৪ জুন ঠাকুরগাঁও এবং পঞ্চগড় দিয়ে ছয়জন, ২৭ ও ৩০ মে কুড়িগ্রাম দিয়ে ৩৯ জন, ২৮ ও ৩০ মে লালমনিরহাট দিয়ে ৬৫ জনকে পুশ ইন করা হয়েছে।

এই ১১০ জন ভারতীয়র মধ্যে ১০৬ জনকে ভারতে পুশব্যাক করা হয়। এ ছাড়া তালিকাভুক্ত ৬৪ জন ভারতীয় রোহিঙ্গার মধ্যে ৭ ও ৮ মে কুড়িগ্রাম সীমান্ত দিয়ে ৩৭ জন এবং ৮ মে ও ১৩ জুন মৌলভীবাজার দিয়ে ২৭ জনকে বাংলাদেশে পুশ ইন করা হয়েছে। পরে তাদের মধ্যে ১৫ জনকে ভারতে পুশব্যাক করা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় সব সীমান্তে রাত ও ভোরের দিকেই বেশি পুশ ইন করা হচ্ছে। পুশ ইন নিয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) নজরদারি বাড়ালেও স্থানীয়দের মধ্যে অস্বস্তি রয়েছে।

পুশ ইনের বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিবির একাধিক কর্মকর্তা জানান, যথাযথ প্রক্রিয়ায় পুশ ইন না করায় বিএসএফের সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে মৌখিক ও লিখিতভাবে জোরালো প্রতিবাদ জানিয়েছে বিজিবি। এ ছাড়া পুশ ইন রোধে বিজিবি সীমান্তে গোয়েন্দা নজরদারি ও টহল তৎপরতা বাড়িয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে থেকে সজাগ দৃষ্টি রাখছে তারা।

গত বৃহস্পতিবার সীমান্ত দিয়ে পুশ ইনের বিষয়ে সেনাবাহিনীর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে মিলিটারি অপারেশনস ডিরেক্টরেটের (স্টাফ কর্নেল) কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ বিষয়ে সেনাবাহিনী অন্তর্ভুক্ত হওয়ার মতো পরিস্থিতি এখনো অনুভূত হয়নি। সে কারণে বিষয়টি বিজিবি ও কোস্টগার্ড দেখছে। বিজিবি ও কোস্টগার্ড সতর্ক আছে এবং তারা কাজ করছে। ‌সীমান্ত এলাকায় টহল বাড়িয়েছে তারা। সেসব জায়গায় স্থায়ী ও অস্থায়ী ক্যাম্পের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি।’

পুশ ইনের সুযোগ নিয়ে ভারত বড় ধরনের অপরাধীদেরও পাঠাতে পারে বলে শঙ্কা রয়েছে। পুশ ইনের বিষয়ে অপরাধ ও সমাজ বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যাদের পুশ ইন করা হচ্ছে, তাদের পরিচয় শনাক্ত খুব জরুরি। তারা ভারতীয়, না বাংলাদেশি নাগরিক? যদি তারা বাংলাদেশি হয়ে থাকে, কেন গেল, কিভাবে গেল, কখন গেল—এগুলো সত্যিকার অর্থে প্রমাণ করতে হবে। আর বাংলাদেশি নাগরিক প্রমাণ করতে পারলে তাদের বাংলাদেশে আসতে দেওয়া অনুচিত হবে না। কোনো দেশের নাগরিক নিজ দেশে আসবে না, তা তো হতে পারে না। তিনি বলেন, ‘যদি ভারতের বা অন্য দেশের নাগরিক হয়, তাদের পুশব্যাক করতে হবে বিজিবিকে। এ ছাড়া পতাকা বৈঠক করে জিজ্ঞেস করতে হবে, আমাদের দেশের নাগরিক না হলেও তাদের দেশ (ভারত) থেকে কেন পুশ ইন করছে? তবে পুশ ইন যে পর্যায়ে যাচ্ছে, কূটনৈতিকভাবে সমাধান ছাড়া উপায় নেই। বিষয়গুলো দুই দেশের সম্পর্কের ওপর নির্ভর করে। সম্পর্কের উন্নতি হলে পুশ ইন থেমে যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।’