
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ‘১৬০ উপজেলা আইসিটি ট্রেনিং ও রিসোর্স সেন্টার ফর এডুকেশন (UITRCE, Phase-2)’ প্রকল্পে প্রায় ২০০ কোটি টাকার লুটপাট ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের কেন্দ্রে রয়েছেন তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, তার ভাই জে. আর. ওয়াদুদ টিপু এবং তাদের ঘনিষ্ঠদের নিয়ে গঠিত একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। ২০২২ সালে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বরাবর করা একটি লিখিত অভিযোগ থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। বিষয়টির প্রাথমিক সত্যতা যাচাইয়ে সে সময় দুদকের নির্দেশে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করার জেরে সরিয়ে দেওয়া হয় তৎকালীন শিক্ষা সচিব মো. আবু বকর ছিদ্দীককে। যদিও ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে এ বিষয়ে নতুন কোনো অগ্রগতি জানা যায়নি।
সূত্রের অভিযোগ, প্রকল্প বাস্তবায়নের নিয়োগ, টেন্ডার, সাব-কন্ট্রাক্টর নির্বাচন এবং চুক্তি কার্যক্রমে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করা হয়। এরই প্রেক্ষিতে ২০২৩ সালের শেষে প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যায়। যদিও প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের একটি প্রতিষ্ঠান ‘নন-পারফর্মার’ হয়ে যাওয়ার কারণে ২০২৪ সালের জুনের দিকে এ প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, প্রকল্পের শুরু থেকেই শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ব্যানবেইসের কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তাকে ‘পরিকল্পিতভাবে’ প্রকল্পে যুক্ত করা হয়। তৎকালীন ব্যানবেইস মহাপরিচালক (ডিজি) হাবিবুর রহমান, উপ-প্রকল্প পরিচালক মো. মোফাক্কারুল ইসলাম এবং প্রকল্প কর্মকর্তা মো. নাজিম উদ্দিন আহমেদ— এই তিনজনের নেতৃত্বে প্রকল্পের প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। বর্তমানে প্রথম দু’জন অবসরে গেলেও নাজিম উদ্দিন এখনও প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমে যুক্ত রয়েছেন।
২০২৫ সালের ৭ মে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রকল্প পরিচালক, ব্যানবেইস এবং সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে আইনি নোটিশ পাঠান এস এ এম. রাশিউজ্জামান দম্পতি। সেখানে তিনি অভিযোগ করে বলেন, তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় তার ভাই জে. আর. ওয়াদুদ টিপু, সংসদ সদস্য সায়েদা রুবিনা আক্তার মিরা, প্রকল্প পরিচালক হাবিবুর রহমান, উপ-পরিচালক মোফাক্কারুল ইসলাম, শিক্ষামন্ত্রীর এপিএস মফিজুর রহমান এবং আরও কয়েকজন মিলে একটি দুর্নীতিগ্রস্ত সিন্ডিকেট গঠন করেন এবং প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ করেন।
সূত্রের তথ্য, ২০১৭ সালে শুরু হওয়া ওই প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয় ৫৮ লাখ ৯৭ হাজার ৪৪৪ মার্কিন ডলার। অর্থ সহায়তা আসে দক্ষিণ কোরিয়ার এক্সিম ব্যাংক এবং বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে। ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট টেন্ডার আহ্বান করা হলেও ২০২১ সালের ১৯ মে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিষ্ঠান ‘তাইহান ইলেকট্রিক ওয়্যার কোম্পানি লিমিটেড’-কে কাজ দেওয়া হয়; যেখানে আরও দুটি প্রতিষ্ঠান একীভূত হয়ে কাজ করেছে। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিষ্ঠানটিকে কাজ পাইয়ে দিতে সাবেক শিক্ষামন্ত্রীর একটি বলয় কাজ করেছে; যার উদ্দেশ্য ছিল— কোরিয়ান ঠিকাদারি কর্তৃপক্ষ এবং সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সিন্ডিকেট মিলে কৌশলে ওই অর্থ আত্মসাতের পরিকল্পনা করা। এ কারণেই নিজেদের বোঝাপড়ার মাধ্যমেই প্রকল্পের কাজগুলো ‘অভিজ্ঞতাহীন’ প্রতিষ্ঠানকে বুঝিয়ে দেওয়া হয় এবং তৃতীয় কোনো ঠিকাদারী সাব-কন্ট্রাক্টর প্রতিষ্ঠানকে এতে যুক্ত করা হয়নি।
প্রকল্প পরিকল্পনায় ২৪টি অভিজ্ঞ সাব-কন্ট্রাক্টর নিয়োগের কথা থাকলেও কাজটি প্রথমে এককভাবে পায় নতুন প্রতিষ্ঠান জ্যাকস ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি কাজ পাওয়ার মাত্র তিনমাস আগেই গঠিত হয়েছিল। অভিযোগ রয়েছে, জাল কাগজপত্র ব্যবহার করে এবং রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে প্রতিষ্ঠানটি কাজটি ভাগিয়ে নেয়। এছাড়া অন্য ২৩টি সাব-কন্টাটর কোম্পানি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের অভিজ্ঞতা সনদ জাল করে ভুয়া কোম্পানি খুলে তাদের মধ্যে কাজ দেওয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, সবগুলো সাব-কন্ট্রাক্টরই জ্যাকস ইন্টারন্যাশনাল সংশ্লিষ্ট।
জানা গেছে, জ্যাকস ইন্টারন্যাশনালের কর্ণধার আবু সালেহ মো. জামাল উদ্দিন একজন মার্কিন নাগরিক। অভিযোগ রয়েছে, তিনি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য আগাম বিলের মাধ্যমে ২০০ কোটি টাকা অর্থ উঠিয়ে নেন এবং তা সিন্ডিকেটের সদস্যদের মধ্যে ভাগ হয়ে যায়। অভিযোগকারী পক্ষের দাবি, কোরিয়ান প্রকল্প পরিচালক মি. কাঙ্গ-এর ভয়েস রেকর্ডে এই অর্থ ভাগাভাগির বিষয়টি স্বীকার করা হয়েছে।
তবে প্রকল্প কর্মকর্তা মো. নাজিম উদ্দিন আহমেদ দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, চুক্তি অনুযায়ী প্রকল্প শুরু হওয়ার আগেই ৩০ শতাংশ অর্থ সাব-কন্টাটকদের অ্যাডভান্সড করতে হয়। সেটা ২০০ কোটি না। ওই সময়ে সেই অর্থের পরিমাণ প্রায় ১৩৮ কোটি টাকা ছিল। তবে দীপু মনি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কৌশলে নিজেরা ওই অর্থ ভাগাভাগি করেছেন কি না— এমন প্রশ্নে বিষয়টি চেপে যান তিনি।
প্রকল্প পরিকল্পনায় ২৪টি অভিজ্ঞ সাব-কন্ট্রাক্টর নিয়োগের কথা থাকলেও কাজটি প্রথমে এককভাবে পায় নতুন প্রতিষ্ঠান জ্যাকস ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি কাজ পাওয়ার মাত্র তিনমাস আগেই গঠিত হয়েছিল। অভিযোগ রয়েছে, জাল কাগজপত্র ব্যবহার করে এবং রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে প্রতিষ্ঠানটি কাজটি ভাগিয়ে নেয়। এছাড়া অন্য ২৩টি সাব-কন্টাটর কোম্পানি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের অভিজ্ঞতা সনদ জাল করে ভুয়া কোম্পানি খুলে তাদের মধ্যে কাজ দেওয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, সবগুলো সাব-কন্ট্রাক্টরই জ্যাকস ইন্টারন্যাশনাল সংশ্লিষ্ট।
অভিযোগ রয়েছে, জামাল উদ্দিন ও তার ঘনিষ্ঠরা দেশের বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রোফাইল সংগ্রহ করে এবং কাজ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কমিশনের নামে অর্থ হাতিয়ে নেন। পরে সেসব প্রতিষ্ঠানের অভিজ্ঞতা সনদ নকল করে জামাল উদ্দিন নিয়ন্ত্রিত বেনামি ২৪টি প্রতিষ্ঠানের নামে কাজ ভাগিয়ে নেওয়া হয়। অভিযোগকারী এস এ এম রাশিউজ্জামান বলেন, ‘নতুন কেউ যুক্ত হলেই লুটপাটের বিষয়টি ফাঁস হয়ে যেত, এজন্য সিন্ডিকেট চেয়েছে নিজেদের নিয়ন্ত্রণেই পুরো কাজ রাখতে এবং খুব সহজেই প্রকল্পের বাস্তবায়ন না করে অর্থ লোপাট করা সম্ভব হবে।’
এদিকে ২০২২ সালের জুলাইয়ে রাশিউজ্জামান দুর্নীতি দমন কমিশনসহ ১০টি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিস্তারিত তথ্য-প্রমাণসহ লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ দায়েরের পর তিনি ও তার স্ত্রী সাবেক শিক্ষামন্ত্রীর হুমকির মুখে পড়েন এবং প্রায় ১১ মাস আত্মগোপনে থাকার পর ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে দুই সন্তানসহ অস্ট্রেলিয়ায় পালিয়ে যান। যদিও প্রবাসে পাড়ি জমিয়েও থেমে থাকেননি এস এ এম রাশিউজ্জামান। নতুন করেন অভিযোগ দায়ের করেন জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনে। পরে ২০২৪ সালে দেশে ফিরে ব্যানবেইসের বর্তমান মহাপরিচালক মো. মজিবুর রহমান বরাবরও অভিযোগ করেন তিনি।
সে সময় অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুদকের নির্দেশে তদন্তের পদক্ষেপ নেন তৎকালীন শিক্ষাসচিব মো. আবু বকর ছিদ্দীক। মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব খালেদা আক্তারকে সভাপতি করে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন তিনি। কিন্তু মন্ত্রীর ভাইয়ের শিক্ষাখাতে প্রভাব খাটানো, দুর্নীতি ও অর্থপাচার তদন্ত করতে গিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবের পদ থেকেই আবু বকর সিদ্দিককে সড়িয়ে দেওয়া হয়। ফলে তদন্ত কাজ আর পরবর্তীতে আর এগোয়নি। উল্টো অভিযোগকে আমলে না নিয়ে নতুনভাবে পুরোনো কৌশলেই প্রকল্পটি চালু হতে যাচ্ছে ব্যানবেইসের তত্ত্বাবধানে।
জানা যায়, প্রকল্পটি চালু করতে ২০২৫ সালের ২৮ মে নতুন আরেকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হয়। যদিও অভিযোগ উঠেছে, ‘তাইহান, হোবান ও ইউবিয়ান কনসোর্টিয়াম’ নামে নতুন ওই কোম্পানিটি আগের ‘তাইহান ইলেকট্রিক ওয়্যার’ প্রতিষ্ঠানেরই অংশ। অর্থাৎ একই সিন্ডিকেট নতুন নামে পুরোনো কৌশলে কাজ শুরু করতে যাচ্ছে— এমনটাই অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। অভিযোগকারী রাশিউজ্জামান ২৪ জুন দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের সঙ্গে আলাপকালে জানান, সিন্ডিকেটটি এখনও সক্রিয় এবং আগের মতোই পুরো প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের চেষ্টায় রয়েছেন। তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকলে প্রকল্পের সব অর্থ নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেওয়া সহজ হবে বলেও দাবি করেন তিনি। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, পর্যাপ্ত তথ্যপ্রমাণ থাকা সত্ত্বেও যদি দুর্নীতির সঠিক তদন্ত ও ব্যবস্থা না নিয়ে একই সিন্ডিকেটের হাতে আবার প্রকল্প তুলে দেওয়া হয়; তাহলে আগের চেয়েও বড় আকারে অর্থ লোপাট ঘটতে পারে। আইসিটি ট্রেনিং সেন্টার প্রকল্পের লক্ষ্য ছিল দেশের প্রতিটি উপজেলায় তরুণদের তথ্যপ্রযুক্তি দক্ষ করে তোলা। দুর্ভাগ্যজনকভাবে প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যাপক অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তিনি দাবি তোলেন, দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত দেশি-বিদেশি সব পক্ষের বিরুদ্ধে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে কঠোর আইনানুগ শাস্তি নিশ্চিত করা হোক এবং প্রকল্পটি যথাযথভাবে সম্পন্ন করে তরুণদের শিক্ষায় ও কর্মসংস্থানে বাস্তব সুফল দেওয়া হোক।
এদিকে ২০২৫ সালের ৭ মে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রকল্প পরিচালক, ব্যানবেইস এবং সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে আইনি নোটিশ পাঠান এস এ এম. রাশিউজ্জামান দম্পতি। সেখানে তিনি অভিযোগ করে বলেন, তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় তার ভাই জে. আর. ওয়াদুদ টিপু, সংসদ সদস্য সায়েদা রুবিনা আক্তার মিরা, প্রকল্প পরিচালক হাবিবুর রহমান, উপ-পরিচালক মোফাক্কারুল ইসলাম, শিক্ষামন্ত্রীর এপিএস মফিজুর রহমান এবং আরও কয়েকজন মিলে একটি দুর্নীতিগ্রস্ত সিন্ডিকেট গঠন করেন এবং প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ করেন।
চুক্তি অনুযায়ী প্রকল্প শুরু হওয়ার আগেই ৩০ শতাংশ অর্থ সাব-কন্টাটকদের অ্যাডভান্সড করতে হয়। সেটা ২০০ কোটি না। ওই সময়ে সেই অর্থের পরিমাণ প্রায় ১৩৮ কোটি টাকা ছিল। তবে দীপু মনি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কৌশলে নিজেরা ওই অর্থ ভাগাভাগি করেছেন কি না— এমন প্রশ্নে বিষয়টি চেপে যান তিনি।
সার্বিক বিষয়ে প্রকল্প কর্মকর্তা মো. নাজিম উদ্দিন আহমেদ দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, এখন পর্যন্ত কয়েক ধাপেই প্রকল্পের অর্থ ছাড় দিয়েছে কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংক। বর্তমানে কন্সট্রাকশনের কাজ ৩২ শতাংশ শেষ হয়েছে এবং ৭০ শতাংশ ইকুয়েপমেন্টের কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্পের মাঝামাঝি সময়ে কোরিয়ান একটি প্রতিষ্ঠান ‘নন-পারফর্মার’ হিসেবে বিবেচিত হয় এবং ২০২৪ সালের জুনের দিকে এই প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। পরে আবার নতুন আরেকটি কোরিয়ান প্রতিষ্ঠান কাজ পেয়েছে। পুরোনো কোম্পানির অন্য আরেকটি প্রতিষ্ঠানকেই এই প্রকল্পের কাজ দেওয়া হয়েছে— এ বিষয়ে জানতে তিনি বলেন, বিষয়টি ঠিক এমন নয়। প্রতিষ্ঠান দুটি ভিন্ন; তবে একই শেয়ারের অন্তর্ভুক্ত।
তিনি আরও জানান, নতুন কাজ পাওয়া প্রতিষ্ঠানটি আবারও নতুন করে টেন্ডার আহ্বান করেছে। আগামী ৩ আগস্ট আবার সেই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। আগের প্রতিষ্ঠানে অনভিজ্ঞরা কাজ পাওয়ার দায় কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংক এবং কোরিয়ান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের। সাব-কন্ট্রাকটর হিসেবে কে কাজ করতে পারবে— সেটা তারাই নির্ধারণ করে থাকে। আমাদের কাছে শুধু কাগজপত্র জমা থাকে।
তবে অভিযোগকারী রাশিউজ্জামান বলেন, ২৪টি সাব-কন্ট্রাকের কাজ করতে পারবে কি-না সেই অনুমতি দেওয়া হয় ব্যানবেইজের ডিজির স্বাক্ষরে। ভুয়া কাগজে টেন্ডার নেওয়া হয় এবং অনভিজ্ঞদের কাগজপত্র যাচাই না করে নিজেদের পছন্দের মাধ্যমে নতুনদের কাজ দেওয়ার দায় সম্পূর্ণ ব্যানবেইসের। কারণ কোরিয়ান কোম্পানি সাব-কন্ট্রাকদের চয়েজ করার পর তাদের কাজ করার অনুমোদন দেয় ব্যানবেইস। ব্যানব্যাইসের অনুমোদন ব্যতীত কোনো সাব-কন্ট্রাকটরই কাজই শুরু করতে পারবে না। অর্থ ভাগবাটোয়ারা এবং প্রকল্পের সঙ্গে জড়িতরা দীপু মনির সিন্ডিকেটের মাধ্যমেই কৌশলে ভাগাভাগি করার বিষয়ে তিনি বলেন, এখানে ব্যানবেইস কোনো অর্থ ছাড় দেয় না। অর্থ দেওয়া হয় কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংক থেকে। সেখান থেকে বিডা হয়ে বিল আসে। এখানে আমাদের কোনো বিষয় নেই।
রাশিউজ্জামান বলেন, অর্থ তারা ছাড় না দিলেও তারা বিডা কিংবা এক্সিম ব্যাংককে কাজ না করেও অর্থ ছাড়ের বিষয়ে চিঠি দিয়ে টাকা নিতে পারেন। কারণ তাদের রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করেই এই অর্থ ছাড় দেওয়া হয়। কোথাও কোনো ভিজিট না করেও ভিজিটের আলাদা বিল তৈরি করতে পারেন তারা। পরে এই অর্থ তারা নিজেদের মধ্যেই ভাগাভাগি করে নেন। মূলত কোরিয়ান কোম্পানি সংশ্লিষ্ট কয়েকজন, ব্যানবেইস কর্মকর্তা এবং সাব-কন্ট্রাকটরা শিখে গেছে— এখানে কাজ না করেও কীভাবে এই অর্থ হাতিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। ফলে তাদের বিচার না করে নতুন করে ভিন্ন নামের আরেক প্রতিষ্ঠান দিয়ে কাজ করিয়ে একইভাবে অর্থ আত্মসাৎ করার পায়তারা করছেন।
প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং দুদকের তদন্তের বিষয়ে রাশিউজ্জামান বলেন, আমার অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিষয়টি নিয়ে সবার মধ্যে জানাজানি হলে উপজেলা প্রশাসনগুলো কাজে সহযোগিতা করেননি। এছাড়া কেউ কেউ সেই কাজের ভাগও চেয়েছিল। ফলে কাজটা তারা আর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেননি। অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকায় ২০২২ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত তদন্তের নির্দেশও দেওয়া হয়। তবে দুদক থেকে শুরু করে প্রায় প্রতিটি জায়গা থেকেই এসব দুর্নীতি ও অনিয়মের নথিপত্র সরিয়ে ফেলা হয় ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে। ফলে তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। আমি ব্যানবেইসের বর্তমান জিডিকেও এই অনিয়মের বিষয়ে অবহিত করেছি।
যদিও একই সিন্ডিকেট নতুন নামে পুরোনো কৌশলে আবারও কাজ শুরু করার বিষয়ে প্রকল্প কর্মকর্তা নাজিম উদ্দিন কোনো সদুত্তর দেননি। প্রকল্পের শুরুর আগেই তাদের এসব জায়গায় বসানোর বিষয়টিও তিনি অস্বীকার করেন।
ব্যানবেইসের ডিজি মো. মজিবুর রহমানের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে অপরাগতা প্রকাশ করেন তিনি। একইভাবে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান জ্যাকস ইন্টারন্যাশনালের মালিক জামাল উদ্দিন। এ সময় প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।