Image description
 

জাতির উদ্দেশ্য প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের মধ্যদিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সব ধরনের সংশয়ের অবসান হলো। যদিও প্রধান উপদেষ্টা আগেই বলেছিলেন, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্য নির্বাচন হবে। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো সুস্পষ্ট একটি নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়েছিল। প্রধান উপদেষ্টা তার ভাষণে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্টিত হবে। এরমধ্য দিয়ে দেশ নির্বাচনের ট্রেনে উঠে গেলো। তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, এই ঘোষণার ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন উপযুক্ত সময়ে নির্বাচনের বিস্তারিত রোডম্যাপ প্রদান করবে।

 

এখন আগামী দশ মাস হবে রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ নির্বাচনের মাঠে থাকছে না। ফলে বিএনপিসহ অন্য দলগুলোর বহু মনোনায়ন প্রত্যাশী থাকবেন। এমনকি এবারের নির্বাচনে বিপুল সংখ্যক স্বতন্ত্র প্রার্থী অংশ নিতে পারেন। এবারের নির্বাচন যথেষ্ট প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে বলে মনে করা হচ্ছে। দীর্ঘদিন থেকে বাংলাদেশে দুই দলের মধ্যে ভোটের যে চেহারা ছিলো তা এবার বদলে যেতে পারে। ফলে আগামী নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তুতি নেয়ার ক্ষেত্রে সময়ক্ষেপণের আর কোনো অবকাশ নেই।

 

প্রধান উপদেষ্টা তার ভাষণে ভোটারদের প্রতি কিছু আহবান জানিয়েছেন যা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর থেকে যতবার গভীর সংকটে নিমজ্জিত হয়েছে তার সবগুলোরই প্রধান কারণ ছিল ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন। ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বারবার ক্ষমতা কুক্ষিগত করার মধ্য দিয়ে একটি রাজনৈতিক দল বর্বর ফ্যাসিস্টে পরিণত হয়েছিল। এই ধরনের নির্বাচন যারা আয়োজন করে তারা জাতির কাছে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত হয়ে যায়। এমন নির্বাচনের মধ‍্য দিয়ে যে দল ক্ষমতায় আসে তারাও জনগণের কাছে ঘৃণিত হয়ে থাকে।

 

cHIEF_aDVISOR

 

প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকটের আসল অসুখটি ধরতে পেরেছেন। তিনি বুঝতে পেরেছেন গ্রহণযোগ্য ও ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন করতে না পারলে সংস্কার ও মানুষের আকাঙ্খা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না।

তিনি বলেছেন, এ সরকারের একটি বড় দায়িত্ব হলো একটি পরিচ্ছন্ন, উৎসবমুখর, শান্তিপূর্ণ, বিপুলভাবে অংশগ্রহণের পরিবেশে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। এমন একটি নির্বাচন আয়োজন করা যাতে করে দেশ ভবিষ্যতে নতুন সংকটে না পড়ে। এজন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার। যেই প্রতিষ্ঠানগুলো নির্বাচনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত সেগুলোতে যদি সুশাসন নিশ্চিত করা না যায় তাহলে ছাত্র-জনতার সকল আত্মত্যাগ বিফলে যাবে।

তিনি বলেছেন, আমরা এমন নির্বাচন চাই যা দেখে অভ্যুত্থানের শহীদদের আত্মা তৃপ্তি পাবে, তাদের আত্মা শান্তি পাবে। আমরা চাই আগামী নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ভোটার, সবচেয়ে বেশি প্রার্থী ও দল অংশ নিক। এটা সবচেয়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হিসেবে জাতির কাছে স্মরণীয় থাকুক।

এবারের নির্বাচনে যে তরুণ ভোটাররা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে প্রধান উপদেষ্টা তার ভাষণে তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, বিপুল তরুণ গোষ্ঠী এবার জীবনে প্রথম ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবে। এসব লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ নেয়ার জন্য আমরা জাতির কাছে অঙ্গীকারাবদ্ধ।

প্রধান উপদেষ্টা ভোটারদের প্রতি আরেকটা আহবান জানিয়েছেন, সকল রাজনৈতিক দল এবং প্রার্থীদের কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার আদায় করে নিতে যেন আগামী সংসদের প্রথম অধিবেশনেই যেসব সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য অর্জিত হয়েছে তা কোনো প্রকার কাটাছেঁড়া ছাড়াই যেন তাঁরা অনুমোদন করেন।‌

প্রধান উপদেষ্টা জনগণের প্রতি আরেকটি আহবান জানিয়ে বলেছেন, আপনারা ওয়াদা আদায় করে নেবেন যে তাঁরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও জাতীয় মর্যাদার প্রশ্নে কখনো কোনো প্রকার আপস করবেন না এবং দেশের বাইরের কোনো শক্তির কাছে দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দেবেন না।

প্রধান উপদেষ্টার এই ভাষণ ভোটের রাজনীতিতে বড় ধরনের প্রভাবে ফেলতে পারে। তিনি জনগণের কাছে তুলে ধরেছেন প্রার্থীদের কাছে তারা কী চাইবেন। নির্বাচনের মধ্যদিয়ে একটি আত্মমর্যাদাশীল জাতি গঠনের রূপরেখা তিনি তুলে ধরেছেন। যেটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব বর্তাবে নির্বাচনের মাধ্যমে যারা ক্ষমতায় আসবে তাদের ওপর। এখন রাজনৈতিক দলগুলোকে এই চ্যালেঞ্জ নিয়ে ভোটের মাঠে যেতে হবে। বিপুল তরুণ ভোটারের রাষ্ট্র ভাবনা ও অভ্যুন্থানের মধ্যদিয়ে দেশের মানুষের মধ্যে যে রাজনৈতিক আকাঙ্খা তৈরি হয়েছে সে বিষয়গুলোকে এখন রাজনৈতিক দলগুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে। বদলাতে হবে পেশি শক্তিনির্ভর পুরানো ধাচের রাজনীতি।

 

আলফাজ আনাম

লেখক : সহযোগী সম্পাদক, আমার দেশ