Image description

জুলাই বিপ্লবের উত্তাল সময়ে নারায়ণগঞ্জের চিটাগাংরোড এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন জাকির হোসেন। ২১ জুলাই বিকেলে কাজে যাওয়ার সময় স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের লেলিয়ে দেওয়া বাহিনীর ছোড়া গুলিতে শহীদ হন তিনি। পরে তার সহকর্মীরা লাশ নিয়ে আসেন রাজধানীর বাড্ডায়, জাকিরের মায়ের কাছে। পরদিন গ্রামের বাড়িতে তার লাশ দাফন করা হয়।

শহীদ জাকির হোসেনের বাড়ি নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর উপজেলার পূর্ব বাকলজোড়া গ্রামে। ওই গ্রামের মৃত ফজলু মিয়া ও মিছিলি বেগম দম্পতির একমাত্র সন্তান তিনি। তবে সেই ‘সবেধন নীলমণি’ জাকিরকে হারিয়ে নিঃস্ব জাকিরের মা।

জানতে চাইলে মিছিলি বেগম আমার দেশকে জানান, রাজধানীর বাড্ডায় ছেলেকে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন তিনি। ঘটনার আগের দিন ওয়াসার পানির লাইন মেরামতের কাজে চিটাগাংরোড এলাকায় যান জাকির। কাজ শেষে আন্দোলন আর কারফিউয়ের কারণে বাড্ডায় মায়ের কাছে ফেরা হয়নি তার। তবে সে না ফেরাটাই যে তার অনন্তকালের জন্য চলে যাওয়া সেটা হয়তো জানতেন না মিছিলি বেগম।

সরেজমিনে দেখা গেছে, জাকিরের উপার্জনে কেনা জমিতেই কবর দেওয়া হয়েছে তাকে। এর এক পাশেই একটি ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। এই ঘরে থাকবেন তার মা এতদিন গৃহহীন থাকা মিছিলি বেগম। ঘরের কাজ প্রায় ৭০ ভাগের মতো শেষ হয়েছে, জাকিরের কবরের পাশেই বাঁশের বেড়া ধরে দাঁড়িয়ে আছেন মা; ভাবছেন ছেলের রেখে যাওয়া স্মৃতিগুলো।

মিছিলি বেগম বলেন, ‘ছোট সময় ঢাকা গেছিগা, কষ্ট করছি অনেক। ছেলেও বড় হয়ে টাকা কামাইয়া সব কষ্ট দূর করে দিছিল। কিন্তু এভাবে সব কিছুই শেষ হয়ে যাবে ভাবছি না। অ্যাহন ঘর অইলেই কি, না অইলেই কি? আমার বিলাসিতা সবই শেষ। স্বপ্ন আছিলো বড় ঘর তুলে, ছেলেরে বিয়ে করিয়ে বউ আনমু, কিন্তু কিছুই অইলো না আমার। সবকিছুই শেষ। এখন কোনোভাবে বাঁইচা আছি আরকি।’

এদিকে জাকিরের উপার্জনে কেনা জায়গা থাকলেও তার মায়ের থাকার মতো নিজেদের কোনো ঘর ছিল না এতদিন। রাতে থাকতে হতো আশপাশের কিংবা স্বজনদের বাড়িতে। বর্তমানে তাকে সমাজকল্যাণ পরিষদের বরাদ্দের টাকায় একটি ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নাভিদ রেজওয়ানুল কবীর বলেন, জাকিরের মায়ের নিকটতম আত্মীয়-স্বজন কেউ নেই। থাকার মতো ঘরও ছিল না। বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানানোর পরে তাকে একটি ঘর করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। গত মাস থেকে এই ঘর নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। আমরা আশা করছি, অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ঘরটি আনুষ্ঠানিকভাবে বুঝিয়ে দিতে পারব।