Image description

বৃষ্টির কাদাপানির মধ্যেই রাজধানীতে জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট। এবারের বাজারে গত বছরের তুলনায় অনেক কম দামে পাওয়া যাচ্ছে গরু। বিগত বছরগুলো থেকে প্রতিটি গরুর দাম কমেছে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। এদিকে, বাজারগুলোতে ক্রেতা সমাগম বাড়তে থাকায় খুশি বিক্রেতারা।

বুধবার সন্ধ্যা থেকে দিনরাত ক্রেতা বিক্রেতাদের আনাগোনায় মুখর হাটগুলো। দরদাম করে পছন্দের গরু কিনে বাড়ি ফিরছেন ক্রেতারা। তবে থেমে থেমে হওয়া বৃষ্টির কারণে কিছুটা ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের। একদিকে বৃষ্টিতে হাঁটু সমান কাদা অপরদিকে গোমূত্রে সয়লাব বাজারগুলো। এরপরেও ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে চলছে দরকষাকষি। উপচে পড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে দর্শনার্থীদের।


হাটে মিলছে নানা জাতের গরু ছাড়াও খাসি, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া। কোথাও কোথাও দেখা মিলছে উট-দুম্বারও। তবে প্রতিবারের মতো এবারও মাঝারি ও ছোট গরুর চাহিদা রয়েছে তুঙ্গে। বড় গরুর চাহিদা কম থাকায় কিছু দুশ্চিন্তায় বিক্রেতারা।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার এখনো পর্যন্ত গরুর দাম গত বছরের তুলনায় কমে বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতাদের দাবি গত বছরের তুলনায় এবার গরুর দাম লাখে ২০-৩০ হাজার টাকা কম পাওয়া যাচ্ছে। ক্রেতারাও জানান গত বছরের তুলনায় এবার গরুর কিছুটা কমে কেনা সম্ভব হচ্ছে।

রাজধানীর মুগদা, গোপিবাগ,কমলাপুর ও মেরুল বাড্ডায় বসা অস্থায়ী পশুর হাটে গিয়ে দেখা যায়, সকাল ১০টার আগেই অনেকেই গরু কিনতে হটে চলে এসেছেন। আফতাবনগর ও মেরাদিয়ায় এবার পশুর হাট না বসায় রামপুরা, বনশ্রী, বাড্ডা ও আশপাশের বাসিন্দারা মেরুল বাড্ডার হাটেই ছুটে আসছেন। ক্রেতা-দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়ের মধ্যেই হঠাৎ মৃদু বৃষ্টির দেখা মিলে। হালকা বৃষ্টিতে হাটের চলাচলে রাস্তায় কাঁদা হয়ে যায়। এ কাঁদাপানি মাড়িই হাটের মধ্যে ঘুরে ঘুরে অনেককেই সামর্থ্য ও পছন্দ অনুযায়ী গরু কিনতে দেখা যায়।

কমলাপুর অস্থায়ী হাট থেকে মান্ডার বাসিন্দা আবদুল মান্নান ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়ে একটি গরু কিনেন। গরুটি বিক্রির সময় আমার দেশ প্রতিবেদক ঘটনা স্থলে উপস্থিত ছিলেন। প্রথম বিক্রেতা গরুটির দাম চান ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা। তবে আবদুল মান্নান দাম বলেন ৭০ হাজার টাকা। এ দামে বিক্রেতা গরু বিক্রি করতে রাজি না হলে অন্যদিকে যাওয়ার চেষ্টা করেন। বিক্রেতা আবু সাইয়েদ ময়মনসিংহ থেকে এসেছেন। সাইয়েদ বলেন, ভাই দামটা বলে যান কত টাকায় নিতে চান। কিন্তু মান্নান চলে যান। সাইয়েদ বলেন, বড় গরম বিক্রি করাটা অসম্ভব হয়ে যাচ্ছে।

কথা হয় গরুটির বিক্রিতে মো. জামাল হোসেনের সঙ্গে। ময়মনসিংহ থেকে গরু নিয়ে আসা এই ব্যাপারী বলেন, আজ সকাল থেকেই বিক্রি ভালো হচ্ছে। তবে এবার গরুর দাম অনেক কম। গত বছরের তুলনায় লাখে ২০-৩০ হাজার টাকা কমে গরু বিক্রি হচ্ছে। মানুষ দরদমও বেশ করছে। কোনো রকমে লাভ পেলেই বিক্রি করে দিচ্ছি।

মেরুল বাড্ডা হাটে জামালপুর থেকে ১২টি গরু নিয়ে আসা কামাল হোসেন বলেন, আমি ছোট ছোট গরু নিয়ে এসেছি। ৫ বছর ধরে ঢাকায় গরু নিয়ে আসছি। এবার গরুর দাম অনেক কম। গত বছর যে গরু এক লাখ টাকার ওপরে বিক্রি করেছি, এবার সেই গরুর দাম অনেকেই ৭০-৭৫ হাজার টাকা বলছি। ১২টি গরুর মধ্যে ৬টি গরু বিক্রি করেছি। বাকি গরুগুলো অল্প লাভ পেলেই বিক্রি করে দেবো।

রামপুরা মোল্লাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা মো. সাবেক সরকারি কর্মকর্তা হাজি আব্দুস সালাম বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার গরু কম দামে কিনতে পেরেছি। গত বছর শেষ সময়ে গরুর দাম অনেক বেড়ে গিয়েছিল। তাই এবার একদিন আগেই গরু কিনলাম। গত বছর যে গরু ২ লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়ে কিনেছিলাম, এবার তার থেকে ভালো গরু ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা দিয়ে কিনতে পেরেছি। আবার এবার আফতাবনগর ও মেরাদিয়ায় গরুর হাট বসেনি। আর মেরুল বাড্ডার হাটিও খুব বড় না। হাটে গরুও খুব বেশি নেই। এ পরিস্থিতি থাকলে আগামীকাল বিকালের পর হাটে গরুর সংকটও দেখা যেতে পারে। ক্রেতার থেকে গরুর সরবরাহ কম হলে দাম বেড়ে যেতে পারে।

গাবতলীর পশুর হাটের ইজারাদাররা বলেন, এখন পর্যন্ত পশুর হাট স্থিতিশীল রয়েছে। পশুর দাম নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতাও সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।

খামারিরা বলছেন, হাটে মাঝারি ও ছোট আকারের গরুর চাহিদা বেশি। ১ থেকে ২ লাখ টাকা মূল্যের ছোট ও মাঝারি আকারের গরুর কেনায় বেশি আগ্রহ ক্রেতারা। তবে বড়ো আকারের গরু-ছাগলের প্রতি আগ্রহ অনেক কম তাদের। দরদাম হলে বিক্রি হচ্ছে কম। ফলে এসব গরুর বেশিরভাগ ফেরত নিয়ে যেতে হবে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।

এদিকে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় একটা বৈধ হাটের ইজারা নিয়ে কয়েকটি এলাকা জুড়ে পশুর হাট বসিয়েছে। ৩/৪টা হাসিল ঘরে হাসিল আদায় হলেও কর্পোরেশন ওই হাসিলের কত শতাংশ পাবে তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন কর্মকর্তারা।

আজ শুক্রবার সকাল ৮টায় স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূইয়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অস্থায়ী পশুর হাট শনির আখড়া পরিদর্শন করবেন বলে জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।