জঙ্গি গোষ্ঠী আইএসের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করা সন্দেহভাজন হামলাকারী শামসুদ-দীন জব্বার সম্পর্কে আরও তথ্য জানতে পেরেছেন যুক্তরাষ্ট্রের তদন্তকারীরা। কিন্তু মার্কিন সেনাবাহিনীর সাবেক এই কর্মী কীভাবে উগ্রবাদী হয়ে উঠলেন, গুরুত্বপূর্ণ এ প্রশ্নের জবাব এখনো পাওয়া যায়নি। তাঁরা এখন জবাবের এ সূত্র খুঁজছেন।যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় গত বুধবার দিবাগত রাত সোয়া তিনটায় লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্যের নিউ অরলিয়েন্স শহরের বুরবন স্ট্রিটে গাড়ি হামলার ঘটনা ঘটে। খ্রিষ্টীয় বর্ষবরণের আনন্দ-উৎসব চলার মধ্যে সেখানে সমবেত মানুষের ওপর একটি পিকআপ ট্রাক তুলে দেন চালক। এরপর লাফিয়ে নেমে একটি আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে তিনি গুলিবর্ষণ শুরু করেন। পুলিশের পাল্টা গুলিতে হামলাকারী নিহত হন। এ হামলায় অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন।
মার্কিন কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআই বলেছে, টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দা শামসুদ-দীন (৪২) সন্দেহভাজন ওই হামলাকারী। আর হামলার পেছনে একাধিক ব্যক্তি ছিলেন বলে ধারণা করছেন তদন্তকারীরা। লুইজিয়ানার অ্যাটর্নি জেনারেল লিজ মুরিল গতকাল বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন।এফবিআইয়ের উপসহকারী পরিচালক ক্রিস্টোফার রাইয়া গতকাল বলেন, হামলার কিছু আগে কয়েকটি ভিডিও ধারণ করেন শামসুদ-দীন। সেখানে টেক্সাসের এই বাসিন্দাকে আইএসের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করতে দেখা যায়। দাবি করা হয়, গত গ্রীষ্মের আগে জঙ্গি গোষ্ঠীটিতে তিনি যোগ দিয়েছিলেন। ‘বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসীদের মধ্যে লড়াইয়ে’ বিশ্বাস করেন তিনি।২০১৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের জর্জিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করেছেন শামসুদ-দীন জব্বার। সেখান থেকে কম্পিউটার ইনফরমেশন সিস্টেমে স্নাতক করেছেন।
রাইয়া জানান, শামসুদ-দীন কীভাবে আইএসে যোগ দিলেন, সেই বিষয়ে অনুসন্ধান করছে এফবিআই। তবে হামলার পর যেসব প্রমাণ তদন্তকারীরা সংগ্রহ করতে পেরেছেন, তাতে তাঁরা নিশ্চিত, সন্দেহভাজন এই হামলাকারী শতভাগ আইএসের মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হন।কর্তৃপক্ষ বলছে, শামসুদ-দীন একাই ওই হামলা চালান। হামলার পরপরই পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন তিনি।শামসুদ-দীনের সৎভাই আবদুল জব্বার এক সাক্ষাৎকারে বলেন, শামসুদ-দীন একসময় একটি নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। বয়স ২০ বা ৩০–এর কোটায় তিনি ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করেছিলেন। তবে সম্প্রতি আবার ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী হন।আবদুল জব্বার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, শামসুদ-দীনের জন্ম ও বেড়ে ওঠা টেক্সাসে। কিন্তু কবে থেকে তাঁর সৎভাই উগ্রবাদে যুক্ত হলেন, সে ব্যাপারে ধারণা নেই।এফবিআইয়ের সাবেক এজেন্ট আলী সৌফান সন্ত্রাসবাদী বিভিন্ন ঘটনা তদন্ত করেছেন। তিনি বলেন, আইএসের মাধ্যমে যাঁরা উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন, ঠিক তাঁদের সঙ্গে শামসুদ-দীনের মিল নেই।
শামসুদ-দীন মার্কিন সেনাবাহিনীতে ১০ বছর কাজ করেছেন। ৪০–এর কোটাতেও এ বাহিনীতে ছিলেন তিনি। যাঁরা আইএসে যোগ দিয়ে থাকেন, সাধারণত তাঁরা আরও কম বয়সী হন। আর শামসুদ-দীন এমন এক ব্যক্তি, যিনি একজন দেশপ্রেমী থেকে আইএসের সন্ত্রাসী হয়ে ওঠেন।
সৌফান বলেন, শামসুদ-দীন মার্কিন সেনাবাহিনীতে ১০ বছর কাজ করেছেন। ৪০–এর কোটাতেও এ বাহিনীতে ছিলেন তিনি। যাঁরা আইএসে যোগ দিয়ে থাকেন, সাধারণত তাঁরা আরও কম বয়সী হন। আর শামসুদ-দীন এমন এক ব্যক্তি, যিনি একজন দেশপ্রেমী থেকে আইএসের সন্ত্রাসী হয়ে ওঠেন।দেশে দেশে বড় রকমের প্রাণঘাতী বিভিন্ন হামলায় যুক্ত ব্যক্তিরা নানা সময় আইএস ও অন্যান্য উগ্রবাদী গোষ্ঠীর সঙ্গে নিজেদের সংশ্লিষ্ট থাকার দাবি করেছেন।এমনই কয়েকটি হামলার মধ্যে রয়েছে ২০১৫ সালে ফ্রান্সের প্যারিসে হামলা, ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় হামলা, ২০১৭ সালে নিউইয়র্ক সিটিতে হামলা। হামলাগুলোতে যথাক্রমে ১৩০ জন, ৪৯ ও ৮ জন নিহত হন।প্যারিসের মতো কিছু হামলায় আইএসের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ পাওয়া ব্যক্তিরা সংশ্লিষ্ট ছিলেন বলে জানা গেছে। তবে তদন্তকারীরা অন্যান্য হামলায় এ গোষ্ঠীর সরাসরি ভূমিকা থাকার কোনো প্রমাণ পাননি।যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে শামসুদ-দীনের যোগাযোগ ছিল কি না, তা এখনো পরিষ্কার নয় বলে জানান মার্কিন কর্মকর্তারা।
শামসুদ-দীন সম্পর্কে আরও যা জানা গেছে
মার্কিন কর্মকর্তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর মানবসম্পদ, তথ্যপ্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিভাগে কাজ করেছেন শামসুদ-দীন জব্বার। ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১০-এর জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি আফগানিস্তানে ছিলেন।শামসুদ-দীন আগে দুবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। এর মধ্যে একটি চুরির ঘটনায় ২০০২ সালের নভেম্বরে তাঁকে একবার গ্রেপ্তার করা হয়। দোষী সাব্যস্ত হলে অল্প জরিমানাও করা হয়েছিল তাঁকে।২০১৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের জর্জিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করেছেন শামসুদ-দীন জব্বার। সেখান থেকে কম্পিউটার ইনফরমেশন সিস্টেমে স্নাতক করেছেন।মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিবিএস জানিয়েছে, শামসুদ-দীন দুবার বিয়ে করেছেন। তাঁর প্রথম বিবাহবিচ্ছেদ হয় ২০১২ সালে। ২০১৭ সালে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। ২০২২ সালে এ বিয়েও ভেঙে যায়।