বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার লন্ডন সফরে সর্বাধুনিক চিকিৎসা সুবিধাসংবলিত এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাঠাচ্ছেন কাতারের আমির। খালেদা জিয়ার প্রতি বিশেষ সম্মান দেখিয়ে দ্রুত এ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় কাতার সরকার।
৭ জানুয়ারি রাতে খালেদা জিয়া লন্ডনে যাচ্ছেন। এর আগের দিন ৬ জানুয়ারি মঙ্গলবার এয়ারবাসের এ-৩১৯ বিশেষ অ্যাম্বুলেন্সটির ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের কথা রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, ম্যাডামকে বহনকারী কাতারের এয়ার অ্যাম্বুলেন্স রি-ফুয়েলিংয়ের জন্য দোহায় স্টপেজ নেবে। পরদিন সকালে লন্ডনে পৌঁছে সেখান থেকে সোজা হাসপাতালে যাবেন তিনি।
এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানান, গতরাতে কাতারের মেডিকেল টিম ম্যাডাম জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তার শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেছেন। লন্ডন থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান চিকিৎসা সফরের প্রস্তুতি নিয়ে গুলশান কার্যালয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও অন্য নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। আজ রোববার রাত ৮টায় বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্যরা খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
বিএনপি ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বেগম খালেদা জিয়ার লন্ডন সফরে তার স্বাস্থ্যের দিক বিবেচনা করে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ ফ্লাইটের জন্য কাতারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। বিষয়টি অবহিত হওয়ার পর কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির নির্দেশে অত্যাধুনিক এ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সফরসঙ্গী হবেন ১৫ জন। ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনের নেতৃত্বে ৬ জন ডাক্তার থাকবেন। এছাড়া বেগম খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ শর্মিলী রহমান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ড. এনামুল হক চৌধুরী, নির্বাহী পরিষদের সদস্য তাবিথ আউয়াল সফরসঙ্গী হিসেবে থাকবেন। এর বাইরে বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা তার সঙ্গে লন্ডন যাবেন।
বেগম খালেদা জিয়া সর্বশেষ ২০১৬ সালে সৌদি সরকারের আমন্ত্রণে ওমরাহ পালনের জন্য সৌদি আরব সফর করেছিলেন। সেখানে তার ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছিল। বেগম খালেদা জিয়া লন্ডন গেলে দীর্ঘ আট বছর পর আবার তার সঙ্গে দেখা হবে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে কারারুদ্ধ করার পর তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর থেকে বিএনপি ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠানোর দাবি করা হলেও তাতে সাড়া দেয়নি হাসিনা সরকার। শেষ পর্যন্ত রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে তার চিকিৎসা ও অস্ত্রোপচার হয়।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ও পলায়নের পর দৃশ্যপট বদলে যায়। বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। সেই আলোকে সরকারকে বিষয়টি অবহিত করা হয়। এরপর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কাতার সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। বেগম খালেদা জিয়াকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স সহযোগিতা দেওয়ার ব্যাপারে কাতারের আমির নিজে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ড. এনামুল হক চৌধুরী আমার দেশকে জানান, কাতার সরকার বেগম জিয়ার সফরের ব্যাপারে বিশেষ আগ্রহ দেখিয়েছেন। এখন পর্যন্ত সফরসূচি ঠিক রয়েছে। ৭ জানুয়ারি সকাল ১০টায় ঢাকা থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি দোহা হয়ে লন্ডন পৌঁছবে।