গত বছর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দেশে মামলা বাণিজ্যের একটি অসাধু চক্র গড়ে ওঠে। এই চক্র ভুয়া মামলায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের নাম ঢুকিয়ে আবার কেটে দেওয়ার নামে কামিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। দেশজুড়ে এই চক্রটি এক আতঙ্কের নাম।‘মামলা বাণিজ্য’ চক্রের সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন স্থানীয় রাজনীতিক, অসাধু আইনজীবী এবং পুলিশ।তবে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাসহ বিভিন্ন দায়িত্বশীল মহল থেকে বলা হয়েছে, বানোয়াট এসব মামলা তদন্তের সময় পর্যালোচনা করা হবে। দায়িত্বশীলদের এমন বক্তব্যর পর কোনো কোনো এলাকায় পুলিশ গুরুত্ব দিয়ে মামলার তদন্তকাজ করলেও বেশির ভাগ থানার পুলিশ রহস্যজনকভাবে নীরব রয়েছে।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব মামলা তদন্তের নামে ‘মামলা বাণিজ্যে’ জড়িয়ে পড়ছেন অনেক পুলিশ কর্মকর্তা। তাঁরাও মামলার আসামি থেকে নাম বাদ দেওয়ার নাম করে কামিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা।
রাজধানীর খিলগাঁও থানায় করা একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় ১৮০ জন আসামির মধ্যে ৩৬ জন আসামি পুলিশ কর্মকর্তা। মামলা থেকে নাম কাটাতে এই পুলিশ কর্তকর্তাদের কাছেও লাখ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়েছে।তবে পুলিশ কর্মকর্তারা দাবি করা সেই চাঁদা দেননি। তার পরও থেমে নেই ‘মামলা বাণিজ্য’ চক্রের সদস্যরা। মামলার আসামিদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায়ে কৌশল পাল্টাচ্ছেন তাঁরা। গত ৪ আগস্ট সিলেটের গোলাপগঞ্জে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান ঘোষগাঁওয়ের মোবারক আলীর ছেলে গউছ উদ্দিন। এ ঘটনায় গত ২৩ আগস্ট গউছ উদ্দিনের ভাতিজা রেজাউল করিম বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন। ফেসবুকের মাধ্যমে রেজাউল যখন জানতে পারেন মামলাটির বাদী তিনি, তখন তিনি মামলাটি দায়েরের বিষয় অস্বীকার করে জানান, তাঁর স্বাক্ষর জাল করে থানায় মামলা করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গোলাপগঞ্জ থানার ওসি মনিরুজ্জামান মোল্লা টেলিফোনে কালের কণ্ঠকে বলেন, “বাদীর স্বাক্ষর জাল কি না, সে বিষয়ে আমাদের কাছে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। মামলায় ১৩৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ মধ্যে ‘মামলা বাণিজ্য’ হচ্ছে বলেও আমাদের কাছে খবর আসছে। তবে আমরা মামলাটি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি। যিনি মারা গেছেন তাঁর পরিবারের বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। আসামিদের বলেছি, নিরপরাধ কাউকে গ্রেপ্তার করা হবে না। নাম কাটানোর জন্য কারো সঙ্গে যোগাযোগ না করতেও বলেছি। তবে এক শ্রেণির সুযোগ সন্ধানী লোক তো আছেই। আর মামলার বাদী আমাদের কাছে এমন কোনো অভিযোগ করেননি যে তাঁর স্বাক্ষরটি জাল।”