
বানানো অবশ্ব্যিস্য গল্পকে ইংরেজিতে বলা হয় Cock and bull story.. অর্থাৎ আষাড়ে গল্প। ভারতের সংবাদ মাধ্যমসমূহ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারের পতনের পর নিয়মিতভাবে আষাড়ে গল্প ফেঁদে যাচ্ছে। তারা নিয়মিত বলে যাচ্ছে যে, পার্বত্য চট্টগ্রামের ৩ জেলাতে পাকিস্তানী আইএসআইয়ের উচ্চ পদস্থ অফিসাররা একাধিকবার সফর করেছেন। তারা নাকি পরীক্ষা করে দেখছেন যে, ঐসব অঞ্চল থেকে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের স্থিতিশীলতা কীভাবে বিনষ্ট করা যায়। একাধিকবার যেসব পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা পার্বত্য চট্টগ্রাম ভিজিট করেছেন তাদের মধ্যে লে. জেনারেল র্যাংকের কর্মকর্তাও নাকি ছিলেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের সাথে উত্তর-পূর্ব ভারতের অভিন্ন সীমান্ত রয়েছে।
এরপর তারা হুমকি দিয়েছে যে, যদি পাকিস্তানের সাহায্যে ইউনূস সরকার সেভেন সিস্টার্সকে ডিস্টার্ব করে তাহলে ভারতও বাংলাদেশকে ভয়ানকভাবে ডির্স্টাব করবে। তারা নিয়মিত বলছে যে, চীন ও পাকিস্তানের সাহায্যে বাংলাদেশ পশ্চিমবঙ্গের মাথার ওপরে অবস্থিত সরু জায়গা শিলিগুড়ি করিডোরকে টার্গেট করেছে। শিলিগুড়ি করিডোরের অপর নাম চিকেন নেক। তারা হুমকি দিয়েছে যে, যদি আমরা পাকিস্তান এবং চীনের সাহায্যে চিকেন নেকের ওপর নজর দেই তাহলে তারা ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়ের একটি অংশ কেটে নিয়ে শিলিগুড়ি করিডোরকে আরও অনেক প্রশস্ত করবে।
এইসঙ্গে তারা আরও একটি হুমকি দিয়েছে। বলেছে যে, আমাদের (ভারতীয়দের) চিকেন নেক রয়েছে ঠিকই। কিন্তু বাংলাদেশ ভুলে গেছে যে, তাদেরও একটি চিকেন নেক রয়েছে। সেটি হলো ‘ফেনী নেক’। ফেনী করিডোরকে বাংলাদেশের ‘চিকেন নেক’ বলা হয়। দেশের আমদানি-রপ্তানির ৯০ ভাগ এই করিডোর দিয়ে আনা নেয়া হয়। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা ও বন্দর নগরী চট্টগ্রামের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেছে এই করিডোর। এজন্য ফেনী করিডোরকে বাংলাদেশের অর্থনীতির লাইফ লাইনও বলা হয়। ফেনী করিডোরের উপর ভারতের কুদৃষ্টি নতুন কোনো বিষয় নয়। ভারতের বিভিন্ন নেতা প্রায়ই এই করিডোর দখল করে বাংলাদেশ থেকে চট্টগ্রামসহ বিভাগের আটটি জেলা বিচ্ছিন্ন করে দখল করার হুমকি দিয়ে থাকেন। ভারতীয় গণমাধ্যমও এই করিডোর দখল করার নিরবচ্ছিন্ন উস্কানি দিয়ে যাচ্ছে। ভারতের এসব হুমকির কারণে দেশের ভিতর থেকে জোর দাবি উঠেছে ফেনীতে একটি সেনানিবাস ও বিমান ঘাঁটি স্থাপনের। ফেনীতে একটি সেনানিবাস থাকলে ভারত সহজে ফেনী করিডোর দখল করে ফেলতে পারবে, এমন উদ্ভট চিন্তা করতে পারবে না। আর যদি ভারত এই করিডোরে হামলা চালায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দ্রুত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারবে।
॥দুই॥
বাংলাদেশের পার্বত্য এলাকায় পাকিস্তানের আইএসআই ঘোরাফেরা করছে। এই কথা তারা যখন বলে, তখন আমাদেরকে বলেতেই হবে যে, ওরা গাঁজার কলকিতে খুব বড় একটি দম মেরে এসব কথা বলছে। মাদকাসক্ত অথবা নেশাগ্রস্থ ব্যক্তিরা অনেক কথাই বলতে পারে। সেগুলিতে বাংলাদেশ কান দেয় না। কিন্তু বাংলাদেশে যে বিপুল সংখ্যক ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থার সদস্য কাজ করছে সেটি এখন ওপেন সিক্রেট। এই ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থার নাম রিসার্চ এ্যান্ড এ্যানালাইসিস উইং (Research and analysis wing), সংক্ষেপে ‘র’। কথায় বলে, কাঁচের ঘরে বসে অন্যের ঘরে ঢিল ছোঁড়া যায় না। তারা আগে ঢিল ছুঁড়েছে। এবার তাদের কাঁচের ঘরে ঢিল মেরেছে আর কেউ নয়, স্বয়ং আ স ম আব্দুর রব।
আ স ম আবদুর রব অতীতে একাধিকবার বলেছেন যে, বাংলাদেশে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর বিশাল নেটওয়ার্ক রয়েছে। তিনি কোনো রাখঢাক না করে বলেছেন যে, বাংলাদেশে ‘র’-এর ৬০ হাজার এজেন্ট বা গুপ্তচর রয়েছে। ‘র’ সম্পর্কে এই কথা রব একবার নয়, একাধিকবার বলেছেন। বাংলাদেশে অবস্থানরত ভারতীয় গুপ্তচরদের সংখ্যা ৬০ হাজার, নাকি তার চেয়ে বেশি? নাকি তার চেয়ে কম? সে রকম হলফ করে কোনো কথা বলা যাবে না। তবে তাদের সংখ্যা যে বিশাল সে ব্যাপারে সন্দেহের কোনো অবকাশ থাকা উচিত নয়। তারা যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খবর রাখে এবং তাদের হট লাইন যে ঢাকা এবং দিল্লির মধ্যে সরাসরি বিস্তৃত সে ব্যাপারে সন্দেহের কোনো অবকাশ নাই। সত্য-মিথ্যা আমরা জানি না, তবে লন্ডনের নামজাদা ‘দি ইকোনোমিস্ট’ জনৈক ইশরাকের একটি ইন্টারভিউ ছেপেছে। এই ইশরাকের পৈত্রিক নিবাস উত্তর বঙ্গের নওগাঁ জেলায়।
আ স ম রব প্রথম ‘র’ সম্পর্কে এই অভিযোগ করেন প্রেসিডেন্ট এরশাদের সময়। তখন তিনি বিরোধী দলের নেতা ছিলেন। এরপর একই অভিযোগ তিনি ২০১৮ সালের রাতের নির্বাচনের পরেও করেছেন। রব ছাড়াও শেখ হাসিনার পতনের পর এখন তো অনেকেই পত্রিকায় লিখে এবং সামাজিক মাধ্যমে বলছেন যে, খোদ সেনা ছাউনিতেই নাকি ‘র’-এর অফিস রয়েছে।
২০১২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ভারতের বহুল প্রচারিত ইন্ডিয়া টুডে-তে যে খবর প্রচারিত হয়, তার অংশ বিশেষ নিম্নরূপ: In late December last year, a secret letter went from New Delhi to Dhaka. It was delivered directly to Sheikh Hasina, the prime minister of Bangladesh. It warned her that Islamist radicals embedded within the Bangladesh Army were planning a coup. Along with the letter, India had worked out a contingency plan to evacuate the prime minister, her cabinet and key figures of her Awami League party in the event of a coup. There was a military plan as well. Indian helicopter gunships would be launched from two airbases in West Bengal and Tripura into Dhaka to provide air cover for the operation. Landing zones and evacuation sites were identified in and around the capital for the air corridor.
বঙ্গানুবাদ: গত বছর ডিসেম্বরের শেষ দিকে দিল্লি থেকে ঢাকায় একটি গোপন চিঠি পাঠানো হয়। চিঠিটি সরাসরি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে দেওয়া হয়। এই চিঠিতে এই মর্মে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয় যে, কট্টর ইসলামপন্থীরা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে অনুপ্রবেশ করেছে। তারা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সামরিক অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা করছে। এই চিঠির সাথে ভারত একটি আপতকালীন প্ল্যানের কথাও উল্লেখ করেছে। ঐ প্ল্যানে বলা হয় যে, যদি সামরিক অভ্যুত্থান ঘটেই তাহলে প্রধানমন্ত্রী তার মন্ত্রিসভার সদস্যবৃন্দ এবং আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে নিরাপদে সরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরার দুটি বিমান ঘাঁটি থেকে দুটি হেলিকপ্টার গানশিপকে কাজে লাগানো হবে। এই অপারেশনে যে এয়ার করিডোর সৃষ্টি করা হবে তার আশে পাশে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং তার সঙ্গীদের অবতরণের ব্যবস্থা থাকবে।
॥তিন॥
দি ইকোনোমিস্ট জনৈক ইশরাকের যে ইন্টারভিউ ছেপেছে, তাতে বলা হয়েছে যে, ওই সামরিক অভ্যুত্থান সফল হলে ইশরাককে রাষ্ট্রপ্রধান করা হতো। ইকোনোমিস্টকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ইশরাক বলেছেন যে, বাংলাদেশ সেনা ছাউনির মধ্যে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর অফিস রয়েছে। তিনি আরো অভিযোগ করেছেন যে, সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে গোয়েন্দা সংস্থা ভারতে সংবাদ আদান-প্রদান করে। ব্যর্থ অভ্যুত্থানের অন্যতম নেতা বলে প্রচারিত মেজর জিয়াউল হকও ইন্টারনেটে আপলোড করা সংবাদে অনুরূপ তথ্য দিয়েছেন।
এর কয়েকদিন আগে প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত সাংবাদিক ইউনিয়নের বার্ষিক সাধারণ সভায় বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেন যে, বাংলাদেশে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার অফিস আছে বলে শুনেছি। তারা নাকি উন্নততর তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদান করে।
বাংলাদেশে এখনো যাদের হাজার হাজার স্পাই অপারেট করে তাদের মুখে বাংলাদেশে চীন বা পাকিস্তানের গুপ্তচরবৃত্তির কথা শোভা পায় না।