বাংলাদেশে এখনো অবৈধভাবে অবস্থান করছেন তিন সহস্রাধিক ভারতীয় নাগরিক। শুধু ভারত নয়; চীন, নেপাল, পাকিস্তান, ফিলিপিন্সসহ আরো কয়েকটি দেশের নাগরিকরাও এখানে অবৈধভাবে অবস্থান করছেন। সরকারি তথ্য মতে, বর্তমানে ছয় হাজার ৯৮ জন বিদেশি নাগরিক বৈধতা না নিয়ে এ দেশে অবস্থান করছেন, যাঁদের মধ্যে ভারতীয় রয়েছেন সবচেয়ে বেশি—তিন হাজার ৩৯৮ জন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ১৬৯টি দেশের নাগরিক বাংলাদেশে বৈধ ও অবৈধভাবে বসবাস করছেন। তাঁদের মধ্যে অনেকের পাসপোর্ট ও ভিসার মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। এর মধ্যে ভারত ও চীনের নাগরিকই বেশি। পাকিস্তানেরও বেশ কিছু নাগরিক রয়েছেন। তা ছাড়া কানাডা, আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, রাশিয়া ও থাইল্যান্ডের কিছু নাগরিকও অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন।
সরকারের পক্ষ থেকে দুই দফায় সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি জারি করে অবৈধভাবে থাকা বিদেশিদের নির্ধারিত সময়ে বৈধতা নেওয়ার আহবান জানানো হয়। সর্বশেষ সময়সীমা ছিল ৩১ জানুয়ারি ২০২৪।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ওই সময়ের মধ্যে বৈধতা অর্জন করেছেন ৩১ হাজার ১৬৮ জন বিদেশি নাগরিক। তাঁদের কাছ থেকে ৪০ কোটি ২৭ লাখ ৬৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। তবে নির্দেশনার পরও ছয় হাজার ৯৮ জন নাগরিক সাড়া না দিয়ে অবৈধভাবে অবস্থান করছেন।
সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশে অবৈধ বিদেশি নাগরিকের সংখ্যা ছিল ৪৯ হাজার ২৬৬। সরকারি কড়াকড়ির মুখে এরই মধ্যে ১২ হাজার বিদেশি বাংলাদেশ ত্যাগ করেছেন।
অতিরিক্ত সচিব মো. শামীম খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশিদের তথ্য সংরক্ষণের জন্য একটি সফটওয়্যার চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটি চালু হলে বৈধ ও অবৈধ বিদেশিদের বিষয়ে হালনাগাদ তথ্য পাওয়া যাবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে কতজন অবৈধ বিদেশি নাগরিক রয়েছেন তা এই মুহূর্তে বলতে পারছি না।’ ২০২৩ সালের ২৮ মে হাইকোর্টের নির্দেশে বৈধ ও অবৈধ বিদেশি কর্মীর প্রকৃত সংখ্যা নির্ধারণ এবং অর্থপাচারসংক্রান্ত তথ্য অনুসন্ধানের উদ্যোগ নেয় সরকার। এর পরই গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তৎপর হয়ে ওঠে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অবৈধভাবে অবস্থানরত অনেক বিদেশি বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন। এরই মধ্যে বিভিন্ন অপরাধে যুক্ত থাকার দায়ে ৪৭২ জন বিদেশিকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
বর্তমানে বৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশির সংখ্যা ৮৩ হাজারের বেশি। এঁদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মার্কিন নাগরিক ১৬ হাজার ৮৬৬ জন। এরপর রয়েছেন ভারতীয় ১৪ হাজার ২৭৭, যুক্তরাজ্যের ১০ হাজার ৫৮২, চীনের আট হাজার ৬৪ এবং কানাডার ছয় হাজার ৯৩ জন নাগরিক।
অবৈধভাবে অবস্থানরত বিদেশিদের তালিকা নিয়ে আগামী টাস্কফোর্স বৈঠকে আলোচনা হবে বলে জানা গেছে। সেখানে সিদ্ধান্ত হবে, তাঁদের বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সরকারি সূত্র বলছে, দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় অবৈধ বিদেশিদের শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আগ্রহী সরকার। এ জন্য প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা নজরদারির পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতাও নেওয়া হবে।
