
মামা-ভাগনে মিলে দুর্নীতির উৎসব করছে প্রাণিসম্পদ বিভাগের সবচেয়ে বড় ‘লাইভ স্টক অ্যান্ড ডেইরি ডেভেলপমেন্ট (এলডিডিপি) প্রকল্পে। ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার যোগসাজশে অবৈধভাবে প্রকল্প পরিচালকের অতিরিক্ত দায়িত্ব নেন ডা. মো. জসিম উদ্দিন। এরপরই ভাগনে নাজমুল হককে নিয়ে শুরু করেন লুটপাটের রাজত্ব। ওপর মহলে দুর্নীতির হিস্সা দিয়ে তিনি বহাল তবিয়তে চালিয়ে যাচ্ছেন নানা অপকর্ম।
এলডিডিপি বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত বাংলাদেশে এখন সবচেয়ে বড় প্রকল্প। প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশে প্রাণিসম্পদ খাতের আধুনিকায়ন করার কথা। সেভাবেই প্রকল্প এগোচ্ছিল। কিন্তু ডা. মো. জসিম উদ্দিন প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব গ্রহণের পর যেন সবকিছু তছনছ হয়ে যায়। এখন এ প্রকল্পকে বলা হচ্ছে লুটপাটের প্রকল্প।
মূলত জসিম উদ্দিন চিফ সায়েন্টিফিক অফিসার (প্যাথোলজি)। কিন্তু এ দায়িত্ব পালন না করে প্রকল্প পরিচালক হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্বেই তার সব আগ্রহ এবং মনোযোগ। অতিরিক্ত দায়িত্ব পেয়েই তিনি অর্থ মন্ত্রণালয়ের ফান্ড অথোরাইজেশন ব্যতিরেকে প্রায় পৌনে ২০০ কোটি টাকা ব্যয় করেছেন, যা আইডিএ অর্থ ব্যয়ের সরকার কর্তৃক জারিকৃত বিধানের স্পষ্ট লঙ্ঘন। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ প্রতিদিনের পক্ষ থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘বিষয়টি তাদের নজরে এসেছে। এনিয়ে তদন্ত চলছে।’ জানা গেছে, জসিম ক্ষমতার অপব্যবহার করে তার পূর্ব এআইইটি প্রকল্পের দুজন স্টাফকে লাইভস্টক ফিল্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট (এলএফএ) পদে নিয়োগ দেন, কিন্তু তাদের কাউকেই ফিল্ডে পোস্টিং দেননি। তাহমিনা আক্তার নামের এলএফএ কখনো অফিসেও আসেন না, বরং পূর্বের এআইইটি প্রকল্প অফিসে বসেন। ভাগনে নাজমুল হক নামের এলএফএ পিডির সার্বক্ষণিক সহচর।
এই নাজমুলের মাধ্যমে পিডি এলএফএ, এলইও, ড্রাইভার ইত্যাদি নিয়োগ ও বদলিতে অর্থ উৎকোচ নিয়ে থাকেন। সব ঠিকাদারি বিলে তিনি ৫% অর্থ গ্রহণ করেন এই নাজমুলের মাধ্যমে। আর অপছন্দের ঠিকাদার যারা প্রতিযোগিতামূলকভাবে কাজ পেয়েছেন, তাদের বাধ্য করছেন সারেন্ডার করে পিডির পছন্দের ঠিকাদারদের দিয়ে কাজ করাচ্ছেন। অনুমোদিত ডিপিপিতে স্লটার হাউস এবং কাঁচা বাজারের নির্মাণ কাজগুলোর জন্য সরকার এলজিইডি থেকে প্রেষণে একজন প্রকৌশলীকে ডিপিডি নিযুক্ত করলেও, পিডি অন্য ডিপিডিকে দিয়ে এসব কাজ করাচ্ছেন। এতে করে পিডির স্বেচ্ছাচারিতা ও ডিপিডিদের মধ্যে বিভাজন রেখা টেনে ডিভাইড অ্যান্ড রুল পলিসি অনুযায়ী কাউকে তোষণ, কাউকে নিষ্পেষণ করে চলছেন। বাংলাদেশ প্রতিদিনের পক্ষ থেকে এসব অনুসন্ধানের তথ্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের কাছে দেওয়া হলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে তিনি তদন্ত করবেন।’