
নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল ওয়ারেছ আনসারীর নাম ধারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংকে ১২ বছর ধরে চাকরি করেছেন এক ব্যক্তি। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তে ধরা পড়েছে ওই ব্যক্তি ওয়ারেছ আনসারী নন।
গত ২৭ মে তার নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। ভুয়া নিয়োগে ওই ব্যক্তিকে সহায়তা করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অতিরিক্তি পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান মিয়া। তাকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তিনি আবার ওই ব্যক্তির চাচা।
বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি একটি তদন্তের মাধ্যমে উদঘাটন করেছে, তাদের রাজশাহী অফিসের যুগ্ম পরিচালক মো. আব্দুল ওয়ারেছ আনসারী নামে যিনি ১২ বছর ধরে চাকরি করছেন, তিনি আসলে ভিন্ন আরেক ব্যক্তি। তিনি ওই নাম ধারণ করে এতদিন চাকরি করেছেন তার চাচার যোগসাজশে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ভুয়া আনসারী তার চাচা মো. শাহজাহান মিয়ার সহায়তায় ২০১৩ সালের ২২ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকে সহকারী পরিচালক (জেনারেল) হিসেবে যোগদান করেন। ওই ব্যক্তি বরখাস্ত হওয়ার আগে বাংলাদেশ ব্যাংকে যুগ্ম পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এক যুগ আগে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে চাকরি হয় নারায়ণগঞ্জের বর্তমান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল ওয়ারেছ আনসারীর। প্রশাসন ক্যাডারে যোগ দেন তিনি। বাংলাদেশ ব্যাংকে কখনো যোগ দেননি। তিনি যোগ না দিলেও তার নাম হুবহু ব্যবহার করে ওই ব্যক্তি যোগ দেন।
জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত ডেপুটি কমিশনার আব্দুল ওয়ারেছ আনসারী আমার দেশকে বলেন, এই ঘটনা আগে জনতাম না। বিভিন্ন মাধ্যমে জানলাম আমার নামেই এক ব্যক্তি ১২ বছর চাকরি করেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকে আমি অভিযোগও করিনি। কারণ বিষয়টি আমি জানতামই না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে অফিশিয়ালি আমাকেও কিছু জানানো হয়নি।
তিনি বলেন, ২০১৩ সালে ৩১তম বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক নিয়োগ পরীক্ষা উভয়ই পাস করি। আমি সিভিল সার্ভিসে যোগদান করি। আমার ধারণা ছিল না যে কেউ আমার আইডি ব্যবহার করে বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরি করছে।
ভুয়া আনসারীর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে তার ফোনে কল দিলে ট্রুকলারে তার নাম দেখানো হয়েছে শাহাজালাল আনসারী।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান আমার দেশকে বলেন, একজন এ বিষয়ে অভিযোগ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংকে। আমরা বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন তদন্ত করেছি। তদন্তে সত্যতা পাওয়া যাওয়ায় নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। একই সঙ্গে এই কাজে সহায়তাকারী শাহজাহানের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। দোষী সাব্যস্ত হলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের জন্য এ ধরনের ঘটনা অত্যন্ত বেদনাদায়ক বলে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র।
এ বিষয়ে জানতে শাহজাহান মিয়াকে কল করা হলে নাম পরিচয় দেওয়ার পর তিনি কল কেটে দেন। পরে আর কল রিসিভ করেননি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৩ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ছিলেন ড. আতিউর রহমান। ওই সময় আরো কয়েকটি নিয়োগ এবং একজন নির্বাহী পরিচালকের বিরুদ্ধে জালিয়াতি করে বয়স বাড়ানোর অভিযোগ ওঠে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ তদন্তে বিষয়টি ধরাও পড়ে। তবে শেষ পর্যন্ত তৎকালীন গভর্নরের কারণে ওই নির্বাহী পরিচালকের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি। আওয়ামী লীগের সময় নিয়োগ পাওয়া অন্যদের নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।