
রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউন হলে মনির আহমেদ নামে এক ব্যবসায়ীর অফিসে প্রবেশ করে চাঁদা চেয়ে প্রকাশ্যে গুলি করে সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনার নেপথ্যে উঠে এসেছে শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান ওরফে পিচ্চি হেলালের সহযোগীদের নাম। যদিও সন্ত্রাসীরা গুলি করার সময় বারবার ‘ক্যাপ্টেন ইমন’-এর নাম বলেছিল। ঘটনার তিনদিন আগে একটি বিদেশি নম্বর থেকে ব্যবসায়ীকে ফোন করে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ক্যাপ্টেন ইমনের পরিচয় দিয়ে এক কোটি টাকা চাঁদা দাবি করা হয়।
ঘটনার আগের দিন তিনবার একই নম্বর থেকে ফোন করা হয়। ওই আবাসন ব্যবসায়ী ফোন না ধরায় পরদিন অর্থাৎ ২৪ মার্চ সন্ধ্যায় ইফতারের পর তিনজন মুখোশ পরে মোটরসাইকেলে করে অফিসে এসে সরাসরি গুলি চালায়। এরপরও চাঁদা না দেওয়ায় ২৮ এপ্রিল দিনদুপুরে দুজন মোটরসাইকেলে এসে সেই আবাসন ব্যবসায়ীর বাসায় ফের গুলি চালায়। তবে, ওই দুই ঘটনায় কেউ গুলিবিদ্ধ হননি।
প্রথম ঘটনায় জাহিদ হোসেন মোড়লের অন্যতম সহযোগী জাভেদকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। জাভেদ শীর্ষ সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। দ্বিতীয় গুলির ঘটনায় গত ৮ মে টাউন হল এলাকা থেকে সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন জাহিদ হোসেন মোড়লের আরেক সহযোগী মোহাম্মদ হাসান মাহমুদ।
শুধু টাউন হল নয়, ওই ঘটনার আগে অর্থাৎ ১৬ মার্চ বিকেল ৩টার পর একই গ্রুপের সদস্যরা লালমাটিয়ার জাকির হোসেন রোডের মাঠের পাশে একটি ইন্টারনেট অফিস দখলে নিতে গুলি চালায়। চাঁদা না দেওয়ায় লালমাটিয়ার ময়লার লাইনও (ময়লা সংগ্রহের কাজ) গুলি করে দখলে নেয় জাহিদ মোড়ল। তবে, ওই দুই ঘটনায় থানায় কোনো মামলা বা অভিযোগ না হওয়ায় বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়।
পিচ্চি হেলালের মোহাম্মদপুর ও আদাবর এলাকায় সাম্রাজ্য দেখভাল করেন জাহিদ মোড়ল, লিটন মাহমুদ বাবু ওরফে তেরেনাম বাবু, মনোয়ার হোসেন জীবন ওরফে লেদু হাসান, ওয়াহিদুল হাসান দিপু, মফিজ উদ্দিন মফি, মজিদ ওরফে ভাঙারি মজিদ, দোলন, রিয়াজ, সালাউদ্দিন, ভাগনে শুভ, গিট্টু রানা, সাব্বির, চিকু শাকিল, দিপু, হাসান, জুয়েল, রাসেল, ইউসুফ, পেটকা তুহিন, ফালান, দিদার, মো. জুয়েল ও রফিক। শেরশাহ সুরি রোডে গুলির ওই ঘটনার পর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল লালমাটিয়ার স্বপ্নপুরীর পাশের একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত জাভেদকে গ্রেপ্তার করে
বিজ্ঞাপন

ইফতারের পর অফিসে ঢুকে গুলি
গত ২৪ মার্চ সন্ধ্যা ৭টা ২৩ মিনিটে মোহাম্মদপুরের টাউন হলের শেরশাহ সুরি রোডের আবাসন ব্যবসায়ীর অফিসে ঢুকে মুখোশ পরে গুলি করে সন্ত্রাসীরা। এই ঘটনার পর নতুন করে আলোচনায় আসে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের তৎপরতা। মোহাম্মদপুর এলাকায় এক শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম ভাঙিয়ে অন্য শীর্ষ সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্যদের এমন কর্মকাণ্ডে পুরো এলাকাজুড়ে নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
জানা যায়, গত ২০ মার্চ রাত ১২টা ৭ মিনিটে একটি বিদেশি নম্বর (+৯৭৪৬৬৬৩৭...) থেকে হোয়াটসঅ্যাপে ফোন দিয়ে মনির আহমেদ নামে ওই ব্যবসায়ীকে ‘ক্যাপ্টেন ইমন’ পরিচয় দিয়ে ঈদের সালামি চাওয়া হয়। ২২ মার্চ আবারও কয়েক দফায় সেই নম্বর থেকে ফোন করা হয়। সেই সময় ফোন না ধরায় ২৪ মার্চ (সোমবার) সন্ধ্যা ৭টা ২৩ মিনিটে একটি মোটরসাইকেলে তিনজনের একটি সন্ত্রাসী দল ওই ব্যবসায়ীর অফিসে এসে প্রকাশ্যে গুলি করে। তিনি মোহাম্মদপুর এলাকার চন্দ্রিমা হাউজিং নামে একটি আবাসন ব্যবসার পরিচালক।
অনুসন্ধানে জানা যায়, শেরশাহ সুরি রোডে ওই ব্যবসায়ীর বাসার নিচতলার অফিসে এসে গুলি করা ব্যক্তিরা শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান ওরফে পিচ্চি হেলালের অন্যতম সহযোগী হিসেবে পরিচিত জাহিদ মোড়লের লোক। তারা মোটরসাইকেলে করে আসেন এবং অফিসে প্রবেশ করে গুলি করেন। গুলি করা ব্যক্তির নাম রুবেল এবং গুলি করার দৃশ্য মোবাইল ফোনে ধারণ করেন কালো গেঞ্জি পরিহিত শাওন। এছাড়া মোটরসাইকেলে বসে বাইরে অপেক্ষা করেন জাভেদ। তারা জাহিদ মোড়লের সহযোগী হিসেবে পরিচিত।
জানা যায়, পিচ্চি হেলালের মোহাম্মদপুর ও আদাবর এলাকায় সাম্রাজ্য দেখভাল করেন জাহিদ মোড়ল, লিটন মাহমুদ বাবু ওরফে তেরেনাম বাবু, মনোয়ার হোসেন জীবন ওরফে লেদু হাসান, ওয়াহিদুল হাসান দিপু, মফিজ উদ্দিন মফি, মজিদ ওরফে ভাঙারি মজিদ, দোলন, রিয়াজ, সালাউদ্দিন, ভাগনে শুভ, গিট্টু রানা, সাব্বির, চিকু শাকিল, দিপু, হাসান, জুয়েল, রাসেল, ইউসুফ, পেটকা তুহিন, ফালান, দিদার, মো. জুয়েল ও রফিক। শেরশাহ সুরি রোডে গুলির ওই ঘটনার পর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল লালমাটিয়ার স্বপ্নপুরীর পাশের একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত জাভেদকে গ্রেপ্তার করে।
গুলির ওই ঘটনায় অনুসন্ধানে নামে ঢাকা পোস্ট। সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জাভেদের ব্যবহৃত মোবাইলে আবাসন ব্যবসায়ী মনির আহমেদকে যেই বিদেশি নম্বর (+৯৭৪৬৬৬৩৭...) থেকে ফোন দেওয়া হয়েছিল সেই নম্বরটির সঙ্গে একাধিকবার কথা হয় গ্রেপ্তার জাহিদ মোড়লের অন্যতম সহযোগী জাভেদের। জাভেদের ফোনে সেই বিদেশি নম্বরটি ‘ThE FiNaL CoUnT dOwN’ দিয়ে সেভ করা রয়েছে। ওই বিদেশি নম্বরের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে জাভেদের কথা বলার স্ক্রিনশটও এসেছে ঢাকা পোস্টের হাতে। বর্তমানে জাভেদ কারাগারে আছেন।

এ বিষয়ে পরিচয় গোপন রাখার শর্তে কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে জানান, আবাসন ব্যবসায়ী মনিরের কাছে শীর্ষ সন্ত্রাসী ক্যাপ্টেন ইমন পরিচয়ে চাঁদা দাবি করে বিদেশি একটি নম্বর থেকে হোয়াটসঅ্যাপে কল আসে। ঘটনার দিন সন্ধ্যার পরে অর্থাৎ ঘটনা ঘটার ঠিক ২০ মিনিট পরে একজন ডিশ লাইন ব্যবসায়ীর নম্বর থেকে কল আসে ব্যবসায়ী মনিরের মোবাইলে। অপর প্রান্তে থাকা ওই ডিশ ব্যবসায়ী বলেন, ‘মনির ভাই, আপনি জাহিদ ভাইয়ের সাথে কথা বলেন।’ পরে জাহিদ মোড়লের সঙ্গে কথা বলেন আবাসন ব্যবসায়ী মনির। কথার একপর্যায়ে মনির বলেন, ‘আমি একটু ঝামেলায় আছি, পরে কথা বলব।’ তখন অপরপ্রান্ত থেকে জাহিদ মোড়ল বলেন, ‘কী সমস্যা হয়েছে?’ তিনি (মনির) বলেন, ‘ভাই আমার অফিসে এসে কারা যেন গুলি করেছে।’
বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়। মূলত জাহিদ মোড়ল তার (মনির আহমেদ) বাসায় গুলি করা হয়েছে কি না, বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য আরেকজনের নম্বর দিয়ে মনির আহমেদের সঙ্গে কথা বলেন। এতেই বোঝা যায় গুলির ঘটনাটি জাহিদ মোড়লই ঘটিয়েছেন— মনে করেন সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা।
এদিকে, আবাসন ব্যবসায়ীর বাসায় চাঁদার দাবিতে গুলির ঘটনায় গ্রেপ্তার জাভেদের কাছ থেকে চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। বর্তমানে মামলাটি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ তদন্ত করছেন।
জাভেদের ব্যবহৃত মোবাইলে আবাসন ব্যবসায়ী মনির আহমেদকে যেই বিদেশি নম্বর (+৯৭৪৬৬৬৩৭...) থেকে ফোন দেওয়া হয়েছিল সেই নম্বরটির সঙ্গে একাধিকবার কথা হয় গ্রেপ্তার জাহিদ মোড়লের অন্যতম সহযোগী জাভেদের। জাভেদের ফোনে সেই বিদেশি নম্বরটি ‘ThE FiNaL CoUnT dOwN’ দিয়ে সেভ করা রয়েছে। ওই বিদেশি নম্বরের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে জাভেদের কথা বলার স্ক্রিনশটও এসেছে ঢাকা পোস্টের হাতে। বর্তমানে জাভেদ কারাগারে আছেন
দ্বিতীয় দফায় বাসায় গুলি
চাঁদা না দেওয়ায় দ্বিতীয় দফায় সন্ত্রাসীরা দিনদুপুরে গুলি চালায় আবাসন ব্যবসায়ী মনির আহমেদের বাসায়। গত ২৮ এপ্রিল দুপুর ২টা ২০ মিনিটের দিকে একটি মোটরসাইকেল আবাসন ব্যবসায়ীর বাসার সামনে এসে থামে। দারোয়ান গেট খুলতেই হেলমেট পরা এক যুবক গুলি চালায়। তিনি জাহিদ মোড়লের অন্যতম সহযোগী মোহাম্মদ হাসান মাহমুদ বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ওই ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় আরও একটি মামলা দায়ের করেন বাড়ির কেয়ারটেকার জিহাদুল ইসলাম। সেই মামলার এজাহারে হাসানের নাম উল্লেখ করা হয়।
পরে টাউন হল এলাকা থেকে মো. হাসান মাহমুদকে গাঁজাসহ গ্রেপ্তার করে সেনাবাহিনী। সেই ঘটনায় আরও একটি মামলা হয় এবং গুলির ঘটনায়ও তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

স্থানীয়রা জানান, গত ৫ আগস্টের পর জাহিদ মোড়লের নেতৃত্বে পুরো এলাকায় চাঁদাবাজি, দখল ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বেড়েছে। কেউ তাদের বিরুদ্ধে কথা বললে তার প্রাণনাশের হুমকি চলে আসে। ফলে ভয়ে এখন কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না।
এদিকে, জাহিদ মোড়লের ইন্টারনেট ব্যবসায়ীর কাছ থেকে চাঁদা চাওয়া এবং জমি দখলের হুমকিসহ কয়েকটি অডিও রেকর্ড এসেছে ঢাকা পোস্টের হাতে।
টাউন হলের গুলির ঘটনায় বাড়ির কেয়ারটেকার জিহাদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ২৪ মার্চ ইফতারের পর অর্থাৎ সন্ধ্যা ৭টার দিকে একটি মোটরসাইকেলে করে তিনজন লোক আসেন। এর মধ্যে একজন মোটরসাইকেলের ওপর বসে ছিলেন। বাকি দুজন অফিসে প্রবেশ করেই বলেন, ‘ক্যাপ্টেন ইমনের সাথে যোগাযোগ করছিস না ক্যান? এক কোটি টাকা চাঁদা দেওয়ার কথা ছিল, সেই টাকা দিস নাই ক্যান? মনির কোথায়? দ্রুত টাকা দিতে হবে’— এই কথা বলেই গুলি করেন।
জাহিদ মোড়ল দেশে বসেই তার অপরাধ সাম্রাজ্য টিকিয়ে রাখতে তিনটি বিদেশি নম্বর এবং দুটি দেশি নম্বর ব্যবহার করছেন। নম্বরগুলো হলো- +34611220..., +34631061..., +34604370..., 01919997..., 01604813...। জাহিদ মোড়ল পিচ্চি হেলালের অন্যতম সহযোগী এবং ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক। মোহাম্মদপুর এলাকায় অপরাধ সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন তিনি। রাজনৈতিক প্রভাব ও পিচ্চি হেলালের অন্যতম সহযোগী হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস দেখান না
‘একটা গুলি আমার হাতের পাশ দিয়ে চলে যায়। একজন গুলি করে, আরেকজন তা ভিডিও করে। সবাই মুখোশ পরা ছিল, তাই কাউকে চিনতে পারিনি। এই ঘটনায় ডিবি পুলিশ জাভেদকে গ্রেপ্তার করেছে’— বলেন কেয়ারটেকার জিহাদুল ইসলাম। তিনি আরও বলেন, “প্রথম ঘটনায় মামলা হওয়ার পর জাভেদকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। ঠিক এক মাস পর দুপুর ২টা ২০ মিনিটের দিকে একজন বাসার গেটের সামনে মোটরসাইকেল থামিয়ে ঢুকে পড়ে। ‘এখনও চাঁদার এক কোটি টাকা দিস নাই। যত দ্রুত সম্ভব ওই এক কোটি টাকা দিতে হবে’ বলে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে এবং কোমর থেকে পিস্তল বের করে গুলি করে। পরে আমি বাদী হয়ে হাসানের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত দুই-তিনজনের নাম দিয়ে মোহাম্মদপুর থানায় আরও একটি মামলা দায়ের করি।”

কথা হয় ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী মনির আহমেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘প্রথম ঘটনায় (২০ মার্চ) আমাকে একটি বিদেশি নম্বর থেকে ফোন করে ইমন পরিচয় দিয়ে ঈদ উপলক্ষ্যে দেখা করতে বলে। এরপর আমাকে তিনবার হোয়াটসঅ্যাপে ফোন করে। আমি ফোন না ধরায় ২৪ মার্চ আমার অফিসে এসে প্রকাশ্যে গুলি করে। গুলির সময় আমি অফিসে ছিলাম না। আমাকে স্টাফরা ফোন করার সাথে সাথে আমি অফিসে এসে বিষয়টি নিয়ে পুলিশকে ফোন করি। ঘটনা ঘটার ঠিক ২০ মিনিট পর একজন ডিশ ব্যবসায়ীর নম্বর দিয়ে জাহিদ মোড়ল আমার সাথে মোবাইলে কথা বলে। কথা বলার একপর্যায়ে আমি বলি, আমি একটু ঝামেলায় আছি ভাই। সে জিজ্ঞাসা করে, কী ঝামেলায় আছেন? পরে আমি বলি, আমার অফিসে গুলির ঘটনা ঘটেছে।’
জাহিদ মোড়ল আমাকে বলেন, ‘যারা চাঁদা চেয়েছে তাদের চাঁদার টাকা দিয়ে ঘটনাটি মীমাংসা করে ফেলেন।’ এরপর আমি ফোন রেখে দেই। সেই ঘটনায় আমার বাড়ির কেয়ারটেকার বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। পরে ডিবি জাভেদ নামের একজনকে গ্রেপ্তার করে। কিন্তু আমি পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি, শীর্ষ সন্ত্রাসী ক্যাপ্টেন ইমন আমাকে ফোন দেননি। ওই বিদেশি নম্বর থেকে ফোন দেওয়া হলে আমি বলেছিলাম, ক্যাপ্টেন ইমনকে আমাকে ফোন দিতে বলেন।
তিনি আরও বলেন, ‘এরপর এপ্রিল মাসের ২৮ তারিখ দুপুরবেলা আমার বাসার গেট দিয়ে ঢুকে ফের গুলি করা হয়। ওই ঘটনায় আমার কেয়ারটেকার আরও একটি মামলা দায়ের করে মোহাম্মদপুর থানায়। পরে সেনাবাহিনী বিভিন্ন মাদকদ্রব্যসহ হাসানকে গ্রেপ্তার করে। প্রথম ঘটনায় জাহিদ মোড়ল আমাকে ফোন দেয়। বিষয়টি একটু অস্বাভাবিক মনে হয় আমার কাছে।’
গত বছরের ১৬ নভেম্বর একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে। ওই দিন রাজধানীর মোহাম্মদপুরের নূরজাহান রোডে সাবেক এমপি বিপ্লবের বাসায় জোরপূর্বক ধারালো অস্ত্র নিয়ে প্রবেশে বাধা দেওয়ায় মোহাম্মদ আলী নামের এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে আহত করে জাহিদ মোড়লের অন্যতম সহযোগী ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক দোলন (৪২)। ওই ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, নূরজাহান রোডের ৩৮ নম্বর বাসায় কয়েকজন ব্যক্তি জোরপূর্বক প্রবেশ করে। তাদের বেশ কয়েকজনের হাতে ধারালো চাপাতি দেখা যায়। কিছুক্ষণ পর তারা আশপাশের লোকজনকে কোপাতে উদ্যত হয়। ভয়ে লোকজন দৌড়াদৌড়ি শুরু করেন। এ সময় মোহাম্মদ আলী নামের একজনকে কুপিয়ে আহত করে ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক দোলনসহ বেশ কয়েকজন। পরে তারা মোটরসাইকেলে পালিয়ে যায়। গ্রেপ্তার দোলন জাহিদ মোড়লের একনিষ্ঠ সহযোগী। জাহিদ মোড়লের নির্দেশেই দোলনসহ অন্যরা সাবেক এমপি বিপ্লবের বাসায় তল্লাশির নামে ডাকাতির চেষ্টা করে।

একই বছরের ১৬ মার্চ লালমাটিয়ার জাকির হোসেন রোডের বি-৩৫ নম্বর বাসায় কসমিক ডিশ নেটওয়ার্ক নামে একটি ইন্টারনেট অফিস দখল করতে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোঁড়ে সন্ত্রাসীরা। প্রকাশ্যে ঘটনাটি ঘটলেও বিষয়টি নিয়ে ওই ইন্টারনেট ব্যবসায়ী কিংবা এলাকার কোনো মানুষ ভয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি। থানা পুলিশ বিষয়টি জানলেও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
ওই ঘটনার পর লালমাটিয়া এলাকায় ময়লা মামুনের বাসায় প্রকাশ্যে গুলি করে তার ময়লা সংগ্রহের কাজ দখলে নেয় জাহিদ মোড়ল। তবে, জাহিদ মোড়লের ভয়ে থানায় কেউ মামলা ও অভিযোগ করেনি। পরে বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়।
এদিকে, জাহিদ মোড়লের বিরুদ্ধে হত্যাসহ বেশ কয়েকটি মামলার কপি ঢাকা পোস্টের হাতে এসেছে। এছাড়া সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালের সঙ্গে জাহিদ মোড়লসহ গ্রেপ্তার তার সহযোগীদের একাধিক ছবিও ঢাকা পোস্টের কাছে সংরক্ষিত আছে।
জানা যায়, জাহিদ মোড়ল দেশে বসেই তার অপরাধ সাম্রাজ্য টিকিয়ে রাখতে তিনটি বিদেশি নম্বর এবং দুটি দেশি নম্বর ব্যবহার করছেন। নম্বরগুলো হলো- +34611220..., +34631061..., +34604370..., 01919997..., 01604813...। জাহিদ মোড়ল পিচ্চি হেলালের অন্যতম সহযোগী এবং ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক। মোহাম্মদপুর এলাকায় অপরাধ সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন তিনি। রাজনৈতিক প্রভাব ও পিচ্চি হেলালের অন্যতম সহযোগী হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস দেখান না।
ধারাবাহিক কয়েকটি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সংঘটিত হলেও তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি। কিন্তু অন্যতম দুই সহযোগী জাভেদ ও হাসান গ্রেপ্তার হলে আত্মগোপনে চলে যান জাহিদ মোড়ল। তার দেশি ও বিদেশি নম্বরে যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে প্রথম মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তেজগাঁও গোয়েন্দা বিভাগের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, মামলাটি এর আগে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ তদন্ত করেছিল। কয়েকদিন আগে মামলাটি আমি তদন্ত শুরু করি। এরপর মামলার তদন্তের স্বার্থে গ্রেপ্তার জাভেদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে আনা হয়। তার মোবাইল থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। আবাসন ব্যবসায়ীর বাসায় গুলির ঘটনায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটিও পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে জাভেদ জানিয়েছে মোবাইলটি শাওন ব্যবহার করত।

ওই আবাসন ব্যবসায়ীর মোবাইলে যে বিদেশি নম্বর থেকে কল এসেছিল সেই নম্বরটি জাভেদের হোয়াটসঅ্যাপে ‘ThE FiNaL CoUnT dOwN’ নামে সেভ করা ছিল। এ বিষয়ে তিনি বলেন, “হ্যাঁ ঠিক আছে, নম্বরটি জাভেদের মোবাইলে ইংলিশে ‘দ্যা ফাইনাল কাউন্ট ডাউন’ দিয়ে সেভ করা রয়েছে। জাভেদের কাছ থেকে যে ফোনটি জব্দ করা হয়েছে সেটি বাংলাদেশি মোবাইল ফোন কোম্পানির নম্বর। আমরা এ বিষয়ের অধিকতর তদন্ত করছি এবং আরও কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করতে পারলে ঘটনাটির আরও গভীরে যাওয়া যাবে।”
দ্বিতীয় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. মোশারফ জানান, মোহাম্মদপুরের টাউন হল শেরশাহ সুরি রোডের ব্যবসায়ী মনির আহমদের বাসায় গুলির ঘটনায় এজাহারভুক্ত আসামি মো. হাসানকে গাঁজা ও মদের বোতলসহ গ্রেপ্তার করে সেনাবাহিনীর একটি দল। পরে তাকে মোহাম্মদপুর থানায় হস্তান্তর করা হয়। ওই ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মাদকসহ আরও কয়েকটি মামলা হয়। গুলির ঘটনায়ও তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন।
গুলির ঘটনায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নেওয়া হবে— বলেও জানান তিনি।