
ঈদ ঘিরে সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের দৌরাত্ম্য বাড়ে। অজ্ঞানপার্টি, মলমপার্টিসহ বিভিন্ন নামে পরিচিত এসব চক্র। সুযোগ পেলেই তারা ছিনিয়ে নেয় সর্বস্ব। এ ছাড়াও ঘটে চাঁদাবাজি, ডাকাতি, ছিনতাই, অপহরণের ঘটনা। রয়েছে জাল নোট ছড়ানোর তৎপরতা। তাছাড়া অনলাইনে পশুর হাটসহ বিভিন্ন পণ্য কেনাকাটায় রয়েছে প্রতারণা। রাস্তাঘাট, যানবাহনসহ বিভিন্নস্থানে নানাবিধ ছদ্মবেশি প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়েন সাধারণ মানুষ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদুল আজহাকে ঘিরে বিভিন্ন ধরনের অপরাধের অভিযোগ পাওয়া যায়। তার মধ্যে অন্যতম ছিনতাই, মলমপার্টি, জাল টাকা, অজ্ঞানপার্টিসহ বিভিন্ন ধরনের প্রতারক এই সময়ে সক্রিয় হয়ে ওঠে। কোরবানির পশুর হাটকে তারা টার্গেট করে বেশি। পশুরহাটে সিসি ক্যামেরা, কন্ট্রোল রুম, টাকা গণনা ও জাল নোট চিহ্নিত মেশিন স্থাপন, সিসি ক্যামেরা, ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজধানীতে সব এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো হয়েছে। বিভিন্ন অপরাধ ঠেকাতে বাস, লঞ্চ, রেলস্টেশন কেন্দ্রিক নিরাপত্তা জোরদার করা হবে। বাড়ানো হবে টহল কার্যক্রম। নানাবিধ অপরাধ ঠেকাতে গঠন করা হবে মনিটরিং টিম। বাড়ানো হবে গোয়েন্দা নজরদারিও।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, অপরাধীরা একেক সময় একেক এলাকায় অবস্থান করে অপরাধের ঘটনা ঘটিয়ে দ্রুত স্থান পরিবর্তন করে। চক্রগুলো কোরবানির পশুর হাটে পাইকারি বিক্রেতাদের টার্গেট নিয়ে মাঠে নামে। এ ছাড়া ব্যস্ত শহর ছেড়ে বিভিন্ন জেলায় বাড়ি ফেরা বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষদের টার্গেট করে অজ্ঞান ও মলমপার্টির সদস্যরা বিভক্ত হয়ে কাজ করে। যাত্রীবেশে গাড়িতে উঠে টার্গেট ব্যক্তিকে অজ্ঞান করে সবকিছু নিয়ে পালিয়ে যায়। এ ছাড়া গাবতলী, মহাখালী, সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড, কমলাপুর রেলস্টেশন ও সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে বাড়ে অপরাধীদের তৎপরতা।
যেভাবে সংঘটিত হয় অপরাধ: মলমপার্টি-অজ্ঞানপার্টি ঈদকে ঘিরে বাড়ে তাদের তৎপরতা। তারা কোরবানির পশুর ব্যাপারীদের টার্গেট করে মাঠে নামে। ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় এসকল চক্রের তৎপরতা দেখা দেয়। চক্রগুলোতে সদস্য সংখ্যা থাকে একের অধিক। তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তারও হয়। প্রতারক চক্র বাস, ট্রেন ও লঞ্চ টার্মিনালগুলো এবং পশুর হাট থেকে শুরু করে ব্যাপারীদের টার্গেট করতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। বিস্তৃত থাকে সংঘবদ্ধ এই অপরাধী চক্রের সদস্যরা। সূত্র জানায়, অজ্ঞানপার্টির সদস্যরা লঞ্চঘাট, ফুটপাথ, রেল বা বাস স্টেশন টার্গেট করে। এসব জায়গায় জুস, চা, কফি, ডাবের পানি, ঝালমুড়ি ইত্যাদি খাবার বিভিন্ন ছদ্মবেশে বিক্রেতা সেজে এসব খাবার পণ্য বিক্রি করে। আবার চক্রগুলোর সদস্যরা বাসে, লঞ্চে বা ট্রেনে যাত্রীদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে চেতনানাশক মিশিয়ে খাবার খাইয়ে মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে পালিয়ে যায়।
সক্রিয় জাল নোট চক্র: ঈদুল আজহার দিন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সক্রিয় হয়ে ওঠে জাল নোট তৈরি চক্র। এ সময় কোরবানির পশুর হাট ছাড়াও অন্য ব্যবসায়ীদের মধ্যে ব্যাপক অর্থের লেনদেন হয়। ব্যস্ততম লেনদের এই সময়ে সুযোগেই বাজারে জাল নোট ছাড়ে এসব চক্র। ঈদকে টার্গেট করে টাকা তৈরির প্রস্তুতি নেয়া এমন চক্রকে গ্রেপ্তারও করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
সচেতনতার পরামর্শ ডিএমপি’র: ঈদুল আজহা উপলক্ষে বড় ধরনের টাকা বহনের ক্ষেত্রে পুলিশের সহায়তা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ- ডিএমপি। এ ছাড়া দূরপাল্লার যাত্রার ক্ষেত্রে কাউন্টার ব্যতীত যাত্রী উঠা-নামা না করানোর জন্য সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করেন। অপরাধীদের কবল থেকে রক্ষা বা দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সকলকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালনে সচেতনতার পরামর্শ দেয়া হয়েছে ডিএমপি’র পক্ষ থেকে।
অনলাইনে পশুর হাটে র্যাবের নজরদারি: কোরবানির পশু প্রতিবছরই অনলাইনে ক্রয়-বিক্রয় হয়ে থাকে। এই সুযোগে সাইবার জগতেও সক্রিয় থাকে প্রতারক চক্র। অনেকে ফাঁদে পড়েন এসব চক্রের। এ ক্ষেত্রে অনিয়ম ও প্রতারণা প্রতিরোধে র্যাব সাইবার মনিটরিং সেল সার্বক্ষণিক ভার্চ্যুয়াল জগতে থাকছে নজরদারি।
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেন, ঈদুল আজহা উপলক্ষে মেট্রোপলিটন পুলিশ, জেলা পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, রেলওয়ে পুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশ, নৌ পুলিশসহ পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিটসমূহ সম্মিলিতভাবে দায়িত্ব পালন করবে। কোরবানির পশু পরিবহন নির্বিঘ্ন করা, এক হাটের পশু জোর করে অন্য হাটে না নেয়া, হাইওয়ের পাশে পশুর হাট না বসানো, জাল টাকা, ছিনতাই ও চাঁদাবাজি প্রতিরোধ, মার্কেট ও শপিংমলের নিরাপত্তা প্রদানে সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
ডিএমপি কমিশনার মো. সাজ্জাত আলী বলেন, এবারো আমরা সম্মানিত নগরবাসীকে নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ ঈদযাত্রা উপহার দিতে পারবো। তিনি বলেন, অপরাধ ও দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সকলকে সচেতন হতে হবে। ঈদ আনন্দ যেন কারও নিরানন্দের কারণ না হয় সেদিকে সকলকে খেয়াল রাখতে হবে। সরকারের সকল সংস্থাকে ঈদযাত্রা নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করার জন্য সমন্বয় করে দায়িত্ব পালন করার অনুরোধ করেন তিনি।
অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন মো. নজরুল ইসলাম বলেন, অজ্ঞানপার্টি, মলমপার্টি, ছিনতাইকারী প্রতিরোধে ডিএমপি’র টহল জোরদার করা হবে। ঈদুল আজহা উপলক্ষে বড় ধরনের টাকা বহনের ক্ষেত্রে পুলিশের সহায়তা নেয়ার আহ্বান জানান তিনি। এ ছাড়া দূরপাল্লার যাত্রার ক্ষেত্রে কাউন্টার ব্যতীত যাত্রী উঠা-নামা না করানোর জন্য সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করেন তিনি।
র্যাব সদর দপ্তরের আইন ও গণমাধ্যম শাখার সহকারী পরিচালক সিনিয়র এএসপি মুত্তাজুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, কোরবানির হাট কেন্দ্রিক ও মার্কেটে চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই, প্রতারক চক্র, দালাল, মলমপার্টি, চাঁদাবাজি এবং অজ্ঞানপার্টির তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা রুখতে র্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি ও টহলসহ বিভিন্ন কার্যক্রম বৃদ্ধি করা হয়েছে।