
পবিত্র ঈদুল আজহায় স্বস্তিদায়ক ঈদযাত্রা নিশ্চিত করতে নতুন প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সংস্থাটি বলছে, ধাপে ধাপে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার সুবিধার্থে ছুটি বিন্যাস করে ঈদের পরের ছুটি কমিয়ে আগে দিতে।মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটি মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী এ প্রস্তাব দেন।
তিনি বলেন, আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহায় সরকারের পক্ষ থেকে ১০ দিন ছুটি ঘোষণার বিষয়টি ইতোপূর্বে গণমাধ্যমে চাউর হয়েছে। কিন্তু কোনো প্রকার সমীক্ষা ছাড়াই এই ছুটি ঘোষণা করায় দেশের যাত্রী সাধারণ এবারের আসন্ন ঈদুল আজহায় ভয়াবহ দুর্ভোগে পড়তে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে বিষয়টি সরকারের সড়ক পরিবহণ উপদেষ্টা, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্টদের জানানো হলেও তেমন কোনো সাড়া মেলেনি।
মোজাম্মেল আরও বলেন, যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে- বিগত ২৫ বছরের মধ্যে বিদায়ী পবিত্র ঈদুল ফিতরে স্বস্তিদায়ক ঈদযাত্রার পেছনে মূলত তিনটি কারণ ছিল। ঈদের আগে ৪ দিনের লম্বা ছুটি, সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতি ও শ্রমিক ফেডারেশনের প্রভাবশালী মাফিয়া নেতারা পালিয়ে যাওয়ায় সড়কে মাস্তানিতন্ত্রের অবসান; সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিআরটিএ, ভোক্তা অধিদপ্তরসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বিত আন্তরিক প্রচেষ্টার কারণে মানুষের ভোগান্তিমুক্ত যাতায়াত নিশ্চিত করা গেছে। এই কারণে ২০২৪ সালের ঈদুল ফিতরের তুলনায় ২০২৫ সালের ঈদুল ফিতরে সড়ক দুর্ঘটনা ২১.০৫ শতাংশ, নিহত ২০.৮৮ শতাংশ, আহত ৪০.৯১ শতাংশ কমেছিল। এই কারণে অন্তর্বর্তী সরকার নানা মহলের প্রশংসা কুড়িয়েছে। এবারের ঈদের লম্বা ছুটি বিন্যাস করে ঈদের আগে ৩ ও ৪ জুন ২ দিন ছুটি নিশ্চিত করা গেলে সড়ক দুর্ঘটনা, প্রাণহানি, যাতায়াতের ভোগান্তি কমানো সম্ভব হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির ১১টি সুপারিশ করেছে- সেগুলো হলো- ১. ঈদের পরের ছুটি কমিয়ে ঈদের আগে ৩ ও ৪ জুন ২ দিনের ছুটি বাড়ানো। ২. ঈদযাত্রায় ফিটনেস বিহীন লক্কড়-ঝক্কড় বাস ও লঞ্চ চলাচল বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। ৩. পরিবহণ সংকটকে পুঁজি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। ৪. জাতীয় মহাসড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা, সিএনজি চালিত অটোরিকশা, নসিমন-করিমন চলাচল কঠোরভাবে বন্ধ করা। ৫. কালবৈশাখী মৌসুম হওয়ায় নৌপথে ফিটনেস বিহীন লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধ করা। ৬. সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধ করা। ৭. জাতীয় মহাসড়কের টোল পয়েন্টগুলোতে যানজট বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া। ৮. সড়কে চলাচলকারী পশুবাহী ট্রাক থামিয়ে যানজট তৈরি ও সড়কের পাশে পশুরহাট থেকে সৃষ্ট যানজট বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ। ৯. ঈদের আগে প্রতিটি জাতীয় মহাসড়ক সড়ক নিরাপত্তা অডিট নিশ্চিত করা। ১০. সড়ক, রেল ও নৌপথে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে পুলিশ ও অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সক্রিয় রাখা। ১১. সড়কে ডাকাতি, পথে পথে ছিনতাই বন্ধে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো জরুরি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন- বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির প্রান্তিক জনশক্তি উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক অপর্ণা রায় দাশ, সংগঠনের অর্থ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান রাসেল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যক্ষ রফিকা আফরোজ প্রমুখ।