Image description
 

জুলাই-আগস্ট ২০২৪, ঢাকার রাজপথে রক্তাক্ত ছাত্রজনতার আন্দোলন। পোস্টারে আঁকা উই ওয়ান্ট জাস্টিস। কিন্ত জবাবে এসেছিল গর্জে উঠা বন্দুকের নল। আর তার মুখ থেকে বেড়িয়ে আসে ৭.৬২ ক্যালিবারের আগুন। 

একটি গোপন সরকারি প্রতিবেদনে বেড়িয়ে এসেছে এমনই এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। সরকারি নথি বলছে মাত্র ৩টি স্থানে ৭জন ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশেই ছোড়া হয় ১২৪০ রাউন্ড প্রাণঘাতী গুলি। 

এই গুলির অধিকাংশই এসেছিল বিজিবি ও আনসার সদস্যদের অস্ত্র থেকে। আর এক্ষেত্রে ব্যবহার হয়েছে চায়না রাইফেল ও এসএমজি। এই অস্ত্রগুলো মূলত যুদ্ধক্ষেত্রের জন্য তৈরি করা হয়ে থাকে। 

 

১৮ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট, এই সময়ে রামপুরা, আফতাবনগর, যাত্রাবাড়ী এসব এলাকা হয়ে উঠে মৃত্যকূপ। শুধু রামপুরা স্পটেই এইসব মারণাস্ত্রের আঘাতে মারা যান শতাধিক মানুষ। সেদিন ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এক ম্যাজিস্ট্রেটের সরাসরি নির্দেশে আনসারের একজন সহকারী পরিচালক এসএমজি দিয়ে একাই ছুড়েন ৫৪ রাউন্ড গুলি।

 

১৯ জুলাই সকাল থেকে রাত ছিল এক ভয়ঙ্কর দিন। এক সিনিয়র সহকারী কমিশনারের নির্দেশে ছাত্রদের লক্ষ্য করে চলে ম্যাসাকার। বিজিবির সুবেদার, হাবিলদার, ল্যান্সনায়েক একসঙ্গে হাজার হাজার প্রাণঘাতী গুলি ছুড়েন। সরকারি রিপোর্ট বলছে, এগুলো ছিল এ ওয়ান ফায়ার। মানে টার্গেট করে হত্যা।

সেই জুলাই-আগস্টে আহত হওয়া বিপ্লবীরা, এদের মধ্যে কেউ কেই আজও হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন। কেউ হারিয়েছেন হাত, কেউ হারিয়েছেন পা, আর কেউ ফিরে আসেননি কখনোই। কিন্ত তাদের হত্যার সাথে জড়িত সেইসব ম্যাজিস্ট্রেট এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। বিপ্লবের এক বছর হতে চললেও এখনো এইসব অপরাধী আসেনি বিচারের আওতায়। 

সরকারি ওই প্রতিবেদনটির সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য হলো, এই ভয়ঙ্কর অস্ত্র ব্যবহার হয়েছিল সরকারি আদেশে। ১৪ জুলাই সরাসরি স্বৈরাচার হাসিনার নির্দেশে ম্যাজিস্ট্রেট সুপারভাইজড বাহিনী। এমনকি সে সময় ধানমন্ডি সার্কেলের একজন ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে ছাত্রদের উপর চলে শতশত রাউন্ড গুলি। ওইসব ম্যাজিস্ট্রেট যাদের নাম সেই গোপন নথিতে আছে তারা এখন কোথায়? কেউ জবাব দেয়নি, কেউ ধরা দেয়নি। শুধু গুলি আর মৃত্যু রেখে গেছে কাগজে আর কফিনে। 

এই বাংলাদেশ সত্যিই কার? জনতার নাকি বন্দুকের ট্রিগার টিপে যাদের চোখে শান্তি নামে তাদের!